সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলাদেশের সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, পাবর্ত্য জেলা পরিষদ আইন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন লঙ্ঘন করে ম্রো জাতির স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি ছাড়া তাদের মতামত বিবেচনায় না নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জোর করে এমন বিলাসী স্থাপনা নির্মাণের ফলে ম্রো সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নাগরিক ভিটেমাটি, ফসলি জমির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। শুধু ম্রোদের উপর ই নয় এই ধরণের প্রকল্পের ফলে পাহাড়সহ প্রকৃতিতে যে ধ্বংসলীলা হবে তা দেশের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
৩০ নভেম্বর সোমবার ম্রো ভূমিতে বিনোদন পার্ক: নাগরিকরা কি ভাবছেন??-শীর্ষক সোজা কথা ডটকম-এর ৫৫ তম লাইভে বান্দরবানের চিম্বুক-থানচির ম্রো পাড়ায় সিকদার গ্রুপ কর্তৃক গৃহিত পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ প্রকল্প বাতিল এবং এ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রত্যাহারের আহবান জানানো হয়।
এ পর্বের লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও শিক্ষক ড. শেখ বাতেন, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ইফতেখার আহমেদ বাবু এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ থেকে এক্টিভিস্ট, পাইচিংমং মারমা যোগ দেন। দর্শকদের মধ্য থেকে প্রশ্ন ও মতামত দিয়ে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে রাখেন কাজী তাজিম, আহমেদ আমান মাসুদ, শামা আরজু, মোন আবা, মং মং, জয় মারমা প্রমুখ।
বরাবরের মত সঞ্চালনায় ছিলেন মানবধিকার কর্মী ও আইনজীবী, সোজা কথা ডটকম-এর সম্পাদক (অ:) এডভোকেট শাহ আলম ফারুক।
ড. বাতেন রাস্ট্রকে পাহাড়ীদের জীবন সংগ্রামের বৈচিত্র্য স্বীকার করে নিতে হবে। জাতিসংঘ সনদ, সংবিধান ও আচার নীতি বিবেচনা না করে ম্রো ভূমিতে ফাইভ স্টার হোটেলের পর্যটন কেন্দ্র তাদের জন্য কোন সুবিধা বয়ে আনবে না, বরং সে তার জীবন জীবিকা হারাবে। তিনি বলেন একটা গোষ্ঠী উন্নয়নের নামে পাহাড়কে যথেচ্ছ ব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ গড়ার জন্য পাহাড়কে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ইফতেখার আহমেদ বাবু বলেন, পর্যটন ইকো ট্যুরিজমের নামে যা করা হচ্ছে তা কোন ভাবেই ঐ সব বিনোদন পার্ক প্রকল্পের সাথে যায় না। দুর্বল একটা জনগোষ্ঠীর নিজেদের মত করে জীবনযাপন, তাদের জীবন জীবিকার দিকে খেয়াল না করে যে উন্নয়নের কথা বলে তাদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে, তাতে স্থানীয়রা দু চারজন হয়তো কিছু দিনমজুর ধরণের কায়িক কাজ পাবেন, বাকী পুরো জনগোষ্ঠী নানা ভাবে এর জন্য কঠিন মূল্য দেবেন।
পাইচিংমং মারমা বলেন, পাহাড়ী মানুষ পাহাড়কে ভালবাসে, আত্নিক, জীবিকা, যাপিত জীবন সহ তার পুরো জীবনের সাথে পাহাড় প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্ক। সেখানে উন্নয়নের নামে পাহাড় ও পাহাড়ীদের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ ফেলবে এমন প্রকল্প অতীতেও নেয়া হয়েছে এবং এখনো নেয়া হচ্ছে। এমনকী নিজেদের অধিকারের কথা বললেও তাদের নানা ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন পাহাড়ের মানুষ আজ দলমত নির্বিশেষে পাঁচতারা হোটেলের বিনোদন পার্ক প্রকল্পের বিরোধীতা করছে।
এডভোকেট শাহ আলম ফারুক সকল প্রকার রাজনীতি ও বিবেচনার উর্ধ্বে পাহাড়ী মানুষের জীবন জীবিকা ও মানবাধিকারের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার কথা বলেন। তিনি বলেন পাহাড় ধ্বংসের ক্ষতি অর্থ দিয়ে পুষিয়ে নেয়ার মত ক্ষতি নয়।
বক্তারা এ পর্যন্ত পাহাড়ে কত জমি কাদেরকে দেয়া হয়েছে, তারা কত একরের লীজ নিয়ে কি পরিমাণ দখল করে আছে সে সব বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবার দাবি তোলেন। লাইভে চিম্বুক পাহাড়ের কথিত বিনোদন পার্কের বিষয়ে প্রতিবাদীদের উপর হুমকি নির্যাতন নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
ড. শেখ বাতেন বলেন পাহাড়ে যা করা হচ্ছে তাতে আমরা যেন নিজেদেরই নিজেরা ছোট করছি। তিনি এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক, অধিকার কর্মী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানিয়ে এ সব বিষয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনা জনমত তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ পর্বের অনুষ্ঠানের ফেইসবুক লিংক এবং ইউটিউব লিংক সোজা কথা ডট কম-এর পাঠকদের জন্য দেয়া হলো। উল্লেখ্য, সোজা কথা ডট কম-এর ফেইসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল লাইক করে নতুন পাঠকরা নিয়মিত লাইভ ও বিভিন্ন সংবাদের আপডেট পেতে পারেন।