সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই। করোনায় সংক্রমিত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তিনি শেষনি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর পরিবারসূত্রে জানা যায়- মুর্তজা বশীর দীর্ঘ দিন ধরেই হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। গতকাল থেকে তাঁর পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিসরে মুর্তজা বশীর ছিলেন অপরিহার্য ও অন্যতম উল্লেখ্য এক নাম। দৃশ্যশিল্পের বিভিন্ন শাখায় যেমন বিচরণ করেছেন তিনি, তেমনি সৃজনকলার অন্য দুটি মাধ্যম সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সৃজন-প্রতিভার স্বাক্ষর।
মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী,গবেষক ও ঔপন্যাসিক। তাঁর গল্প, উপন্যাস, এমনকি তাঁর কবিতাও মূলত আত্মজৈবনিক। মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর রক্তাক্ত আবুল বরকতকে যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যান, মুর্তজা বশীরও তাঁদের মধ্যে ছিলেন।
চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান মুর্তজা বশীর।কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের ‘দেয়াল,’ ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’, ‘রক্তাক্ত ২১ শে’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো উল্লেখযোগ্য। পেইন্টিং ছাড়াও ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া লিখেছেন বই এবং গবেষণা করেছেন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও। বেশ কিছু দেয়ালচিত্র করেছেন মুর্তজা বশীর। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘আলট্রামেরিন’। এই উপন্যাসটি বাংলা উপন্যাসে এক অনবদ্য সংযোজন।
চিত্রকলায় তিনি বাস্তববাদী ও সমাজমনস্ক হলেও সাহিত্যে অনেক রোমান্টিক। একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি, সুলতান স্বর্ণপদকসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।