একদিন সূর্য আর পর্বতের গুহার মাঝে কথা হচ্ছিলো। সূর্যের খুব বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো ‘অন্ধকার’ ব্যাপারটা কী! আর গুহার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো “আলো ও স্পষ্টতা” বিষয়টা আসলে কী। তাই তারা একে অন্যের জায়গায় গিয়ে ব্যাপারটা বোঝার সিদ্ধান্ত নেয়।
গুহা প্রথমে সূর্যের কাছে উঠে যায়; চারপাশে তাকিয়ে বলে, আহা কী অপার সৌন্দর্য চারপাশে। এবার তুমি গুহায় নেমে দেখো; কী অবস্থার মাঝে আমি বসবাস করি।
সূর্য তখন গুহায় নেমে যায়; চারপাশ দেখে বলে, আমি তো কোন পার্থক্যই দেখছি না।
সূর্য যখন গুহায় নেমে গিয়েছিলো তখন সে তার আলো সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলো; ফলে গুহার গভীরতম অন্ধকারও আলোকিত হয়ে পড়ে। ফলে সূর্য কোন পার্থক্যই খুঁজে পায়না।
প্রচলিত এই উপকথার অর্থ সম্পর্কে বলা হয়; যার মনের মাঝে আলো আছে তাকে কখনো নরক বা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া যায় না। কারণ সে সবসময় তার মনে স্বর্গের আলো বহন করে।
আমরা ভাবতাম স্বর্গ বোধ হয় কোন জায়গা যেখানে যেতে হয়; হয়তো এটা একটা মানসিক অবস্থা যা আমাদের অর্জন করতে হয়।
আমাদের মনের মাঝে যদি অন্ধকার থাকে, নেতিবাচকতা, ভীতি আর সংশয় থাকে; আমরা মনের অজান্তেই গুহাবাসী হয়ে উঠি। এ হচ্ছে মনের মধ্যের নরক; কোন রকম পার্থিব অর্জনই যে ফাঁপা অন্ধকার সরাতে পারে না।
কেউ যদি সূর্যের মতো আলোকিত মনের হয়; তার জন্য অন্ধকার গুহাও কোন সমস্যার নয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থাতেও সে কোথাও না কোথা থেকে আলোর আশীর্বাদ খুঁজে পায়। সে নিজের মনের মধ্যেই স্বর্গকে বহন করে।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক