মানুষ কত কারনেই প্রবাসী হন ।নভেরা আহমেদ, কেন তিনি দেশত্যাগী হয়েছিলেন তা হয়ত আমরা জানতে পারব না। হয়ত যথারীতি মানবিক কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে অনুমান ও জল্পনা কল্পনা করতে পারি ঐ পর্যন্তই । তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ ও আমি সমীচীন মনে করিনা।
দুঃখজনক হচ্ছে যে তাঁর অবদান, শহীদ মিনার ডিজাইন ও নির্মাণে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা ভুলে যাওয়া এবং তাকে প্রাপ্য স্বীকৃতি না দেওয়া। এর পিছনে কি মানসিকতা কাজ করেছিল? আমি মনে করি এই প্রশ্নগুলি খুবই ন্যয় সঙ্গত ।
কেন তাকে প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি এমনকি তাঁর নাম ও উল্লেখ করা হয় নি। আশ্চর্য নয় কি? এই অসাধারণ শিল্পী ও স্থপতির নাম যেন ইচ্ছা করেই ভুলে যাওয়া হয়েছে । তাঁর নাম মুছে ফেলার প্রয়াস কেন? যে সময়ে তিনি শহীদ মিনার নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নভেরা আহমেদ নিঃসন্দেহে কৃতিত্ব ও সর্ব উচ্চ সম্মানের দাবী করেন। তাঁর পক্ষে মর্মাহত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ভাবতে ও কষ্ট হয় তাকে বঞ্চনা করার পেছনে এক ধরণের ষড়যন্ত্র ছিল। কেন নভেরা মেয়ে বলে? নারী শিল্পী, প্রকৌশলী, স্থপতি, বৈজ্ঞানিক, বুদ্ধিজীবি এটা পুরুষদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয় কি? গত শতাব্দিতে, ভার্জিনিয়া উওলফ লিখেছেন তাঁর Room of Her Own বইয়ে তাঁর সময়ে ইংল্যান্ডে মহিলা লেখিকারা অনেক পুরুষ বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ভ্যানিস হয়ে যেতে হয়নি, তাদের স্তব্ধ করে দেয়া হয়নি। যেটা নাভিরার ক্ষেত্রে ঘটেছিল। এই ঘটনা তাকে কত হতাশ করেছিল ও কতটা মানসিক দুঃখ দিয়েছিল। তা অনুমান করতে পারি মাত্র। তিনি জেনেছিলেন এই দেশে তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি ও সম্মান তিনি পাবেন না। হয়ত তাকে কাজ করবার সুযোগ দিতেও ওরা অস্বীকার করেছিল । কারণ এটা বাংলাদেশে সম্ভব ।এটা কি সত্যি যে শহীদ মিনার নির্মান কাণ্ডে জড়িত কৃতি পুরুষেরা নভেরার কৃতিত্ব নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছে। তাইত দেখছি !
মে ৬, ২০১৫তে লেখা।
নীনা হাসেল, কবি লেখক
কানাডী প্রবাসী।