হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজ:করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর সারা বিশ্বের গণযাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। করোনাকে সামনে রেখে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য আমাদের নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্বের অনেক শহর ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাগোতাতে ৫৫০ কি.মি. সাইকেল লেনের সাথে আরো ৮০ কি.মি. লেন সংযোজন করা হয়েছে, মেক্সিকো ৮০ মাইল অস্থায়ী সাইকেল লেন তৈরি করেছে যাতে জনগণ দূরত্ব বজায় রেখে যাতায়াত করতে পারে, মিলান করোনা পরবর্তী সময়ে বায়ু দূষণ কমিয়ে আনা এবং যাতায়াত চাহিদা পূরণের জন্য সাইকেলকে বিবেচনা করছে, প্যারিস ২০২৪ সালের মধ্যে সড়কগুলো সাইকেল বান্ধব করবে। বর্তমানে ঢাকা শহরে মোট যাতায়াতের ২% সাইকেলে সংঘটিত হয়। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইকেলবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ একটি সমন্বিত সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। বুধবার বিকেলে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং কার ফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে “করোনা পরিস্থিতিতে সাইকেলের ভূমিকা: দ্রুত অবকাঠামো বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক অনলাইন ওয়েবিনারের আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের সুস্থ এবং নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পূর্বের মত ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হাঁটা, সাইকেলকে প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। কারণ এই সকল মাধ্যমগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করা সম্ভব পাশাপাশি পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, রাজউক এলাকায় দৈনিক সংঘটিত ৩ কোটি ট্রিপের মধ্যে প্রায় ৬০০,০০০ ট্রিপ সংঘটিত হয় সাইকেলে। রিভাইসড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট পলিসি ও জাতীয় বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালায় সাইকেলবান্ধব অবকাঠামো তৈরির কথা বলা আছে। কিন্তু নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় তা আমরা দেখতে পাইনি। সাইকেলের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা যেমন, নিরাপদ সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, সড়কের মোড়গুলো নিরাপদে বাঁক নেয়ার ব্যবস্থা থাকা, প্রয়োজনীয় সাইন এবং চিহ্ন প্রদান করা প্রয়োজন।
স্বপ্নচারিনী এর পরিচালক মাহিনুর আক্তার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। নারীরা এখন সাইকেল চালাতে বেশ আগ্রহী। বিশেষ করে কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় ও কর্মজীবি নারীদের মধ্যে সাইকেল চালানো প্রবণতা বেশি। তবে সাইকেল প্রশিক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা না থাকার কারণে আমাদের সাইকেল প্রশিক্ষণ প্রদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
হিয়ার উই প্লে এর প্রতিষ্ঠাতা আমির হামজা বলেন, যেহেতু শিশুদের নিয়ে কাজ করি, সেদিক থেকে আমি বিশ্বাস করি সাইকেল শিশুদের একদিকে যেমন বিনোদনের মাধ্যম অন্যদিকে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এজন্য নিরাপদ সাইকেলের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ বড় হয়ে নিরাপদ পরিবেশের অভাবে তারা সাইকেল চালাতে চাইবে না।
বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, আগামী দিনের দূযোর্গ মোকাবেলায় আমাদের নগর যাতায়াত ব্যবস্থা সাইকেল ও হাঁটাবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর পলিসি অফিসার মাসুম বিল্লাহ ভূইয়া বলেন,বলেন, যে কোন নগরীর প্রতিটি মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে, কম খরচে, নিরাপদে এবং সময়মত যাতায়াত করতে পারে সেজন্য একটি সুষ্ঠু নগর পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা জরুরী। এক্ষেত্রে সাইকেল ও হাঁটার কোন বিকল্প নেই।
ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর নেটওয়ার্ক অফিসার শান্তনু বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মান্নান মনির, বেলাল হোসেন, সাইকেলান্স অফ বাংলাদেশের সিফাত হারুন, বায়স্কোপ এর আলমগীর হোসেন, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।