শিপু ফরাজী, চরফ্যাশন থেকে: চরফ্যাসনে তেঁতুলিয়ার অব্যাহত ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ। ভাঙনে গৃহহারা চরফ্যাসন উপজেলার দুলারহাট থানার নীলকমল ও মুজিবনগর ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার। ইতোমধ্যে বসতভিটা, ২ হাজার একর ফসলি জমিসহ দুটি ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়ন দুটির ৯টি ওয়ার্ড নদীতে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি আরও দুই সহ¯্রাধিক পরিবার নিঃস্ব ও গৃহহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চরফ্যাসনে জেগে ওঠা নতুন নতুন চরে ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলোকে বসতি গড়তে দেওয়ার দাবি উঠেছে।উপজেলার সর্ব পশ্চিমে দুলারহাট থানা এলাকায় প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। দুলারহাট থানার অন্তর্গত নীলকমল ইউনিয়ন তেঁতুলিয়ার পূর্ব পাশে ও নবগঠিত মুজিবনগর ইউনিয়ন পশ্চিম পাশে গড়ে উঠেছে। গত দুই বছরে তেঁতুলিয়ার অব্যাহত ভাঙনে চরফ্যাসনের মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ৭০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দুটি ইউনিয়ন।
সরেজমিন দেখা গেছে, তেঁতুলিয়ার ভাঙনে মুজিবনগর ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড, নীলকমল ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড, দুটি আবাসন প্রকল্প, ২ হাজার একর ফসলি জমিসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ৪০০ পরিবার। বাঁধের ঢাল ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ভিটেবাড়িহারা পরিবারগুলো। কেউ আবার কোথাও আশ্রয় না পেয়ে নদীর পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে।নীলকমল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ৮০ বছরের জয়নাল আবেদিন জানান, ২ একর জমি বন্দোবস্ত সূত্রে মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে তিনি বসতি গড়েন এ ইউনিয়নে। গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়ার ভাঙনে ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বসতি গড়েছেন বেড়িবাঁধের ঢালে। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা পরিবার।বৃদ্ধ ওয়াব আলী জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোলার মধুপুর গ্রামে বসবাস করতেন তিনি। সেখানে মেঘনার তাÐবে সব হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। ৫০ বছর আগে চরফ্যাসন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়নে দেড় একর জমি কিনে বসতঘর তুলে অন্যের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙনে ফের বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি। শেষ বয়সে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটছে অনাহারে। আবাদি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব।
মুজিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ মিয়া জানান, দুই বছর ধরে নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে আগামী তিন বছরে পুরো মুজিবনগর ইউনিয়ন ও নীলকমল ইউনিয়ন চরফ্যাসনের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ এবং খাসজমিতে গৃহহীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি।পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহামুদ জানান, ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।