খুবই উৎকন্ঠিত ছিলাম। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় প্রথম একবার তুলে নিল। ভয় ছিল খুব। আপনিতো সে ভাবে সেলিব্রেটিও না। আমাদের মত কিছু অক্ষম তখনো সম্ভবমত প্রতিবাদ করেছিলাম। এই শরীরে নির্যাতন চলে কিনা উৎকন্ঠিত ছিলাম। ফিরে আসার পর একদিন কথা হলে অনুরোধ করলাম -ভাই লেখালেখি লন্ডন এসে করেন। কোন একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বললেন- এই বয়সে মন চাচ্ছে না।
মুশতাক আহমেদ খুবই হালকা মেজাজে কঠিন করে ম্যাসেজ দিতেন। নিজের এক আইডিতে ব্র্যাকেট দিয়ে ইংরেজিতে নিজের নাম হিসেবে উল্লেখ করেন মাইকেল কুমির ঠাকুর। এই নামে একটা পেজও চালাতেন। উগান্ডা উপমা ফেইসবুকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। গোয়েন্দারাও নাকি উনাকে হেফাজতে থাকার সময় বলেছে আপনি তো ডাইরেক্ট মারেন না উগান্ডা দিয়ে মারেন। এ কথা বলতে বলতে শিশুর মত হাসছিলেন। আমার উৎকন্ঠা বেড়ে গেল। কথায় কথায় যা বললেন তাতে মনে হলো লেখালেখি নিয়ে দেশ নিয়ে তাঁর অনেক পরিকল্পনা ছিল। পথিকৃৎ ছিলেন দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কুমির চাষের ক্ষেত্রে। আলোচনায় সেটাও উঠে এসেছিল। কেমন করে নিজের স্বপ্নের খামার ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। ক্যাডেট কলেজ, চা বাগানের চাকুরি, সম্ভবত ইউএনএফএও‘র জব!
দ্বিতীয় বার যখন ধরে নিয়ে গেল আশাবাদী ছিলাম নিশ্চয়ই জামিন হবে, কত নাটক হলো। খুনের আসামীর জামিন হয়, খুন প্রচেষ্টার আসামীর শুক্রবার জামিন হয়, মৃত্যুদন্ডের আসামীর জামিন হয়, দায়মুক্তি হয়। আপনার আর কিশোরের জামিন হয় না। তারপরও তো সব জামিনের উর্ধ্বেই চলে গেলেন।
মুশতাক ভাই, আজ ‘বোতল …ল‘ বলেছে আপনি নাকি কারো কারো মনে ব্যথা দিয়েছেন লেখালেখির মাধ্যমে। ‘বোতল …ল‘ এর কথা প্রমাণ করে আপনি সার্থকভাবে এশিয়ার উগান্ডার নব্য ইদি আমিনদের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। আপনি সার্থক।
ওরা বয়োবৃদ্ধ বাবা মাকে প্রিয় সন্তানের লাশ উপহার দিয়েছে। ইতিহাস তাদের কখনো ক্ষমা করবে না। অতীতেও করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না।
রাস্ট্র বা চাকর বাকরের উপর না চাপিয়ে আসুন সবাই মুশতাক আহমেদের খুনিদের নাম বলি, ওদের ঘৃণা করি। ওদের বর্জন করি সামাজিক ও মানসিকভাবে।
নিশ্চয়ই মুশতাকদের কখনো মৃত্যু নেই।
বিবেকের জন্য চিন্তার জন্য উৎসর্গকৃত প্রাণের যে কখনো মৃত্যু হয় না!
– শাহ আলম ফারুক, সম্পাদক (অ.), সোজা কথা ডটকম