বিশেষ প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম থেকে
চট্রগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারের অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনার জন্য প্রধানত: একটি বিশেষ মহল দায়ী বলে আঙ্গুল তুলেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা।
উল্লেখ্য গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) নগরীর কাজির দেউড়ী ভিআইপি টাওয়ার এর সামনে থেকে অপহৃত হয়ে গত রবিবার (১ নভেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা বাজারস্থ খালের পাশে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় পাওয়া যায় সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে। তাকে উদ্ধার করার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।। গোলাম সরোয়ার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটিনিউজ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সহকর্মী সোজা কথা ডটকমকে জানান সম্প্রতি তিনি তার অনলাইন পোর্টালে দুটি ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এগুলোর জের ধরে তাকে অপহরণ করা হতে পারে বলে তারা মনে করেন । এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল— ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গায় ভূমিমন্ত্রীর ভাইয়ের কুদৃষ্টি।’ ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই আনিসুজ্জামান। নগরীর সার্সন রোডের জেএস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চলমান একটি ফ্ল্যাট প্রকল্পের জায়গা নিজের বাউন্ডারি ওয়াল যুক্ত করে দখলের চেষ্টা করছে। প্রকল্পের জায়গায় কাজ করতে গেলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে এই ব্যবসায়ীকে।’ ঘটনাচক্রে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের বাসাও এই এলাকাতেই। তিনি সেখান থেকে বের হওয়ার পর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গত ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত তার অন্য একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল— ‘চট্টগ্রামে অভিজাতে ফের আলোচনা ক্যাসিনো’। এই রিপোর্টে শিল্পপতি ও রাজনৈতিক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশীকেন্দ্রিক একটি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তোলা হয়। ঘটনাচক্রে এই রিপোর্ট প্রকাশের পরদিনই তিনি নিখোঁজ হন।
গোলাম সরওয়ারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার অপহরণের পর সাংবাদিকদের জানান, বুধবার রাত ১১টার তার সাথে সর্বশেষ কথা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে গোলাম সরওয়ার পটিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। পটিয়ায় ব্যক্তিগত কাজ সেরে তার শ্বশুরবাড়ি কমলমুন্সির হাটের মাঝিপাড়া যাবে বলে স্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সকাল ১১টার দিকে ফোন করে তার মুঠোফোন বন্ধ পান এবং বিকেলেও বন্ধ পেয়ে তিনি সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকীকে বিষয়টি জানান।
সিইউজে কার্যালয়ে যা বললেন নির্যাতিত সাংবাদিক
বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
গোলাম সরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওরা আমাকে দফায় দফায় পিটিয়েছে। অনলাইন পোর্টালে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কয়েকটি নিউজ করেছিলাম। এরপর আমার মোবাইলে বেশ কয়েকবার অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন এসেছিল। এসব ফোনকল চেক করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ওরা ইচ্ছেমতো পিটিয়ে বলেছে-আর নিউজ করবি কি-না বল? আমি ওদের বারবার বলেছি, নিউজ করবো না, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন। আমার মাও নাই বাবাও নাই। আমার স্ত্রী ও ২টা ছেলে মেয়ে আছে। আমাকে ছেড়ে দিন। তারপরও পিটিয়েছে। চোখে হাত দিতে দেয়নি। ওরা বলাবলি করছিল, এটাকে স্যাম্পল হিসেবে নিয়েছি। মেরে ফেলার দরকার নাই। সাইজ করো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাম সরোয়ার বলেন, আমি এখনও মানসিকভাবে অসুস্থ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমি। আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল নই। আমি বিচার চাই। ওরা আমাকে মেরেছে নিউজের কারণেই। তবে কোন নিউজের কারণে মেরেছে, সেটা নিশ্চিত নই।
টিআইবি’র উদ্বেগ
এদিকে গোলাম সরওয়ারকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ট্রান্সপ্যারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বাক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার চলমান প্রক্রিয়ারই একটি উদাহরণ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।