মুশতাক আহমেদ মারা গিয়েছেন জেল খানায় বন্দী থাকা অবস্থায়। জেলখানায়, পুলিশ হেফাজতে বা যে কোন বাহিনীর জিম্মায় যে কোন মানুষ মারা গেলে তার মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হয় এটাই নিয়ম। তিনি মারা গিয়েছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এটা প্রমাণ করার দায়িত্বও কর্তৃপক্ষের। যদিও জানি এটা নিয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা হলে রিপোর্ট কি আসবে। আমাদের কোর্টে একটা কথা প্রচলিত আছে ” কাকের মাংস কাক খায় না “।
বাংলাদেশ থেকে বহু বছরই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত বিষয় টাও উঠে গিয়েছে। নির্বাসনে গিয়েছে ভোটাধিকার, মানবাধিকার, গনতন্ত্র। অবলুপ্তপ্রায় মানুষের মৌলিক অধিকার। কথা বলার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, লেখালেখির অধিকার। একটা কার্টুন, একটা কলাম, একটা বক্তব্য সহ্য করার মত সৎ সাহস টুকু রাষ্ট্রে আসীন কারো নাই। মানুষ কেবল খেয়ে ঘুমিয়েই শান্তি পায় না। পেটপুরে খেলে হয়তো ক্ষুধা মেটে কিন্তু মানুষের সাথে পশুর তো একটা সামান্য তফাৎ আছে। বুদ্ধিবৃত্তিয় তফাৎ। সেই টুকুও গ্রাস করতে চায় যারা (সেটা যেই হোক) তারা আর যাই হোক মানুষের পর্যায়ে পড়ে না।
মানবাত্মার শান্তির জন্য কি না করা হয়েছে! কি না বলা হয়েছে যুগে যুগে। সেই শান্তি যারা মানুষকে দিতে চান না তারা কতটুকু শান্তি তে থাকেন সন্দেহ আছে। মোশতাক আহমেদ যেহেতু জেল কাষ্টডিতে মৃত্যু বরণ করেছে ( নানা রিপোর্টে দেখলাম এটা এড়িয়ে যাবার জন্য লেখা হয়েছে, হাসপাতালে নেবার পর মারা গিয়েছে) সেই হেতু এই মৃত্যুর অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। তার দেহের ময়নাতদন্ত হতে হবে। নিয়মানুযায়ী সব কিছু করে তবেই সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রমাণ করতে হবে যে “মুশতাক আহমেদ কে খুন করা হয় নি”। আর যদি তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাহলেও তার মৃত্যুর কারণ জানার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের আছে। জেল খানার প্রতিটা হাযতি বা কয়েদির জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। জনগণ এর কাছে এর জবাব দেয়াও জেল কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব কারন জেলখানা চলে জনগণের টাকায়৷ এখানে যা ইচ্ছে তাই চলতে পারে না। পরে তো আরো অনেক কথাই আসে যে, মুশতাক আহমেদরা জামিন পায় না আর অনেকেই বন্দের দিনেও জামিন পায়। অনেকে আইন আদালতে হাজির না হয়েও মাফ পেয়ে যায়। এমন কত কিছু ই যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কেউ কিছু বলতেও পারে না। ভয়ে – আতংকে। আমাদের কে আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলেছে “ভয়ের সংস্কৃতি”!!
- এডভোকেট দিলরুবা শরমিন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী