যার মননে,সাধনে, স্বপনের গভীরতায় প্রোথিত সাহিত্য।
মাটি-মানুষের যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান তার কলমের নিবিড় ছোঁয়ায়। নিরেট বাস্তবতার নিরিখে শৈল্পিক চেতনায় ঋদ্ধিক উচ্চারণ —
” জন্মের প্রথম চিৎকারই সাহিত্য।”
বোধকরি মানুষের জীবনটা সাহিত্যাঙ্গন, অনুরুপ ভাবে বলা যায় সাহিত্য মানুষের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত।
নন্দী পাড়া হতে আসার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলো নাসিম ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। মাঝে সাঝে মোবাইলে কথা হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক পর আজ সুযোগ হলো নাসিম ভাইয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার। দুপুরবেলা নাসিম ভাইয়ের কল পেয়ে তৎক্ষনাৎ লালকুঠি হতে ছুটে যাই… “আকাশ” প্রকাশনা সংস্থার- অফিসে। প্রকাশনার জগতে “আকাশ”
স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান লেখকদের উপন্যাস,কবিতা, গল্প,প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, জীবনী, অনুবাদ তথা বহুমাত্রিক গ্রন্থ প্রকাশনায় “আকাশ” সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বলদৃষ্টান্ত। আকাশ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধীকারী সদাহাস্যজ্জ্বোল আলমগীর শিকদার লোটন ভাই একাধারে স্বনামধন্য প্রকাশক,পাঠক, তথা সাহিত্যানুরাগী সফল ব্যবসায়ী।বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি। ছাত্র রাজনীতির সুবাদে ১৯৯৬ সাল হতে আলমগীর শিকদার লোটন ভাইয়ের সাথে পরিচয়। আলমগীর শিকদার লোটন ভাই জাতীয় ছাত্র সমাজ-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ছিলেন। নব্বই দশকের আরেক মেধাবী, সৎ,সাহসী, কিংবদন্তী ছাত্রনেতা,”জাতীয় ছাত্র সমাজ” কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক ভিপি- মরহুম সারোয়ার হোসেন টিটু ভাই ছিলেন আমার ছাত্র রাজনীতির আদর্শিক নেতা। সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখায় “জাতীয় ছাত্র সমাজ”-এর সাংগঠনিক সম্পাদক(১৯৯৬-৯৮) ও পরবর্তীকালে সাধারণ সম্পাদক(১৯৯৮-২০০০) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি এবং পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগর (বৃহত্তর) শাখার দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদক মনোনীত হয়ে দায়িত্ব পালন করি সংগঠনের নীতি আদর্শ বুকে ধারন করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে। মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে!
মনে হয় এইতো সেদিনের কথা..ক্যাম্পাসের সোনালী দিনগুলো! অথচ কালের পরিক্রমায় দুই যুগ পেড়িয়ে গেলো।
সাহিত্যচর্চার সুবাদে লোটন ভাইয়ের স্নিগ্ধ স্নেহ ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। আমার রচিত কাব্যগ্রন্থ-
” মিন-লাদুন্নি” একুশে বইমেলায়(২০১০) আকাশ প্রকাশনি হতে প্রকাশনার সুযোগ করে দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় লোটন ভাই।
ভাদ্রের ভরদুপুরে তুমুল আলোচনা, সমালোচনা চলছে সৃজনশীল প্রকাশনার অন্যন্য সংস্থা “আকাশ”-এর অফিস কক্ষে রাজনীতি, অর্থনীতি,সাহিত্য বহুমাত্রিক বিষয় নিয়ে কথাসাহিত্যিক নাসিম আনোয়ার আর স্বনামধন্য প্রকাশক- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আলমগীর শিকদার লোটন ভাইয়ের মধ্যে! বেশ উপভোগ করছিলাম তাদের তথ্যবহুল-জ্ঞানগর্ভ তাত্ত্বিক আলাপন আর সাথে রঙ চায়ের সতেজতা।
সাম্প্রতিক ” আকাশ” হতে প্রকাশিত হয়েছে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক নাসিম আনোয়ারের “শরীর ছোঁয়া প্রেম” উপন্যাস।★ সাংবাদিকতা পেশায় প্রায় আড়াই যুগ কাটিয়েছেন সততা,নিষ্ঠা আর সাহসীকতা নিয়ে।
বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য নাসিম আনোয়ার নব্বই দশকের মাঝামাঝি সাহিত্যাঙ্গনে পদার্পন করেন সরবে “ইতি” শিরোনামে দোভাষী প্যাকেজ কবিতার মাধ্যমে যা বাংলাসাহিত্যাঙ্গনে নব যুগের সূচনা করে।
কঠোর বাস্তবাদী ও মানবিক লেখক নাসিম আনোয়ার আলোচিত হয়েছেন গবেষণাধর্মী উপন্যাস লিখে।
মরণ ঘাতক ক্যান্সার নিয়ে লিখেছেন সচেতনতানূলক উপন্যাস “ক্যান্সারে ভেসে আছে প্রেম” যা পাঠক সমাদৃত হয়েছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ক “ম্যানিয়া” উপন্যাসটি অভিষিক্ত হয়েছে পাঠক সমাজে।
বেশ জামশেদ আড্ডার পর লোটন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদার নিয়ে আকাশ থেকে বেরিয়ে পড়লাম নাসিম ভাইকে অনুসরন করে। স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, শিক্ষিত-মার্জিত রুচিশীল প্রকাশক বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমের প্রকাশনা সংস্থা “তৃণলতা প্রকাশ” এসে বসলাম। কিন্তু এসে জাহাঙ্গীরকে পেলাম না। নাসিম ভাই কল দিলো,জানালো বিশেষ প্রয়োজনে ইসলামপুরে গিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে। এরি মধ্যে আছরের আযান হলো। মার্কেটের তৃতীয় তলায় নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। নাসিম ভাই নামাজ পড়তে গেলেন।
আমি এই ফাঁকে সাহিত্য সাময়িকীর মেকাপ সেটাপ বিষয়ে সাইফুলের সাথে আলোচনা করলাম।
লেখক উন্নয়ন কেন্দ্র হতে প্রকাশিত সাহিত্য সাময়িকী “রাইটার”-এর কার্যকলাপ তৃণলতা হতে সম্পাদিত হয়।
কবি তৌহিদুল ইসলাম কনক-সম্পাদক এবং আমি নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।
নামাজ আদায় করে নাসিম ভাই এসে পড়লেন।
ঘুরেবেড়ানো যার সখ, কঃষ্টের মাঝে যিনি সুখ কুড়িয়ে নেন রত্ন করের মতোন, ভ্রমনবিলাসী নাসিম ভাই বললেন চলো বুড়ীগঙ্গার ধারে মুক্ত বাতাসে বসে জীবনের গল্প বলবো-শুনবো।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌছে গেলাম লালকুঠি। সেখানে আর্মি ক্যাম্পের গেটের পাশে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা-বিস্কুট খেলাম। জাহাঙ্গীরের কল বেজে উঠলো নাসিম ভাইয়ের মোবাইলে। নাসিম ভাই জানিয়ে দিলেন আমাদের অবস্থানের কথা। স্বল্প সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর এসে যোগ দিলো আমাদের চায়ের আড্ডায়, কিন্তু এক গ্লাস পানি ছাড়া কিছুই খেলো না। কর্মব্যস্ততার জন্য জাহাঙ্গীর চলে গেলো তার প্রকাশনা সংস্থায়। আমরা চলে আসলাম নদীর তীরবর্তী সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটের ছাদে। মার্কেটের ছাদে একপ্রান্তে জাতীয় শ্রমিক লীগ সূত্রাপুর থানার কার্য্যলয় আরেক পাশে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের অফিস,ছাদের বিশাল অংশ ফাঁকা। খোলা জায়গায় বসলাম আমরা। শুনলাম নাসিম আনোয়ারের জীবনের গল্প, বাস্তবমুখী উপদেশ যা জীবন পথচলায় পাথেয় হয়ে থাকবে। মুয়াজ্জিমের সুললিত কন্ঠে বেজে উঠলো মাগরিবের আযান। মার্কেটের প্বার্শবর্তী ৪৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যলয়ের তৃতীয় তলায় নামাজ পড়ার জন্য সুব্যবস্থা আছে সেখানে নিয়ে গেলাম নাসিম ভাইকে। ৪৩নং ওয়ার্ডের জনবান্ধব কাউন্সিলর আলহাজ্ব আরিফ হোসেন ছোটন ভাইয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা- অর্থায়নে নামাজ ঘরটি তৈরি করা হয়েছে।
ধর্মপ্রাণ, সৎ,মেধাবী, কর্মনিষ্ঠ কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোঃ আরিফ হোসেন ছোটন ভাইয়ের বলিষ্ঠ নেতৃতে অত্র ওয়ার্ডটি আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি পরিচ্ছন্ন আধুনিক মডেল ওয়ার্ডে রুপান্তরিত হয়েছে। নামাজ শেষে নাসিম ভাইকে নিয়ে হাটতে ছিলাম লাল কুঠির ভিতরে,এরিমধ্যে দেখা হয়ে গেলো আরেক প্রকাশক আশিষ বসু’র সাথে। হঠাৎ অনাকাঙ্খিতভাবে নাসিম ভাইকে দেখেই বিস্মিত হলেন আশিষ দাদা! সামনে এসো বললেন — “আমাদের নাসিম আনোয়ার না!” নাসিম ভাইও বিস্মিত হয়ে বললেন আশিষ দা! দুজনের কুশল বিনিময়ের পর চললো নব্বই দশকের বইমেলা নিয়ে স্মৃতিবিজড়িত কতো ইতিকথা! আশিষ দাদা বলেন চলেন চা খেতে খেতে গল্প করবো। হাটতে হাটতে লালকুঠি হতে বেরিয়ে চলে আসলাম পাশ্ববর্তী মামুনের চায়ের দোকানে। তিন কাপ রঙ চায়ের অর্ডার দিলেন দাদা, সে সাথে নাসিম ভাইয়ের জন্য সিগারেট। নাসিম ভাই প্রচুর পরিমানে সিগারেট পান করেন। প্রায় আধ ঘন্টা আলাপচারিতার পর প্রকাশক ও লেখকের মধ্যে বিদায় হলো।
আশিষ দাদা, চলে গেলেন তার গন্তব্যে আর আমরা চলে আসলাম “তৃণলতা প্রকাশ”- এর অফিসে জাহাঙ্গিরের কাছ হতে বিদায় নিতে। রাত প্রায় আটটা বেজে গেছে। সবারই বাসায় ফিরার তাগিদ। তৃণলতা হতে বেরিয়ে আসলাম রাজপথে। নাসিম ভাই হাস্যরসে বললেন বাংলাবাজার এসেছি অথচো চৌড়ঙ্গী’র লুচি-ডাল খাবো না, তাই কি সম্ভব। আমরা তিনজন চৌড়ুঙ্গীতে গিয়ে বসলাম যথারীতি হাত-মুখ ধুয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কাস্টমারের চাপ কিছুটা কম ছিলো। জাহাঙ্গির জানতে চাইলো কে কি খাবো? নাসিম ভাই ও আমি বললাম শুধু লুচি আর ডাল। জাহাঙ্গির বললো আমিও তাই খাবো। ওয়েটারকে ডেকে তিনজনের জন্য লুচি আর ডাল অর্ডার দিলো। খানিকক্ষণ বাদে টেবিলে খাবার হাজির। নাস্তা শেষ করে চলে আসলাম প্যারিদাস রোডের উত্তম দা’র চায়ের দোকানে। সেখানে বসে চায়ের আড্ডার মাঝেই চললো বিদায়ের প্রস্তুতি পর্ব। দোকান থেকে বেরিয়ে খানিকটা পথ একসাথে চললাম, হেমেন্দ্রদাস রোডের মুখে এসে আমি বিদায় নিলাম কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক নাসিম আনোয়ার ও প্রতিষ্টিত-উচ্চশিক্ষিত-মার্জিত প্রকাশক বন্ধু জাহাঙ্গির আলমের কাছ থেকে। একে-অপরের মঙ্গল কামনা করে আবারো শুভ ক্ষণে দেখার প্রত্যয় নিয়ে হলো বিদায়। নাসিম ভাই আর জাহাঙ্গির একসাথে চলতে লাগলো হেমেন্দ্রদাস রোডের পথ ধরে সোজা আর আমি ডানে বাঁক নিয়ে চললাম রুপচান দাস লেনের পথ ধরে মোহিনী মোহনের পানে।।
এখনো সব কিছু নষ্টদের দখলে চলে যায়নি।
দ্বীপ শিখা হয়ে কিছু কিছু আলোকিত মানুষ এখনো পথে দেখায় পথহারা দের, আলো ছড়ায় অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষের মাঝে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কায়-মনো-বাক্যে প্রার্থনা করি আলোকিত মানুষদের সুস্থতা-সফলতা আর দীর্ঘায়ু কামনা করে।
– ওয়ালী জসিম
প্রকাশক, আরশীনগর প্রকাশনী