সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড আসা-যাওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পারাপার ঘাট হলো গুপ্তছড়া-কুমিরা ঘাট। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া যাতায়াত করতে সময় লাগে কম বেশি ২৫ মিনিট। সন্দ্বীপ চ্যানেলের দুই পাড় থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের দিকে ছুটে চলা দৃষ্টনন্দন ব্যবহার অনুপোযুগী জেটি বা ব্রীজের রয়েছে। কুমিরা থেকে একেবারে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছালে সমুদ্রের মাঝখানে ভ্রমণ স্পৃহা জন্মাতে পারে সকলের। তবে গুপ্তছড়া – কুমিরা ঘাট থেকে জন প্রতি ২৫০ টাকা স্পিডবোট ভাড়ায় ২৫ মিনিটেই সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড় হতে সময় লাগে। এই দুর্বিসহ পারাপারে সন্দ্বীপ ভ্রমণের সেই আশা গুড়েবালি হয়ে যায়। কেননা অত্যধিক ভাড়ার বিনিময়ে গুপ্তছড়া কুলের কাঁদা মাটি ও কোমর সমান পানি অহেতুক এক শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচারের নামান্তর মাত্র।
কেস স্টাডি
১. কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে ২০ উর্ধ যুবক পিতৃ ভূমি সন্দ্বীপে বেড়াতে এসেছিলেন। এই প্রথম উনি সন্দ্বীপে আসেন। যাওয়ার পথে সন্দ্বীপের চিরাচরিত খাদ্য সামগ্রীর একটা ছোট খাটো (পিঠা ও দধির) বক্সের ফুল ভাড়া আদায় করেন ইজারাদারের ভাগিনা। কেননা এই বক্স একজনের সিট্ দখল করেছে। তাকে গালমন্দ করা হয়। ওই স্পীড বোর্ডে ঢাকার একজন রাজনৈতিক নেতা যাত্রী ছিলেন যিনি সন্দ্বীপের জনস্বার্থে কাজ করেন। উনি প্রতিবাদ করলে স্পীড বোর্ড না ছাড়ার হুমকি দেন ইজারাদারের ভাগিনা। স্পীড বোর্ডে আরোহীগণ ভয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করেন নাই। যুবক সন্দ্বীপে আর আসবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন।
২. গত বর্ষার শেষ সময়ে ‘সন্দ্বীপ উদ্যোক্তার খোঁজে’ সংগঠনের সদস্যা সন্দ্বীপ গিয়েছিলেন সন্দ্বীপ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংক একাউন্ট করার জন্য। উনাকে পানিতে নামিয়ে দেয়া হয় উনার ১ বছরের শিশু কন্যা সহ। সন্দ্বীপ থেকে যাওয়ার সময় একই অবস্থা হয়েছিল। অতঃপর উনি সন্দ্বীপ থেকে ব্যবসায়িক লাইসেন্স করতে আগ্রহী হন নাই। ফলে শিল্প উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সন্দ্বীপে কর্ম সংস্থান হারালো।
৩. কয়েকদিন হলো ১ টি ক্রেটের জন্য হাফ ভাড়ার স্থলে ফুল ভাড়া চেয়ে বসেন। সামান্য রিকোয়েস্ট করলে তাকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। নদীর পানিতে ক্রেটটি ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। উনি পেশায় ইলেকট্রিকাল ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হন।
এই পারাপারে মহিলারা সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন ও অমানবিক কষ্ট পোহাতে হয়। কত করুণ ও অশ্রু সজল কাহিনী আছে যে, প্রবাসগামী প্রিয়জনদের সি অফ করতে অমর্জাদাশীল আচরণের জন্য পারাপার করতে পারেন না অনেকে। তাছাড়া হিজাব ও নেকাব ছাড়া মহিলাদের বিড়ম্বনা নিয়ে জলে ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের ভয় ও ফিকে মারার গল্প না বলাই বাহুল্য। শিশু মনে এই ধরণের ভয়ভীতি নিশ্চয় তাদের মনোজগতে রেখাপাত করে। এই পথে পারাপার করতে গিয়ে নদীর পানিতে ভিজে জ্বর সর্দিতে ও নিমোনিয়াতে ভোগার অহরহ ঘটনা আছে। বয়োবৃদ্ধ রোগী ও প্রসূতি মায়ের জীবনের ঝুঁকি উনাদের অসুস্থতার চেয়েও নদী পারাপারের ঝুঁকিটা বেশি। মানুষের শেষ ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে ওসিয়ত থাকে, নিজ ভূমি সন্দ্বীপে দাফনের ইচ্ছাটুকুও উবে যায়। সন্দ্বীপের বাইরে বসবাসকারী বিভিন্ন পেশার লোকজন ঈদে চান্দে সন্দ্বীপে আসেন না এইসব মর্যাদাহানি আচরণের জন্য। বিষয়গুলি এমনই লজ্জাকর যে, কেউ শেয়ার করতে রাজি হন না।
গুপ্তছড়া – কুমিরা স্পীটবোটে নদী পথে যাত্রী পারাপার
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সীতাকুন্ড নৌ রুটে থাকা কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটি ৬ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। এই যাত্রী পারাপার ঘাটটি পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে ২ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের ৬ বছরের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতির আদেশ ও গেজেট প্রকাশ
আমাদের রাষ্ট্রপতি গত ৩ রা মার্চ ২০২০ ইং গেজেট আদেশের মাধ্যমে ‘মিরসরাই – রাসমণি নদী বন্দর’ ও তার সীমানা নির্ধারণপূর্বক এক আদেশ জারি করেন গত ১ লা মার্চ ২০২০ ইং। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এর টি এ শাখা এই আদেশনামা তামিলের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনটি একটা এস আর ও (STATUTORY RULES AND ORDERS).
উক্ত প্রজ্ঞাপনে মিরসরাই রাসমনি নদী বন্দরের তফশীল হলো নিম্নরুপঃ
(ক) উত্তর সীমানা:
ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন থাকনোয়াজ খামচি মৌজার মহুরী নদী তীর অতিক্রমকারী অক্ষাংশ –N-22 45 30.00’’
(খ) দক্ষিণ সীমানা:
চট্টগ্রাম জেলার থানাধীন দক্ষিণ কাট্রলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে সন্দ্বীপ চ্যানেল অতিক্রমকারী অক্ষাংশ –N-22 21 07.50’’ এবং
(ঘ) ভূ-ভাগের সীমানা:
বন্দর সীমানার আওতায় তীরে ভরাটকাল এর সময় বন্দর সর্বোচ্চ পানি সমতল ভূ-ভাগের দিকে ৫০ (পঞ্চাশ) গজ পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতির আদেশ ও বাংলাদেশ গেজেট কি?
গেজেট হল, সরকারী ঘোষণা সম্বলিত এক ধরণের সংবাদ। রাষ্ট্রপতির এই আদেশকে বলা হয় প্রজ্ঞাপন বা NOTIFICATION। বিভিন্ন সরকারি অফিস তাদের প্রজ্ঞাপন, আইন, বিধি, প্রবিধি ইত্যাদি গেজেট হিসাবে অন্তর্ভুক্তি করার জন্য ঢাকার তেজগাঁওয়ের ‘বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা’ অফিসে মুদ্রণের জন্য পাঠানো হয়। উক্ত মুদ্রণ অফিস বিভিন্ন সরকারি অফিসের পাঠানো প্রজ্ঞাপন, আইন, বিধি, প্রবিধি ইত্যাদি বিজি প্রেস বা বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে গেজেট আকারে ছাপানোর ব্যবস্থা করে থাকে। এই গেজেটে শেষের অংশে শুধু মাত্র শেষে লেখা থাকে ‘রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে’ ও একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন।
গেজেট দুই ধরণের – অতিরিক্ত এবং সাধারণ গেজেট
সাধারণতঃ আইনগুলি প্রকাশিত হয় অতিরিক্ত গেজেটে এবং সরকারের অন্য সব আদেশ, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি প্রকাশিত হয় সাধারণ গেজেটে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫ ধারার (৪) উপধারায় বলা আছে: “(৪) সরকারের সকল নির্বাহী ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির নামে গৃহিত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ করা হইবে। “এই বিধান অনুসারে সরকারের সব নির্বাহী আদেশ, সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশ করার সময় “রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে” উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের দু-একটি মামলায় রাষ্ট্রপতির উক্ত বিষয়ে রেফারেন্স হিসাবে দেখা যেতে পারে (যেমন: বাংলাদেশ বনাম মো. হাবিবুর রহমান ১৯৭৯)।
ফৌজদারি অপরাধ হবে কি না?
না, এই আদেশ অমান্য করলে ফৌজদারি অপরাধ হবে না। তবে সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গ করা হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বদলি করার আদেশ জারি করা হল। ইহা গেজেটে প্রকাশিত হবে এবং লেখা থাকবে “রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে”। যদিও এই নির্দেশ স্বাক্ষর করবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষে একজন উপসচিব। যদি এমন হয় যে, এই নির্দেশ জারি হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল নির্দেশ মানলেন না। সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা ইত্যাদির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গেজেটের কার্যকারিতা কি?
আগেই উল্লেখ করেছি গেজেট একটি সরকারি প্রকাশনা মাত্র। আইন, আদেশ, বিধিমালা সহ সরকারের দৈনন্দিন সব কার্যধারা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা এবং স্থায়ী রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য গেজেট প্রকাশিত হয়। গেজেটের নিজস্ব কোন শক্তি নাই। অর্থ্যাৎ গেজেট একটি প্রকাশনা মাত্র। যার মাধ্যমে জনগণকে আইন সহ সরকারের সব ধরণের কার্যক্রমকে অবহিত করা হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি গেজেটে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ বা নির্দেশনা অমান্য বা ভঙ্গ করে; তা হলে ঐ আইনে বর্ণিত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অর্থ্যাৎ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি গেজেটে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ বা নির্দেশনা অমান্য বা ভঙ্গ করে; তাহলে এই কথা বলা যাবে যে, অমান্য করেছে ও তার প্রতিকারও আছে।
ফ্ল্যাশ ব্যাক বা পিছনে ফিরে তাকাই!
২০১৩ সালে গুপ্তছড়া- কুমিরা ঘাটের ইজারা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ রা ডিসেম্বর ২০১৪ সালের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া-কুমিরা যাত্রী পারাপার ঘাট পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
গত ১ লা মার্চ ২০২০ ইং ফেনী জেলার সোনাগাজী থানা সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থেকে ডাবল মুরিং থানা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ-বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কে নৌ-ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও তাদের পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ নৌ ঘাটের ইজারাদাতা হিসাবে মালিকানা ধরে রাখতে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদবির করা অব্যাহত রাখে। বিষয়টি সমাধানে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কয়েক দফা বৈঠকে বসে আন্তঃমন্ত্রণালয়।
এদিকে সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং সরকার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সকল ঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও ইজারা প্রদানে ক্ষমতা দেয়ায় সমঝোতা স্মারক নবায়ন করতে অনাগ্রহ পোষণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ)। অতঃপর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ’) র চট্টগ্রাম কার্যালয় সমঝোতা স্মারক নবায়ন না করতে অনুরোধ করেছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে। কিন্তু কেউ কথা রেখেনি, এমনকি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও।
লুটেরা ইজারাদার ও মুৎসুদ্ধি ইজারাগ্রহীতার আইন অমান্য
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এই ঘাটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বাবদ আয় ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে আয়ের সুযোগ থাকায় এই ঘাটটি সন্দ্বীপের প্রধানতম নৌ রুট হওয়ায় নিজেদের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজী হয় নাই । ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইজারা মূল্য প্রাপ্তির মাধ্যমে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করে চলেছে। তাই সম্প্রতি যাত্রী ও মালামাল পারাপার ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে লুটেরা ইজারাদার ও মুৎসুদ্ধি ইজারাগ্রহীতা যা গেজেট আদেশের বরখেলাপ।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) রাষ্ট্রপতির গেজেট প্রজ্ঞাপনের কারণে মিরসরাই – রাসমণি নদী বন্দরের চলাচলের জন্য নৌ পথে ৪টি বয়া স্থাপন করেছিল, যা কিছু দিনের মধ্যে বিকল করে দেয়া হয়েছিল। তাছাড়াও গুপ্তছড়া ও কুমিরার জেটিতে লাইটিং, ড্রেজিং ও যাত্রীদের বসার সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যাত্রী স্টিমার সার্ভিস চালু করে যা স্থানীয় সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে আছে।
অতঃপর গত ১ লা মার্চ ২০২০ ইং ফেনী জেলার সোনাগাজী মৌজায় মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশ থেকে চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে মীরসরাই-রাসমনি নদী বন্দর ঘোষণা করে সরকার, যা গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে গত ৩রা মার্চ ২০২০ ইং। একই দিন সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডবিওটিএ) এই নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। ফলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে কোনো চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। তাই এই নদী বন্দরের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। বিধি অনুযায়ী চট্রগ্রাম জেলা পরিষদ ইজারাদার থাকতে পারে না। তাছাড়া বাংলাদেশের জেলা পরিষদের আয়ের উৎস গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যয়ের খাতগুলিতে আয়কৃত এলাকায় উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার জন্য উল্লেখযোগ্য কোন বাজেট নাই।
(https://lgd.portal.gov.bd/sites/default/files/files/lgd.portal.gov.bd/page/f94d43c4_4dce_4fde_b4f4_7198811c340d/Budget%20rules%2017.pdf )
জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্ব ও আইন অমান্য
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা যদি পক্ষ দোষে দুষ্ট হন, তাহলে দেশের বিদ্যমান আইনে THE PREVENTION OF CORRUPTION ACT, 1947 এ প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। এই আইনের ৫ ধারায় সরকারি কর্মকর্তার ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে। আর THE PENAL CODE, 1860 এর ৯ম অধ্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে।
প্রতিকার ও রীট
বাংলাদেশ সরকারের গেজেটের এই অতিরিক্ত সংখ্যা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল THE PORT ACT, 1908 আইনের ক্ষমতা বলে। এই দীর্ঘ সময় ইজারাদাতা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ কড়ি হাতিয়ে নিয়েছে ও সরকারি কর্মকর্তাগণ এহেন কর্মে সহায়তা দান করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের গ্যাজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতির আদেশ অমান্য করা ও তা বলবৎ করার জন্য প্রতিকার নিশ্চয় আছে। নাগরিকের অধিকার ও জনস্বার্থে যে কেউ প্রতিকার প্রত্যাশী হতে পারেন। দ্বারস্থ হতে পারেন দেশের সবোর্চ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে। রীট রুজ্জু করা যেতে পারে। গত ১ লা মার্চ ২০২০ ইং থেকে আইন অমান্য করে উপার্জিত সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দানের জন্য আবেদন করতে পারেন রীটে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য নৌ পারাপারের ভাড়া সরকারি নিয়মে নটিক্যাল মাইল হিসাব করে সন্দ্বীপ – চট্টগ্রামের সব পারাপারে ন্যায্য ও যুক্তি সঙ্গত ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য রীটে প্রতিকার চাইতে পারেন।
গুপ্তছড়া ঘাটের উত্তরে ফেরি চলাচল চালু করা যেতে পারে। ওই অংশে নদীর স্রোত প্রবাহ হচ্ছে ফেরি চলাচল উপযোগী। যেমনটি বলেছিলেন ফেরী ও নদী প্রবাহ বিশেষজ্ঞগণ। আমি ফেরী চলাচল নিয়ে গত ২০ বছর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করেছি। পদ্মা পারাপারের ফেরীগুলো গুপ্তছড়া – কুমিরা নৌ পথে চালু করতে অর্থ জোগান দেয়ার জন্য রীট অর্ডার প্রত্যাশা করা কি অমূলক হবে? তখন আপনি গাড়ি নিয়ে প্রাণের সন্দ্বীপের সাথে ২৪/৭ জীবনে মরণে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।
তাছাড়া সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পনুর্বাসন সমিতি ৭ দফা দাবির ৫ নং দাবির জন্য বরাদ্দ হতে পারে এই বিপুল পরিমান অর্থ। উক্ত দাবিটি হলো – ‘’সন্দ্বীপ- নোয়াখালী সড়ক ও সন্দ্বীপ- চট্টগ্রাম সেতু নির্মাণ করা’’
সন্দ্বীপের (ভাসানচর – কালাপানিয়া – স্বর্ণদ্বীপ – উড়িরচর ও (নোয়াখালীর) কোম্পানিগঞ্জ এর সাথে প্রস্তাবিত সংযোগ সড়ক ও সন্দ্বীপের পূর্বদিকে প্রস্তাবিত সন্দ্বীপ – চট্টগ্রাম সংযোগ সেতু বাস্তবায়ন করা।
সন্দ্বীপের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ও প্রবাসে কষ্টার্জিত তথাকথিত অতিরিক্ত ভাড়া বাবৎ অর্থ উত্তোলন ও জিম্মি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ন্যায় ও সুবিচারের স্বার্থে জনহিতকর খাতে উক্ত হরিলুট ও মুৎসুদ্ধি অর্থ ব্যয় হউক – এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
– এডভোকেট শিব্বীর আহমেদ তালুকদার
সন্দ্বীপ/লন্ডন
০৯ ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ ইং।
📷