সোজা কথা প্রতিবেদক: খুলনায় পাটশিল্প রক্ষায় চলমান আন্দোলন কর্মসূচীর উপর পুলিশী নির্যাতন ও গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা জানিয়ে গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি ও পাটকল বন্ধের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ। মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবী জানায়।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার ১৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে পাটকল শ্রমিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকানাধীন ২৬টি পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন কালে পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর বিনা উস্কানীতে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এতে নারী-শিশুসহ আন্দোলন কর্মীদের অনেকে আহত হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ইষ্টার্ণ জুট কলোনীতে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে প্রাণ-প্রকৃতি মঞ্চের সদস্য ও পাটশিল্প রক্ষা সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সভাপতি এডভোকেট কুদরত ই খুদা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতা ও শ্রমিকনেতাসহ ১৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
তারই প্রতিবাদে আহুত মঙ্গলবার ২০ অক্টোবর ২০২০ বিকাল ৫টায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুমে এই সাংবাদিক সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া। সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনা করেন জনাব কুদরত ই খুদা যিনি গতকাল খুলনায় নিপীড়নের শিকার হন ও মধ্যরাতে থানা থেকে মুক্তি পান। তিনি পাটশিল্প রক্ষা আন্দোলনের প্রেক্ষিত এবং গতকাল খুলনায় ঘটে যাওয়া পুলিশী সহিংসতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন– সরকারকে জুটমিল বন্ধের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে নতুবা পাটশিল্প রক্ষায় আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠবে। সেটা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব সাঈদ ফেরদৌস বলেন– আজকে আমরা এমন এক বাস্তবতায় সে দাড়িয়েছি, যেখানে যে কোন ন্যায্য দাবীতে মানুষকে রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে এবং যারা আন্দোলনকরছেন তারা পুলিশী নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।করোনাকালে কারখানা বন্ধ করে রাষ্ট্র চরম অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে গতকাল খুলনায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকেচরম মানবাধিকারের লঙঘণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গবেষক ড. মাহা মির্জা বলেন– করোনাকালের এই সময়ে পাটশিল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত অমানবিক। এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার শ্রমিক ও কারখানার উপর নিভিৃরশীল ব্যবসায়ী ও অন্যান্য শ্রেণী পেশার মানুষকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই বাস্তবতায় তাদের আন্দোলন করে দাবী আদায় করা ছাড়া আর বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই।
সোজা কথা ডটকম সম্পাদক(অ:) মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট শাহ আলম ফারুক বলেন– মানুষের অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। বেসরকারীকরণের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পকেট ভারী করার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে পাটকল রক্ষার আন্দোলনে পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করেন ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চকে এ বিষয়ে ভূমিকা নেয়ায় সাধুবাদ জানান।
রাজশাহী থেকে মানবাধিকার কর্মী রাশেদ রিপন বলেন– রাজশাহীর পাটকলের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, ইতোপূর্বে অবসর নেয়া শ্রমিকরা এখনও তাদের বকেয়া পাননি।
প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব মঞ্জুরুল কিবরিয়া– পাটিশিল্প রক্ষা আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি পাটশিল্প রক্ষায় জোর দেন।
জনাব গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন– সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করারলক্ষ্যেই গতকালের আক্রমণ যাতে আন্দোলন দানা বেধে উঠতে না পারে। গতকালও শ্রমমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন– পাটকল সরকারও বন্ধ করতে চায় না কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্যক্তিমালিকানার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা একটা লুটপাটের প্রকিয়া, এই প্রক্রিয়া থামানো দরকার। তারজন্য কথা বলা ও আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য মানবাধিকার কর্মীরা বলেন– পাটশিল্প রক্ষায় বিনিয়োগ ও ভর্তূকী বাড়ানোর পাশাপাশি এই পাটশিল্প বিকাশে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। পাটশিল্প বন্ধের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য জনাব সামসুল হুদা বলেন– পাটের একটিগৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে এবং পাটের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।পাট নিয়ে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে আরও গবেষণা হওয়া দরকার যাতে বিশ্ববাজারে পরিবেশ বান্ধব শিল্প হিসাবে বিশেষ জায়গা করে নিতে পারে। ফলে এই শিল্প রক্ষায় যারা আন্দোলন করছেন তাদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব একই সাথে এই আন্দোলনের প্রতি তিনি তার সংহতি জানান।
এছাড়া সকল বক্তা গতকাল খুলনায় গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাএবং পাটশিল্প নিয়ে সঠিক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা ও তা বাস্তবায়নের দাবী জানান।
পুরো সংবাদ সম্মেলনটি দেখার জন্য আগ্রহীরা এই লিংকে ক্লিক করতে পারেন।