শিপু ফরাজী, বাংলাদেশ থেকে: ভাল নেই ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার কাকড়া চাষীরা। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বাইরে কাঁকড়া রপ্তানী না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে কাঁকড়া শিকারি ও ব্যবসায়ীরা। তারপরেও অনেকে কাঁকড়া শিকার ও ব্যবসার সাথে নিজেকে জড়িত রাখলেও স্থানীয় বাজারে তেমন দাম পাচ্ছে না।
সাগর উপকূলীয় দ্বীপ কুকরী মুকরী । এখানে সব মৌসুমেই কাঁকড়া শিকার বা চাষ হলেও বর্ষার মৌসুমে এ অঞ্চলগুলোতে কাঁকড়া চাষ ও শিকার বেড়ে যায়। উপকূলীয় এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব, স্বল্প পরিশ্রম ও বেশি মুনাফার হওয়া অনেকেই এই সুবিধা জনক পেশাটিতে নিজেকে সামিল করেছে। উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলের ঢালচর, চর পাতিলা, মানিকা ও কুকরী-মুকরীতে নদী ও সামুদ্রিক কাঁকড়া বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করছে কয়েক হাজার পরিবার। কাঁকড়া আহরণ সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই এ পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যান্ত শুকিয়ে যাওয়া খাল, বিল, নদী ও ম্যানগ্রোভ বাগানে শিকারিরা নেমে পড়েন কাঁকড়া শিকারে।
বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল । এখান থেকে আহরিত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ হয়ে গেছে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানী, এর মধ্যে ২/৪টি চালান গেলেও তাহাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে পাইকারদের।
চর কুকরি এলাকার কাঁকড়া চাষী ফিরোজ মেম্বার জানান, তিনি ২০১৩ সালে এফডিবি সংস্থার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে নেটজাল দিয়ে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক মাস পর তিনি কাঁকড়া বিক্রি করে পুঁজির চেয়ে কয়েকগুণ টাকা আয় করেন ।কিন্তু এখন আগের মত দাম পাই না, যা দাম পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। চর কচ্ছপিয়া এলাকার কাঁকড়া শিকারি ইসমাইল মিস্ত্রী বলেন, তারা পরিবারের চারজন মিলে কাঁকড়া শিকার করেন। প্রতিদিন লোহার হাড়াস নিয়ে ভাটায় শুকিয়ে যাওয়া নদী ও খালে কাঁকড়ার গর্ত অনুসন্ধান করে কাঁকড়া ধরেন। কাঁকড়াগুলো আড়তে বিক্রি করে কিন্তু আগের মত দাম পাওয়া যায় না । তাই এ অঞ্চেেল অনেক কাকড়া শীকারা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
চর কুকরী কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, আগে যেখানে এখান থেকে অর্ধ শতাধিক কাঁকড়ার ঝুড়ি বিদেশে রপ্তানী হত এখন সেখানে ৫-১০টির বেশি ঝুড়ি সাপ্তাহের মধ্যে ঢাকা পাঠানো যাচ্ছে না। আবার যদি কোন কারনে এর একটি চালান ফেরৎ আসে তাহলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে দাম পাওয়া যায় না। উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, এ সকল কাঁকড়া বিক্রি করে অনেক পরিবারই এখন সামলম্বী হয়েছেন।
এ অঞ্চলে কাঁকড়া চাষ ও শীকার লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন এনজিও ও মৎস্য অধিদপ্তর কাকড়ার চাষ করার জন্য চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে, উপকূলীয় এলাকার নিচু জমি বা খালে জাল ফেলে কাঁকড়া ধরছে। কাঁকড়া চাষীরা আবার কেউ কেউ চরের খালি জমিতে মাটি তুলে পুকুর খনন করে এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোন নিয়ে কাঁকড়ার চাষাবাদ করছে।