নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় বৃহস্পতিবারের অগ্নিকান্ডে ৫২ জন শ্রমিক কর্মচারি নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এমএসএফ মনে করে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ৬২ ধারা “অগ্নিকান্ড সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন” না করা, কারখানা পরিচালনা করার অনুপযোগি ইমারতে কারখানা প্রতিষ্ঠা করা ও কল কারখানা চালু রাখার ন্যূনতম নির্দেশনা না মানা এ দূর্ঘটনার কারণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারনে শ্রমিক-কর্মচারিদের বার বার জীবন দিতে হচ্ছে যা হত্যাকান্ডের সামিল। কোভিড অতিমারির সময়ে যখন প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য ঘরের বাইরে আসার উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় কারখানা মালিকদের তাদের ব্যবসা চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারখানা শ্রমিকেরা যখন সংক্রমনের ঝুঁকি নিয়েও কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন, মালিকেরা তাদের শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
এমএসএফ মনে করে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে আইনের শাসন আর জবাবদিহির অভাব ও বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মানুষ এ ধরণের বেপরোয়া আচরণ করার সাহস পাচ্ছে। কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। জরুরি বহির্গমনের জন্য বিল্ডিংকোড অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক সিঁড়ি ছিল না। কারখানাটি মালামালে ভর্তি ছিল তদুপরি গেটও বন্ধ ছিল। এসব কারণে আগুন লাগার পর শ্রমিকেরা দ্রুত কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। স্পষ্টতই কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এইমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপর সরকারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসেম ফুডসের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করাসহ আসামিদের গ্রেফতারে এমএসএফ সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে এই ভয়ংকর অগ্নিকান্ডের বিচারের প্রক্রিয়া শুধুমাত্র গ্রেফতারে সীমাবদ্ধ না রেখে বিষয়টির সুষ্ঠূ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য দায়ী মালিক–কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে। পাশিপাশি নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকার কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা তরান্বিত করে নিহতও আহতদের পরিবারগুলো যাতে তা সঠিকভাবে পায় তা নিশ্চিত করার জন্য এমএসএফ জোর দাবি জানিয়েছে।
এমএমএফ বলেছে, এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। কিন্তু ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়ার কারণে এবং রাস্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে কারখানা মালিকপক্ষ আইনি নির্দেশনা না মেনে তাদের কলকারখানা পরিচালনা করছেন। যার ফলে প্রতিনিয়তই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে এবং এর খেসারত দিতে হচ্ছে শ্রমিকদেরকে। এমএসএফ, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সে বিষয়ে সরকারের সুদৃঢ় পদক্ষেপের জোর দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।