শিপু ফরাজী
প্রায় ৪শ বছর আগে পলি জমতে জমতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জেগে ওঠে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ছোটদ্বীপ চরকুকরি মুকরি । বর্তমানে বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিম পাড়া, চর পাতিলা ও শরীফ পাড়া নিয়ে কুকরী-মুকরীচর ইউনিয়ন । জেলা সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ১২০ কি: মি: । দুরের এই দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষেরর বসবাস । এদের বেশীর ভাগ মানুষের নেই অক্ষর জ্ঞান। শিক্ষার আলো বঞ্চিত আর গণমাধ্যমের বার্তা না পাওয়া এখানকার মানুষজন, কিছুই জানে না করোনা মহামারি সম্পর্কে।
চরের বাসিন্দা আলী হোসেন বেপারি বলেন, আমাদের কুকরির চরে আল্লাহর রহমতে করোনা কাহারো হয়নি আজ পর্যন্ত । চরের আরেক বাসিন্ধা হাজেরা বেগম জানান, ভাইরাস কি? করোনা কি? তা এখনো আমরা এই চরে দেখিনায় । কেমনে দেখুম আমাদের ঘরে তো টিভি রেডিও নাই । তাই এটা কি আমরা জানিনা । যেখান কার মানুষকে সামান্য চিকিৎসার জন্যই নদীপথে পাঁচ কিলোমিটার,এরপর আরো প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তবেই যেতে হয় চরফ্যাশন উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখানে করোনা অনেকটাই কাল্পনিক গল্পের মতো।
কুকরি চরের আরেক বাসিন্ধা রফিক মাঝি বলেন, আমরা কানে শুনেছি এই রোগে মানুষ মারা যায় কিন্তু আজপর্যন্ত চোখে দেখি নাই । তাই মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই দ্বীপের ছোট্ট বাজারের আড্ডায় । করোনা দূরে থাক, সামান্য অসুখ-বিসুখেও কপালে জোটে না এই দ্বীপের মানুষের সুচিকিৎসা। কেন না স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই ভুগছে নানা রোগে।
এলাকার চেয়ারম্যান বলছেন, এখানে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে । যা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সেখানে নেই কোন ডাক্তার। এই দ্বীপের স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালায় ৩য় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারিরা। আগে সপ্তাহে একদিন করে খোলা হতো এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু এখন আর এটা খোলা হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বলতে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেবা বলে কিছু নেই ।এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন ভঙ্গুর দশায় করোনার বিধিনিষেধ যেন তাদের কাছে বিলাসিতা। চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন আরো বলছেন, দ্বীপে করোনা পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই । তাই এই দ্বীপাঞ্চলে নেই কোন করোনা। সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের প্রার্থনা, করোনার থাবা থেকে দূরে থাক, জীবন আঁধারে নিমজ্জিত দূর দ্বীপবাসীদের জীবন। এই অবস্থায় তারা বিশেষত: স্বাস্হ্য কেন্দ্রটি নিয়মিত খোলা রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।