খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী একাধিক প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছে সংস্থাটি।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে এই জেলায় সাতজন পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। এ অবস্থায় আবারও কিশোরীকে বর্বরোচিত ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবিতে যৌক্তিক আন্দোলন কি অপরাধ?
প্রশাসনকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে মন্তব্য করে টিআইবি ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার ঘটনায় যারা জড়িত এবং যারা কুশীলব ভূমিকা পালন করেছে, তাদের খুঁজে বের করাসহ এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের ধর্ষণের ঘটনাকে স্বাভাবিকত্ব দেওয়ার প্রচেষ্টা নতুন নয়। ধর্ষণের শিকার নারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে মামলা গ্রহণসহ পুরো বিচারপ্রক্রিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্ষককে রক্ষার চেষ্টা দেখা যায়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ অবস্থায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চলমান আন্দোলন খুবই যৌক্তিক ঘটনা। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে সংবেদনশীল আচরণ কাম্য ছিল।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বৈষম্য ও গোষ্ঠীগত নিপীড়নমূলক চর্চার ঊর্ধ্বে উঠে ধর্ষণসহ সব সহিংস ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যথায় এ–জাতীয় ঘটনার পুরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের ব্যর্থতাও দৃশ্যমান।’
উল্লেখ্য, পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে গত শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে খাগড়াছড়িতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। দুপুরে গুইমারার একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেলা একটায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
গুইমারায় গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ।