চরফ্যাশন প্রতিনিধি: পর্যটন দ্বীপ কন্যা কুকরি মুকরি নতুন রূপে সেজেছে। চর কুকরি মুকরির যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। গত ৪ মাস করোনা কালীন সময় এর সুন্দর্য আরো বেড়ে গেছে। দ্বীপের যে দিকেই তাকাবেন, সেই দিক থেকেই দৃষ্টিকে সম্মোহন করে হাতছানি দিতে থাকবে টুকরো টুকরো নিবিড় বনভূমি। একদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ, বৈরী বাতাস, চিরসবুজ গাছ-গাছালি, মন ভুলানো সমুদ্র সৈকত, মায়াবী হরিণের দল আর অসংখ্য নাম না জানা পাখ-পাখালি বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল কুকরি মুকরিকে ভ্রমণ বিলাসীদের তীর্থ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এখন। দ্বীপের পর্যটন সুবিধার পাশাপাশি বনের পরিবেশ রক্ষার দিকে নজরদারী বাড়ানোর কথা বলেছেন স্থানীয় বন বিভাগ।
কুকরি মুকরি উপকূলীয় জেলা ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদ চরফ্যাশন উপজেলার একটি ইউনিয়ন। জেলা শহর থেকে কুকরি মুকরির দূরত্ব ১২০ কিঃ মিঃ। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনা ও শাহাবাজপুর চ্যানেল। দক্ষিণান্তে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনার মিলনাস্থল। চরফ্যাশনের এই অনিন্দন সুন্দর ম্যাগগ্রোভ বনাঞ্চলে করোনা ভাইরাসের পর থেকে এই দীর্ঘদিন পর্যটকরা আশা বন্ধ ছিল। ফলে বনে বেড়েছে সবুজের সমারোহ সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনে কেওড়া, বাইঙ্গি, গোলপাতা, সুদর্শণ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, খুলসী, দিশারী, আমলকি সহ নানান বৈচিত্রময় উদ্ভিদ । আর এই এই করোনা কালীন সময় উদ্ভিদ তাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে ।
গত ৪ মাস করোনা ভাইরাসের কারনে এই পর্যটন দ্বীপে পর্যটক যাতায়ত না করায় বনের উদ্ভিদের পাশাপাশি বেড়েছে হরিণ, বানর, বনবিড়াল, ভুবনচিল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোরগ, কাঠময়ূর, জুলফি পানচিল, গাঙচিল, সোনা জিরিয়া, মথুরা ,কোয়েল , ধূসরবগা, ময়না , টিয়া, খয়রা চখাচখি, কাঠ ঠোকরা, মত বিরল প্রজাতীর পশু পাখি। এখানে অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি লোকালয়ে চলে আসে হরিণের পাল।
বরিশাল থেকে ঘুরতে আসা মৌলভী আঃ কাদের জানায় এখানে ঘুরতে আসলে যে কোন ব্যক্তির মন ভালো হয়ে যাবে। এই দ্বীপে কাজ করে এমন বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থার কর্মী আঃ রহমান বলেন পর্যটন দ্বীপ কুকরি মুকরি একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র, এখানে নদীর দু দিকে বন মাঝখানে সরু খাল। এ খাল দিয়ে আপনি যে কোন সময় অনায়াসে স্পীড বোট ,বনের খালে রাখা রঙ্গিন নৌকায় চেপে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ দর্শন করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেণ। স্থানীয় বন বিভাগ কর্মীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন পর্যটকদের আনা গোনা কম ছিল। আর সেই ফাঁকে যেমনই সুন্দর ভাবে বেড়েছে বনের গাছ পালা তেমনি বেড়েছে বনের পশুপাখি। বনের জীব বৈচিত্র্যের ইতিবাচক দিকটি ধরে রাখতে চায় বন বিভাগ।
জেলা বন কর্মকতা তৌফিকুল ইসলাম বলেন এখানে এখন আগের মত অনেক বেশি বিভিন্ন জাতের পশু পাখি দেখা যায় যা কখনো আগে দেখা যায় নি। বনে অবশ্য এই পশু পাখিরা আগেও ছিল কিন্তু মানুষের আনাগোনার কারনে তা সচরাচর বনের ভেতর থেকে বেড়িয়ে লোকালয়ে আসত না। করোন ভাইরাসের গত ৪ মাস এই দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় এই সকল বিরল প্রজাতীর বণ্য প্রাণীরা বন থেকে এখন লোকালয়ে বের হয়ে আসছে। আর মানুষ তাদের সৌন্দর্য অনায়াসে উপভোগ করতে পারছে। আমরা মুলত চাচ্ছি এই দ্বীপে মানুষ ও প্রাকৃতিক পশু পাখিরা সহ-অবস্থান ঘটুক। গত ৪ মাস দ্বীপে পর্যটন আনা গোনা কম থাকায় কুকরি নাড়িকেল বাড়িয়া ও বালুর দমের মত মনোমুগ্ধকর পর্যটন ষ্পট গুলো এখন অপরূপ রূপ ধারন করছে।