হবিগঞ্জে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতারে এমএসএফ ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ করেছে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়- বৃহস্পতিবার (২১.০৫.২০২০) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে স্থানীয় “দৈনিক আমার হবিগঞ্জ” পত্রিকার সম্পাদক প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্তকে পুলিশ শহরের চিরাকান্দির নিজ বাসা থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেছে। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ- ৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু জহিরের বিরুদ্ধে তার সম্পাদিত পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জনাব সায়েদুজ্জামান জহির। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় উক্ত পত্রিকার আরও কয়েকজন সংবাদকর্মীকে আসামি করা হয়েছে যারা গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তুলছেন তখনই হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামলাটি করেন। অথচ সাংসদ জহিরের বিরুদ্ধে কি অপপ্রচার চালানো হয়েছে জানতে চাইলে, কোনো জবাব দিতে চাননি মামলার বাদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
এমএসএফ মনে করছে- বহুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি উদ্বেগজনকভাবে অপব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক ও গনমাধ্যমকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি, হুমকি ও আক্রমণ এর লক্ষবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়- ১ এপ্রিল, ২০২০ থেকে ৬ মে, ২০২০ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০ জন সাংবাদিক, ১ জন ব্লগার, ১ জন কার্টুনিষ্ট ও অন্যান্য ১৯ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ০৭ মে, ২০২০ সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সংবলিত কোনো পোষ্ট দেওয়া ও সে ধরনের পোষ্টে লাইক দেওয়া বা শেয়ার করা থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পরিপত্র জারির দিনই বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও লেখককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভয়াবহ করোনা দূর্যোগকালে জনগণের জ্ঞাতার্থে সরকার বিভিন্ন গুজব ও ভুল তথ্য প্রচার প্রতিহত করতে আগ্রহী কিন্তু বাক-স্বাধানতা নিশ্চিত ও স্বাধীন গণমাধ্যম কর্তৃক নির্ভরযোগ্য ও ব্যাপকভিত্তিক তথ্য প্রচার থেকে শিক্ষা গ্রহন না করে, সরকার উল্টো সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছে, যা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এ আইনে মামলা ও গ্রেফতারের যে সব ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্টত:ই মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
এমএসএফ মনে করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সম্পাদক, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নাগরিকদের মুক্ত চিন্তা, মতপ্রকাশের ̄ স্বাধীনতা, গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে হরণ করার অপচেষ্টা সরকারের হীনমন্যতার বহি:প্রকাশ।
এমএসএফ দৃঢ়তার সাথে বর্তমান উপদ্রুত জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনসহ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহ সচল রাখার নিমিত্বে সরকারের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে।