সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। এদিকে থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় ধর্ষণের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বখাটেরা বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয় বলে ভুক্তভোগী নারী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে এ মামলার আসামীরা যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইতোমধ্যে নারীর ভিডিও এর পাশাপাশি অভিযুক্তদের সাথে স্থানীয় সাংসদ ও অন্যান্য নেতার ঘনিষ্ঠ ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। এদিকে সাংসদ ও অন্যান্য নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি পোস্ট করা দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ারের আইডি( https://www.facebook.com/rd.dalwar) অবশেষে ডিএক্টিভেট দেখা যাচ্ছে।
এদিকে দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারের ওই নারী অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে মোবাইলে। গত এক মাস ধরে তারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিল। তিনি এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে বাদলসহ আসামিরা। গত এক মাস ধরে আসামিরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন। তিনি কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা রোববার ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়।
মামলার প্রধান আসামি বাদলসহ এ মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের নাম এ মামলার এজাহারে না থাকলেও তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বেগমগঞ্জের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের এক সদস্য জানান, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে আছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তার স্বামী তার কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তার স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তারা বিষয়টি জানতে পারেন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। নির্যাতনের শিকার নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে ওই নারী মামলা করেন।
পুলিশ এ ঘটনায় নয় জনকে চিহ্নিত করেছে। নির্যাতনে জড়িতরা হলেন- বাদল, দেলোয়ার, আবদুর রহিম, রহমতউল্লাহ, আবুল কালাম, ইসরাফিল, সাজু, সামশুদ্দিন সুমন, আবদুর রব চৌধুরী ওরফে লম্বা চৌধুরী। এদের মধ্যে দেলোয়ার ও বাদল র্যা বের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। আর আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাকে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।
প্রসঙ্গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এর পর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেটি ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকেন। তিনি প্রাণপণ নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেননি। বরং হামলাকারীরা তার মুখে ও শরীরে লাথি মারেন। এর পর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ঘটনাটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আরেকজন উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেইসবুক’ ‘ফেইসবুক’ বলে চিৎকার করে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকবাসী জানান- এই আসামীরা সবাই যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। স্থানীয় সাংসদসহ প্রভাবশালীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় এদের বিষয়ে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পেত না।