ড. হুমায়ুন আজাদের সবটায় কিংবা সবকিছু হয়তো আমি ডিফেন্ড করবো না, কিন্তু যে সাহস নিয়ে তিনি এই নষ্ট দেশে সত্যোচ্চারণ করেছেন, সলিমুল্লাহ খান কেনো, অদ্যপি কোনো বাঙালি চিন্তক তা করেনি, ও-রকম সাহস ও যোগ্যতা ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধ যে আদর্শ থেকে সরে গেছে, সরে যাচ্ছে, এই সত্য সাহিত্য জগতে অধ্যাপক আজাদই শক্তিমত্তার সঙ্গে প্রথম শনাক্ত করেছেন, শিক্ষিত বাঙালিকে জানিয়ে দিয়ে গেছেন, সম্ভবত তার জীবন দিয়ে। এজন্য আসলে কে মরণাঘাাত করেছে সেটাও এ জাতি স্পষ্ট করেনি। এবং আজাদের বই না পড়ে শক্র-মিত্র কারো উপায় ছিলো না। কিন্তু কজন জানে, এমন কি ভক্তরাও কি জানে- সলিমুল্লার খানের ৩ খান বইয়ের নাম কি?, কি বিষয়ে লেখা? কি বিষয়ে তিনি লেখেন? কে জ্যাঁক লাকা, কে ডরোথি জিল্লি- এই আর্কেইক সমাজে, এ দেশের চিন্তা ও সংগ্রামের বিকাশে কতোটা প্রাসঙ্গিক তথাকথিত উত্তরাধুনিকতার চিন্তাবিলাস? ১২ বছর ধরে গবেষণা করে বিদেশে জ্ঞানের যে সবোচ্চ ডিগ্রী তিনি নিয়েছেন সে বিষয়ে তিনিই কিছুই বলেন না, আশ্চর্য নয়?
আমার মতো অনেকের ধারণা, সলিমুল্লাহ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন যতটা উজ্জলতার পরিচয় দিয়েছে, পরে সেই ধারা রক্ষা করেননি। খান চিন্তার বেশ বাকবদল করেছেন, এবং আমার, আমাদের তা নজর আছে। ভালোমন্দ মিলিয়ে খান সর্ম্পকে আমার লম্বা ইন্টারভিয়্যু ও নিয়েছে খানের ভক্তরা, কিন্তু ছাপেনি। খানও বন্ধুর চেয়ে ভক্তের কথায় বেশি মুগ্ধ হন এবং সেভাবেই চলেন। আমরা সেভাবে চলতে দিই। তবে আশার কথা, সুলিমুল্লাহ খানের ওস্তাদ ফরহাদ মজহার বরবাদ হয়ে গেলেন, আক্বেলগুণে সলিমুল্লাহ খান মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন। বেঁচে থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্রে জরুরি হলো সেটা কতোটা জীবনের সঙ্গে জড়িত। আমরা যারা মাঠে ময়দানে নারকীয় বাস্তবতা সঙ্গে নিয়ত লড়ছি, হাজার তরুণ লড়ছে, প্রাণ দিচ্ছে মধ্যযুগীয় অন্ধ আক্রমণে তাদের কাছে, কোনো একজন ততটাই গ্রহনযোগ্য যতটা যিনি যুগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সতোচ্চারণ করার ঝুঁকি বিনিযোগ করবেন। অনগ্রসর সমাজে চিন্তক মাপার অন্য কোনো মাপকাঠি থাকা উচিৎ নয়।
ড. শেখ বাতেন: মুক্তিযােদ্ধা, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক