তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের বিপদের কথা বলেন, অথচ দেশে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ঠিক তার উল্টো কাজ করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২২ এপ্রিল ২০২১ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত দুদিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানেরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় চার দফা সুপারিশ দিয়েছেন। তিনি এসব সুপারিশে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষ ছাড়, সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর ওপর দৃষ্টি দেবার ওপর জোর দিয়েছেন। এর পর গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ওপর জোর দিচ্ছে। আমরা বরাবরই লক্ষ্য করে আসছি যে, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের বিপদের কথা বলেন, দেশে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দেবার কথা বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিলের কথা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দেবার কথা বলেন। আমরা এটাও ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি যে, দেশে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ঠিক তার উল্টো কাজ করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। একথা সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত বাড়ছে। এতে প্রথম আক্রান্ত হচ্ছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এই বিপদ মোকাবিলায় একদিকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ প্রধান অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরি, অন্যদিকে দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা এমনভাবে পুনর্গঠিত করা যাতে নদী আরও সজীব হয় এবং বন আরও বিস্তৃত হয়। প্রয়োজন উপকূল অঞ্চলে বনায়ন সম্প্রসারণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপকূলকে আরও সুরক্ষিত করা। কিন্তু সরকার একগুয়েভাবে, জোরজবরদস্তি করে, সকল বিশেষজ্ঞ মত-জনমত অগ্রাহ্য করে তার উল্টো পথে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সারাদেশের নদী ও বন দুটোই বিপর্যস্ত হচ্ছে। উপকূল জুড়ে মাতারবাড়ী, বাঁশখালী থেকে রামপাল, পায়রা পর্যন্ত একের পর এক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে পুরো বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প করেই সরকার ক্ষান্ত হচ্ছে না, আরও শত শত বন-নদী বিনাশী প্রকল্প করছে সুন্দরবন ঘিরে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দমনে সারাদেশ জুড়ে সক্রিয় আছে পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা।
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের অপতৎপরতা ও বল প্রয়োগ নীতি অবলম্বনের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত বাঁশখালী প্রকল্প। ২০১৬ সাল থেকে অনিয়ম, মিথ্যাচার ও মানুষ খুনের ওপর এই প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই মাসেও ৭ জন খুন এবং বহুজন জখম হয়েছেন। খুনিদের বিচার না করে সরকারি সংস্থা শ্রমিকদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে।
আমরা সরকারের এরকম প্রতারণা, জোরজবরদস্তি, কপটতা ও স্ববিরোধিতার তীব্র নিন্দা জানাই। এবং অবিলম্বে রামপাল-রূপপুর-বাঁশখালী-মাতারবাড়ীসহ প্রাণ-প্রকৃত-নদী-বনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলের দাবি জানাই। একইসঙ্গে বাঁশখালী হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারসহ নিহত আহতদের সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই।”