এক আইন কলেজের সকালের ক্লাসে নতুন শিক্ষক ঢুকে বোর্ডে লেখেন, অধিকারের শুরুর কথা। এরপর শিক্ষক সামনের বেঞ্চে বসা এক ছাত্রকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী!
–আমার নাম মোস্তফা জব্বার, স্যার।
–এক্ষুণি ক্লাস দেখে বেরিয়ে যাও। তোমার এমন শেভ না করা চেহারা আর দেখতে চাইনা এ ক্লাসে।
শিক্ষকের কর্কশ আচরণে স্তম্ভিত হয়ে জব্বার যেন উদভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ৪০ ক্রোশ হেঁটে কলেজে এসে নতুন শিক্ষকের এই আচরণ তাকে বেদনাহত করে। এরপর সম্বিত ফিরে পেলে সে তাড়াতাড়ি উঠে ল্যাপটপ আর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে ক্লাসের বাইরে চলে যায়।
ছাত্ররা সবাই ভীত আর ক্ষুব্ধ হয়ে ভাবে, নতুন শিক্ষক হয়তো কাকের মাংস দিয়ে নাশতা করে এসেছেন। সবাই বিক্ষোভে নীরব হয়ে থাকে।
শিক্ষক বলেন, এবার ক্লাস শুরু করা যাক। বলো, প্রচলিত আইনের উদ্দেশ্য কী; এতে কী লাভ হয়?
ভয়ে ভয়ে ছাত্ররা প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করে।
–যাতে করে সমাজে আইনের শাসন বজায় থাকে।
–নাহ; উত্তর হয়নি; বলেই বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকান শিক্ষক।
–মানুষ যাতে তাদের ভুল কাজের জন্য জরিমানা দেয়।
শিক্ষক কটাক্ষ করে বলেন, কারো মাথায়ই কী ঘিলু বলে কিছু নাই; কেউ কী পারবে না এই সহজ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে।
সাবরিনা নামের লাস্যময়ী ছাত্রী ওষ্ঠরঞ্জনিতে ঢেউ খেলিয়ে বলে, আমরা যাতে ন্যায় বিচার পাই; সেজন্যই এসব প্রচলিত আইন।
–যাক অন্ততঃ একজন পাওয়া গেলো যে নিম্ন বুদ্ধাংকের নয়। ন্যায়বিচারই এসব প্রচলিত আইনের উদ্দেশ্য। এখন বলো, এই ন্যায়বিচার জিনিসটা খায় নাকি ঠোঁটে দেয়; কী কাজে লাগে এটা?
সবাই শিক্ষকের রাগী মূর্তিতে অখুশি; তবু উত্তর দিতে চেষ্টা করে।
–মানবাধিকার নিশ্চিত করতে কাজে লাগে ন্যায়বিচার।
শিক্ষক জিজ্ঞেস করে, আর কী আর একটু বিস্তারিত বলো কেউ।
–সঠিক ও ভুল বা ভালো ও মন্দ বিচার করে; ভালোকে পুরস্কৃত করা আইনের উদ্দেশ্য।
–মন্দ বলোনি; তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, জব্বারকে ক্লাসরুম থেকে বহিষ্কার করা কী ঠিক হয়েছে আমার?
সব ছাত্র-ছাত্রী গম্ভীরভাবে চুপ করে থাকে।
–আমি একটা ঐক্যবদ্ধ রায় চাই; এ প্রশ্নের উত্তরে।
সব ছাত্র-ছাত্রী ঐক্যবদ্ধ ভাবে মিন মিন করে বলে,
–না; কাজটা ঠিক হয়নি।
–তার মানে বলতে চাচ্ছো জব্বারের সঙ্গে অবিচার করেছি আমি।
সব ছাত্রী বলে, হ্যা স্যার।
এরপর শিক্ষক তার কন্ঠ নরম করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, তাহলে এ ব্যাপারে তখন কেউ কিছু বললে না কেন? তাহলে কাগুজে আইন আর বিধি থেকে কী লাভ যদি প্রয়োজনের সময় এর চর্চা না করো তোমরা! কোথাও কোন অবিচার দেখলে সে ব্যাপারে কিছু করা তোমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অন্যায় দেখে আর কখনো চুপ করে থেকো না। যাও জব্বারকে ক্লাসে ডেকে আনো।
ছাত্ররা এই ক্লাস থেকে বুঝে যায়, এটা ছিলো আইন ক্লাসের প্রায়োগিক শিক্ষা। আমরা যখন আমাদের অধিকার রক্ষায় নিষ্ক্রিয় থাকি; আমরা সম্মান হারাই। আত্মসম্মান কখনোই আপোষের জায়গা নয়।