শিপু ফরাজী চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে: জলবায়ু পরিবর্তন ওলট-পালট করে দিচ্ছে উপক‚লের জেলেদের জীবন। ক্রমাগত পরিবর্তন সরাসরি তাদের জীবিকায় প্রভাব ফেলছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তান্ডব, জোয়ারের তীব্রতা, নদী-ভাঙন, নদীতে মাছ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বহু জেলে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এই পেশা জেলেদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। বিকল্প জীবিকা কিংবা এদের নিরাপত্তায় বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই।
চরফ্যাশন উপকূলীয় এলাকায় নদী ও সাগর মোহনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সংকটের এমন চিত্র উঠে আসে। জেলেরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাছধরার ওপর নির্ভরশীল এই পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান বদল করছে। কখনো নদীর ভাঙনে, আবার কখনো ঘূর্ণিঝড়ের তাÐবে এদেরকে বাড়িছাড়া হতে হয়। নদীর তীরে বসবাসকারী অধিকাংশ জেলে পরিবার বছরে একাধিকবার বসতি বদলাতে বাধ্য হয়। বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান কোষ্ট ট্রাষ্টের গবেষণা তথ্যে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ এবং নদীতে মাছের অপ্রত‚লতার কারণে জেলেরা উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়ে। অনেক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে জাল-নৌকা সবই হারিয়ে ফেলে তারা। অথচ অনেকে এই জাল-নৌকা সংগ্রহ করেছেন ধারদেনা করা টাকায়। ফলে এদের ঋণের বোঝাও বাড়ছে।
চরফ্যাশনের ঢালচর ঘাটের জেলে ইউসুফ আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জীবিকার ধরণ বদলে গেছে। ঝড়-বন্যায় এখন আর নদীতে বেশি সময় মাছ ধরা যায় না। ঝড়ের সিগন্যাল পেলে মাছধরা ফেলে কিনারে চলে আসতে হয়। আবার কখনো কখনো নিম্ন চাপের সংকেত রয়েছে বলে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে যাওয়া সম্ভব হয় না। একই এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী জানালেন, ঝড়-জলোচ্ছাসে নদীর পাড়ে বাসবাসকারী এই জেলের জীবন ওলট-পালট করে দেয়, বাড়িঘরে পানি ওঠে। প্রবল বাতাসে ঘর উড়িয়ে নেয়। তখন মাছধরা তো দূরের কথা, ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছুটতে হয়। নদীতে মাছও কমে গেছে। জেলেরা জানায়, নদীতে কোন মাছ নেই সামনে কোরবান। এখন আমরা কিভাবে চলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না ।
ঢালচর, কুকরি, চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মেঘনার তীরে ঝড়-ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ জনপদে শত শত জেলের বসবাস। মেঘনা নদী আর সমুদ্রে জাল ফেলা, জালে ওঠা মাছ বাজারে বিক্রি করা,বছরের পর বছর তারা এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে নদীতে মাছ শুন্য সহ নানামূখী দুর্যোগে তাদেও স্বাভাবিক জীবিকায় সংকট দেখা দিয়েছে। চরফ্যাশন মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজ ঘাটে। মেঘনা থেকে ছোট্ট খাল ঢুকেছে ঘাটের কিনার ঘেঁসে। পড়ন্ত বিকেলে মাছধরা নৌকাগুলো খালের ভেতরে অলস পড়ে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রবল জোয়ার ও জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে বলে জানান এই এলাকার জেলেরা। ঢালচরের মেঘনা তীর ধরে তাদের লন্ডভন্ড বসতি দেখেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। বারবার মেঘনা থেকে উপচে পড়া জোয়ারের পানি জেলে বসতির জীবনধারা বদলে দিচ্ছে। জেলেরা জানান, জোয়ারের পানির প্রবল চাপে ভাঙণের তীব্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।