নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা থেকে
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মো. মাসুদ রানার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী থানায় এজাহার দিলেও তা মামলা হিসেবে রুজু করেনি পুলিশ। মাসুদ রানাসহ রুমেন হক ও খলিলুর রহমান বাবু নামে দুই ব্যবসায়ীকে আসামি করে লিখিত এজাহার দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী হাসান আলীর স্ত্রী বিথী বেগম।
এদিকে পুলিশ বলছে, বাদির অভিযোগ তদন্ত করে মামলা দায়ের করা হবে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম। রোববার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ কথা জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ী হাসান আলীর মৃত্যুর ঘটনাসহ তার পরিবারের দেওয়া অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরো ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বাদির অভিযোগেই মামলা রুজু করা হবে।
এদিকে, ব্যবসায়ী হাসান আলীর লাশ উদ্ধার ও মাসুদ রানা আটকের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে মাসুদ রানাকে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক পদ হতে অব্যাহতি প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী হাসান আলীর মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। ঘটনার বিচার দাবিতে রোববার দুপুরে শহরের ডিভি রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।
নিহত ব্যবসায়ী হাসান আলীর স্বজনদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদের ওপরে নেয় হাসান। টাকা দিতে না পারায় ৫ মার্চ তাকে অপহরণ করে নিজ বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখে মাসুদ। পরে তাকে উদ্ধারে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে থানা পুলিশ উভয়কে নিয়ে থানায় বৈঠক করে। বৈঠকে হাসান আলীর কাছে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের নেয়াসহ আসামি মাসুদ রানার কাছে হাসান আলীকে জিম্মা দেয় পুলিশ। এরপর থেকে নিজ বাড়িতে হাসানকে আটক রেখে নির্যাতন করে মাসুদ রানা। মাসুদের সঙ্গে হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় রুমেন হক খলিলুর রহমান বাবু পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের পরস্পরের নির্যাতন ও আর্থিক চাপেই হাসানের মৃত্যু হয়েছে। সদর থানার (ওসি, তদন্ত) মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে এজাহারে অভিযোগ উল্লেখ থাকায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে হত্যার মামলায় প্রমাণ থাকার পরও তদন্তের পর মামলা নেয়ার ঘোষণায় মানবাধিকার কর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমনিতেই প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ সময়মত পদক্ষেপ নিলে এই হত্যা এড়ানো যেত। এখন পুলিশ মামলা নিয়ে গড়িমসি করছে।
