আগের মতো দৌড়ে দৌড়ে আর হাঁটতে পারিনা।তবু যতোটা পারা যায় চেষ্টা করতেই হয় দ্রুত হাঁটার। অথচ আমার চেয়ে ঢের বেশি বয়সী মানুষ দিব্যি ছুটে বেড়ায়। যে অসুখে আমি কষ্ট পাই, দেশে চিকিৎসা হয় না।শুনছি পাশের দেশে গেলেই সেটার ভালো চিকিৎসা হয়। আমার পক্ষে তাও সম্ভব হয়না। সে অন্য গল্প। আজ তাড়া থাকা সত্ত্বেও আবার পিছনে এলাম। একটু নিচু হয়ে লোকটাকে ভালো করে দেখলাম। হ্যাঁ, এই লোকটাই তো ! এই লোকটাই তো কী নাদুসনুদুস ছিল! রাস্তার ধারে বসে জুতা সেলাই করে। আমি নিজেও অনেকবার তার কাছে জুতা সেলাই করেছি। আজ তাকে চিনতে আমার খুব কষ্ট হলো । শুকিয়ে একেবারে তিন ভাগের এক ভাগ। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনার কি অসুখ করেছিল? প্রথমে বুঝতে পারলো না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম আমি। আপনার কি কোনো অসুখ করেছিল ? হ্যাঁ, আমার ডায়াবেটিস হয়েছিলো। আর কিছু না বলে হাঁটা ধরলাম । আহারে, ডায়াবেটিস হলে সবাই দেখি হাঁটাহাঁটি করে। লোকটাকে সকাল থেকে রাত আটটা ন’টা পর্যন্ত কেবল বসে থাকতে দেখি। তারপর নিশ্চয়ই নাওয়া-খাওয়া ঘুম। এসব করে লোকটা হাঁটবে কখন ! ডায়াবেটিস হলে মানুষ এমন শুকাবে? কই, আমি তো দেখিনি ! লোকটার মনে হয় রোগ ধরা পড়তে অনেক সময় লেগেছিলো । হয়তো অভাব কিংবা অজ্ঞতার কারনে । যাই হোক, ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কই ! ভাবতে ভাবতে গতি ধীর হয়ে গেছিলো। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আমার এখন গতি বাড়াতে হবে।
গতি।
থামলেই মৃত্যু।
সবাই কি এমন ছুটে বেড়ায় ?
না, কতজনকেই তো দেখি কতো কম পরিশ্রমে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে । অথচ আমাদের অসুখ নিয়ে ও ছুটতে হয়।
“আহা জীবন!
আহারে জীবন।”
তবুও জীবন।
– শামা আরজু, লেখক