সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: চাকুরির কথা বলে ভিয়েতনামে নিয়ে দালালচক্রের হাতে তুলে দেয়া ১১ জন বাংলাদেশী অবশেষে দেশে ফিরে আসার জন্য শনিবার বিকেল থেকে হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছাকাছি ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছে।
আটকে পড়া বাংলাদেশীদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ তাদেরকে মাস কেরিয়ার নামের একটি এজেন্সী কাজের কথা বলে ভিয়েতনামে পাঠায়। তাদের সবার ভিসা ও বিএমইটি কার্ড ঢাকাতে করা হয়। ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি এয়ারপোর্টে নামার পর তাদের এয়ারপোর্ট থেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন-এ নিয়ে যাওয়া হয়। কোয়ারেন্টাইন থাকাবস্থাতেই তাদের কাছে ঢাকা থেকে দালালের কাছে পৌছিয়ে দেবার জন্য দেয়া ১০ হাজার ডলার দালালচক্র কৌশল করে নিয়ে যায়।
চাঁদপুর হাজীগন্জের মো: মিথুন (২৮) জানান- তারা বলেছে আমাদেরকে সোফা ফ্যাক্টরীতে ফোমের কাজ দেবে, তাও বিভিন্ন তাকে ফোন সাজানোর মত হালকা কাজ। সবাইকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার এমনকী কাউকে ৪০ হাজার বাংলাদেশী টাকার সমপরিমাণ মূল (বেসিক) বেতন এবং নিয়মানুযায়ী ওভারটাইমের জন্য পারিশ্রমিক দেয়া হবে।
ঝিনাইদহের তরুণ শেখ (২১) জানান- ১৫ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকার পর আমাদেরকে রিক্রুটিং এজেন্সীর স্থানীয় দালাল হোচি মিনের একটি হোটেলে নিয়ে যায়। দুদিন হোটেলে রাখার পর আমাদেরকে হোচিমিন থেকে কারে করে ৪০ মিনিট দূরত্বে বিং ডং এ একটি ফার্নিচার ফ্যাক্টরীতে নিয়ে যায়। ঐ ফ্যাক্টরীতে নিয়ে যাবার পর আমাদেরকে ভারী ভারী ফার্নিচার আনুমানিক ৭০-১২০ কেজি মাল ২/৩ জনকে তুলতে দেয়া হোত।
তরুণ শেখ আরো জানান- কোম্পানী একটা গোডাউনের মত জায়গায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে। কোম্পানী সরাসরি কোন বেতন দিত না, বেতন স্থানীয় দালাল জব্বারকে দিত। সবমিলিয়ে ২৬/২৭ হাজার টাকা দিত। এরমধ্যে পানির বিল ও বিদ্যুৎ বিলের কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা কেটে নিত।
ঝিনাইদহের সদর থানার দহরপুকুর গ্রামের জজ মিয়া(৪৫) জানান – তাদের এলাকার মতি নামের এক লোককে ৯ বছর আগে ঐ এজেন্সীর মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাবার জন্য সাড়ে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিলেন। পরে আরো ১ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ভালো চাকুরির কথা বলে অবশেষে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়।
মো: মিথুন (২৮) জানান- ধীরে ধীরে অতি ভারী কাজ করতে গিয়ে তারা প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি জুলাইতে মেরুদন্ডে আঘাত পাবার পর টেলিফোনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন দেশে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে। দূতাবাসের সম্ভবত: মি: মাইনউদ্দিন পাসপোর্ট, বিএমইটি কার্ড এর কপি এবং সমস্যা লিখে ইমেলে জানাতে বলেন। মিথুন ইমেল করতে পারেন না বলে জানালে মি: মাইনউদ্দিন বলেন ইমেল ছাড়া হবে না।
আটকেপড়া বাংলাদেশীরা জানান- অসুস্থতার জন্য কাজে না যেতে পারলে তাদের হুমকি ধামকি দেয়া হোত। প্রায় সময় দালাল জব্বারকে তাদের বেতনের টাকা দেয়া হোত।
উপয়ান্তর না দেখে তারা বাংলাদেশ দূতাবাসে আসেন। ভিয়েতনাম পুলিশ তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চায় এবং সব শুনে তাদের দূতাবাসের সামনের ফুটপাতে তারা যেখানে আছে সেখানে আপাতত: অবস্থান করতে বলে।
এদিকে শনিবার বিকালে দূতাবাসে আসার পর দূতাবাসের গেটে দাঁড়ানো এক লোক তাদের পরিচয় জানতে চেয়ে বাংলাদেশী পরিচয় জানার পর তাদের দূতাবাস হতে আনুমানিক ১০০ হাত দূরত্বে রাস্তার বিপরীত দিকের ফুটপাতে অবস্থান করতে বলে। রোববার স্থানীয় সময় আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে ঐ একই ব্যক্তি এসে তাদের হাতে একটি অফিসিয়াল সার্কুলার ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে ইমেলে দূতাবাসকে তাদের বিষয় জানাতে বলে। উল্লেখ্য শনি ও রোববার দূতাবাস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
১১ জন বাংলাদেশী কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বলেন- “আমরা দেশে ফিরতে চাই। আমরা আমাদের জীবন বাঁচাতে চাই।”
এ ব্যাপারে হ্যানয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য জানার চেস্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত দূতাবাসের কোন কর্মকর্তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আটকেপড়াদের মধ্যে আছেন- ঝিনাইদহ সদর থানার দহর পুকুর গ্রামের জজ মিয়া ছাড়াও একই থানার বাদ পুকুরিয়া গ্রামের আলম(৩৫), সোহেল রানা(২৮), তরুণ শেখ(২১), রিয়াজ(২২), পার্বতীপুরের কাসেম(৩৪) আলীম(৩৬), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার দেশগাঁও গ্রামের মো: মিথুন(২৮), ব্রাক্ষ্ননবাড়িয়ার কসবা থানার মান্দারপুর গ্রামের নাজমুল ইসলাম(২৭) একই জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার তাতুয়াকান্দি গ্রামের মনির হোসেন(৩০) এবং টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার গাজুটিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন(২২)।