গরীবের অন্য রকম শক্তি থাকে
গরীবের অন্যরকম শক্তি থাকে; তাকে রাজ দর্জি লকডাউনে গার্মেন্টস কারখানায় ডেকে পাঠালে গরীব ঠিকই রানা-প্লাজার কাফন পরে করোনা-ভাইরাস সমুদ্র সাঁতরে কাজে যোগদান করার জন্য রওনা দিতে পারে; মাঝপথে পুলিশ তাকে লকডাউন অমান্যের জন্য লাঠিচার্জ করে ফেরত পাঠাতে পারে।
গরীবের অন্যরকম শক্তি থাকে; তাই রাজদর্জি জিডিপি বাঁচাও আন্দোলনের ডাক দিলে; যিনি দর্জি তিনিই মন্ত্রীরা লকডাউনে সেলাইদাসের জন্য কাজে যোগদানের অনুমতি ছেপে দিতে পারে।
রাজ দর্জি-সংঘের প্রধান গরীবের পেলোসি আপা কালো ফ্রেমের চশমার মাঝে অশ্রুর বাষ্প তুলে; ইউরোপের ব্র্যান্ড-দর্জিদের কাছে পোশাকের অর্ডার ক্যানসেল না করার জন্য গরীবের দুঃখ তুলে ধরে লাইলাক লিপস্টিক পরা লিপ সার্ভিসে।
ইউরোপের কাপড়ের দোকানদার সাফ জানিয়ে দেয়, করোনাকালে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে মানুষের বস্ত্র আর তেমন লাগেনা; করোনা জগত জুড়ে সভ্যতার বস্ত্রহরণ করেছে; পশ্চিমে এখন ন্যুডিজমই নতুন ইজম; আপনাকে দেয়া কাপড়ের অর্ডারগুলো ক্যানসেল করতে হচ্ছে তাই।
কালোফ্রেমের চশমার মহীয়সী গরীবের পেলোসি আপা; এরপর কেঁদে বুক ভাসান; সেলাইদাসের কল্যাণ চিন্তায় তিনি আর ঘুমাতে পারেন না। জিডিপি রাজার সেলাই প্রণোদনা প্যাকেজ রাজদর্জিরা ভাগ করে নিলে; গরীবের জন্য অন্যরকম শক্তিতে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকেনা।
অর্থনীতির জিডিপি-দরবেশেরা গরীবের এই অন্যরকম শক্তির কথা ভেবেই; করোনার ওষুধ হিউম্যান ট্র্যায়ালের জন্য জিডিপি রাজ্যকে উপযুক্ত মনে করে। করোনা কল্যাণের আপার লিপ সার্ভিসের কাজটাও হলো; আবার গরীবের অন্যরকম শক্তির তাকদে মানবশরীরে ওষুধের পরীক্ষাটাও হয়ে গেলো।
এ ওষুধ পরীক্ষা আগের কালের মতো বুনো হাতির ওপরে করার আর সুযোগ নেই। সমাজ মনুষ্যত্ব অর্জন না করতে পারলেও হাতিত্ব অর্জন করেছে; তাই হ্যাশট্যাগ এলিফ্যান্ট উইমেনরা হাতিত্ববাদে আলুথালু হয়ে সাফ বলে দেয়, আপনাদের যা কিছু জিডিপি ও ওষুধপরীক্ষা; তা মনুষ্যত্বের ওপর করুন; হাতিত্বের দিকে তাকালে চোখ গেলে দেবো।
জিডিপি রাজার দেশের গরীবের ন্যান্সি পেলোসি আপা ও বার্নি স্যান্ডারস ভাইয়ার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়; এমেরিকার নিও-কুনতাকিন্তি ফ্লয়েডের মাথা পুলিশের হাঁটুতে পিষে দিলে। কিন্তু জিডিপি রাজার দেশেতে অনেক মানবাধিকারের অক্সিজেন তো; তাই ফরিদপুরে ফ্লয়েড; নিখিলের মাথা; পুলিশ হাঁটুতে পিষে দিলে এতোটুকু নিঃশ্বাসের অসুবিধা হয়না; কারণ গরীবের অন্যরকম শক্তি থাকে।
দেখোনি বন্যার পানিতে ডেকচি নিয়ে ভাসতে ভাসতেও গরীবেরা কত হাসতে পারে। গরীব হাসিমুখে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদিয়ে কেমন “সংখ্যা” হয়ে রইলো; আর বড়লোকেরা দেখো দিবসগুলোতে কত মুক্তিযুদ্ধের গৌরব রচনা করে “সংবাদ” হয়। স্বাধীনতার সুফল কুড়িয়ে বড়লোকের কতগুলো সেকেন্ড হোম হয়; আর গরীবের ঘরই হলোনা; তার বস্তির কুটিরে আগুন জ্বেলে দিয়ে হ্যাশট্যাগ রাণীরা কতো পদ্ম-পুষ্করণীতে আগুন পোহায় গরীবের “সামান্য ক্ষতিতে”। গরীবের আসলে অন্যরকম শক্তি থাকে।
অর্থনীতির পদ্মঠোঁট আবার কামাল কিয়া কামাল কিয়া দিয়ে জিডিপি বাঁচাতে লকডাউনের সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করার নির্দেশ দিলে; দরবেশের প্রাণ গরীবের জন্য আকুল হয়। গরীব তার স্বপ্নে দেখা দেয়; গরীব যেন ডাকছে, “যদি মন কাঁদে তবে চলে এসো এক বরষায়।”
গরীব দরদী দরবেশ পরামর্শ দেন, কারখানাগুলোতে করোনা টেস্টিং ল্যাব হোক; লাগলে ওষুধ; দেবে গৌরী সেন।
রাজ-বেয়াইদের যারা করোনার ভয়ে চার্টার্ড প্লেনে করে সেকেন্ড হোমে ভাগোয়াট হয়েছে; তাদেরও প্রাণ কাঁদে গরীবের জন্য। তারা আহবান জানান, কারখানার ছাদে শ্রমিকের মাথাপিছু একটি করে এয়ার বাস রাখা হোক; চাটার প্লেন যদি না-ও দেয়া যায়।
মধুচন্দ্রিমাকে চ্যালেঞ্জিং টাইম ভেবে করোনার সংসারে খাবি খাওয়ার চ্যালেঞ্জিং টাইমে এসে রঙ্গিন “বিষাদ সিন্ধুর” পান্ডুলিপি রচয়িতা এখন “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্রে”র অতসী কাঁচ পকেট থেকে বের করে বাতাসে ধরে পরীক্ষা করে বলেন, পরাজিত শক্তির গুজবে করোনাভাইরাস প্রাণশক্তি পাচ্ছে। এই করোনার সপক্ষের শক্তিদের রুখে দিন। গৌরী সেনের ওপর ভরসা রাখুন।
“সব পাখি ঘরে ফেরে সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন; থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার “তিনিই পারেন” গৌরী সেন।
গরীবের পেলোসি আপা ধীর পায়ে হেঁটে এসে জুমের ভার্চুয়াল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, সব বিদেশী অর্ডার ক্যানসেল হয়ে গেছে; দেশপ্রেমিক দর্জি নায়কেরা আর তাদের গার্মেন্টস চালু রাখতে পারেন কীনা ঠিক নেই, তাই জুনে শ্রমিক ছাঁটাই। “তোমাদের পাশে এসে বিপদের বাঁশী হতে আজকের চেষ্টা অপার।” গরীবের অন্যরকম শক্তি থাকে।
ক্রমশ:
– মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক
Editor-in-Chief : E-SouthAsia