নোয়াখালীর অতি প্রাচীন একটি সেতু শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া সদর পূর্বাঞ্চল সহ কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নানান গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তায় যার অবস্থান। ফিরিঙ্গি মানে ইংরেজদের তৈরি বলে এর নাম ফিরিঙ্গির পোল (সেতু), স্থানীয় ভাষায় কাছে হেরাঙ্গির হোল নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
পূর্বাঞ্চল থেকে নোয়াখালীর মূল প্রশাসনিক শহর মাইজদীতে প্রবেশের জন্য এই সেতুটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। শুনেছি মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নাকি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী আর তার দোসররা এই সেতুর উপর মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের ধরে এনে কখনো জবাই করে, কখনোবা গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে দিতো নীচের প্রবাহমান খালের পানিতে।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই সেতুটির অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় নাই। অবশ্য কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটবার আগে এদেশে কারো চেতনা জাগে না। এই সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি এর কোন সংস্কার করা হয়েছে এমন কোন রেকর্ড আছে বলে মনে হয় না। অন্তত আমি নোয়াখালী থাকাকালীন সময়ে কখনো দেখি নাই। এই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন আসা যাওয়া করে যার মধ্যে অনেক ধরনের ভারী পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত গাড়িও রয়েছে। বর্তমানে সেতুটির এমনই দূরাবস্থা যে যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। সেতুর পিলারগুলো অনেক আগেই তাদের মেয়াদ হারিয়েছে, সেতুর রেলিঙের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। মেঝেতেও ফাটলসহ গর্ত হয়ে গেছে কয়েক জায়গাতে।
সড়ক ও জনপথ, নাকি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কে এই জরাজীর্ণ সেতুর দেখভাল করার দায়িত্বে আছে আমার জানা নাই। সেতুটি যেন অসহায় এতিম এক সন্তান যার প্রতি কারোরই কোন নজর নাই। এর বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে একে সংস্কার করে আদৌ কোন সুফল আসবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তার পরিবর্তে এখানে নতুন করে একটা সেতু নির্মাণ একেবারে জরুরি প্রয়োজন হয়ে গেছে বলে মনে করি। নোয়াখালীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এবার অন্তত এদিকে নজর দিবেন? আমাদের সেতুমন্ত্রী যেখানে বিশাল আকারের পদ্মা সেতু তৈরির পাশাপাশি অসংখ্য ছোট বড় সেতু নির্মাণ নিয়ে রাতদিন অতি ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন সেখানে স্বয়ং সেতুমন্ত্রীর নিজ জেলায় এমন একটা জরাজীর্ণ মেয়াদোত্তীর্ন সেতু কি বড্ড বেমানান নয়?
– আহমেদ আমান মাসুদ, লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট