কলকাতা খেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার ২১ মে, ২০২০ ছাপা প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য হুবহু প্রতিবেদনটি ছাপা হলো–
আমফান যেন উস্কে দিয়ে গেল ২৮৩ বছরের এক পুরনো স্মৃতি! ১৭৩৭ সালের কলকাতায় হওয়া ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের মতো ক্ষয়ক্ষতি বুধবার হয়নি বটে। কিন্তু একটি সূত্রের দাবি, ১৭৩৭ সালের ১১ অক্টোবর রাতে যে পথে ঘূর্ণিঝড় সাগর থেকে কলকাতার দিকে বয়ে এসেছিল, এ দিন আমপানের গতিপথের সঙ্গে তার বহু মিল!
২৮৩ বছর আগে রেডার কিংবা কৃত্রিম উপগ্রহের নজরদারি তো দূর অস্ত, হাওয়া অফিসই ছিল না। তাই সেই ঝড়ের নিখুঁত গতিপথ পাওয়ার উপায় নেই। তবে ১৯৯৬ সালে আবহাওয়া দফতরের ‘মৌসম’ পত্রিকায় আবহবিজ্ঞানী এ কে সেনশর্মা ১৭৩৭ সালের ঝড় নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন। সেখানে ঝড়টির যে গতিপথ আন্দাজ করেছিলেন তাতে দেখা যাচ্ছে, সাগরদ্বীপের তলা থেকে উঠে কলকাতার উপর দিয়ে মধ্যবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছিল ঝড়টি। এ দিন আমপানের গতিপথও অনেকটা একই রকম।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, কলকাতার মূলত উত্তর ভাগ লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৪০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের ফলে গঙ্গায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রচুর জাহাজ, জলযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতিহাসবিদ রঞ্জন চক্রবর্তীর গবেষণায় ১৭৩৭ সালের ওই ঘূর্ণিঝড়ের বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণ রয়েছে। বিলেতের ‘জেন্টলম্যানস’ পত্রিকাকেও সে সময় এই বিপর্যয়ের বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ভূতত্ত্ববিদ রজার বিলহ্যামের গবেষণাতেও সেই রিপোর্টের উল্লেখ রয়েছে।
১৭৩৭ সালের ওই বিপর্যয় কি নেহাতই ঘূর্ণিঝড় নাকি ভূকম্প ও তার ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তা নিয়ে নানান মত রয়েছে। কেউ কেউ আবার দু’টি কারণের কথাও বলেন। তবে ইতিহাস ও আবহবিজ্ঞানী
তবে সেটা ঘূর্ণিঝড় নাকি ভূকম্পের ফলে জলোচ্ছ্বাস তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ওই রাতে কলকাতার
ভূমিকম্প নিয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য তৎকালীন কোনও নথিপত্রে নেই। ফলে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী
ওই বিপর্যয়ের পিছনে ঘূর্ণিঝড়ই দায়ী বলে মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য, জলোচ্ছ্বাস হওয়ার জন্য প্রবল ভূমিকম্প হওয়ার প্রয়োজন।
কিন্তু সমকালীন কোনও নথিতে তার উল্লেখ নেই।