শিপু ফরাজী, ভোলা (বাংলাদেশ) থেকে: জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতবিক্ষত উপক‚লীয় দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। গত কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে ভোলার সাগরকæলের পর্যটন দ্বীপ ঢালচর।সাগর থেকে ওঠে আসা বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিন তলিয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন এ জনপথের ঘরবাড়ি। ইতিমধ্যে জোয়ারের উচ্চতা ও ঢেউ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই সপ্তাহে ইউনিয়নের প্রায় ৫৫ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রহমান বিশ্বাস বলেন, উচ্চ জোয়ার ও ঢেউ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভাঙন বেড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলার ভূমি কার্যালয় (তহসিল) ও বন বিভাগ সূত্র জানায় ভোলার সর্ব দক্ষিনে সাগর মোহনায় চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়ন গত কয়েক বছর ভাঙন মানচিত্র থেকে ইউনিয়নটি হারিয়ে যেতে বসেছে। ভাঙন কারনে ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্কুল মাদ্রাসা ভবনসহ ২০টি সরকারী স্থাপনা মেঘনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়া কোনা পাকা ভবন নেই, নেই সাইক্লোন শেল্টার। ইউনিয়নের মাত্র একটি মৌজা। নাম চর সত্তেন। স্বাধীনতার পর উপকূলীয় বন বিভাগ এখানে ম্যানগ্রোভ (শ্বাসমূলীয়) বনায়ন সৃজন করে। আগে এটি চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের অংশ ছিল। ২০১১ সালে ঢালচর নামে নতুন ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। বন বিভাগের ঢালচর রেঞ্জ সূত্র জানায়, এ রেঞ্জের আওতায় প্রায় ৫০ হাজার ৩২৬ একর জমি ছিল। বনায়ন সৃজন করা হয় প্রায় ৪০ হাজার একরে। মেঘনার ভাঙনে প্রায় ১০ হাজার একর বন বিলীন হয়েছে। এ বনের খাল বন ও জমি থেকে প্রচুর পরিমানে সরকারী রাজস্ব আদায় হয়। ঢালচর ইউনিয়নের সচিব মোকাম্মেল হোসেন জানায় ইউনিয়ন পরিষদের ২০১১ সালে প্রায় ৭ হাজার পরিবার ছিল।
ভাঙনের কারনে যা বর্তমানে ২০০০ এসে নেমেছে। এখানে ভোটার আছে ৪৭০০ জন। সচিব আরো জানায় ঢালচরে তিন দিকে মেঘনার ভাঙনে পাঁচ বছর ধরে সাতটি ওয়ার্ড বিলীন হওয়ার পথে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ আছে। চলতি বছরে ১ হাজার ৫০০ একর জমি বিলীন হয়েছে। তিন শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান ঢালচরে ভাঙনের কারণে দুটি খাল বিলীন হয়েছে অনেক আগে। এসব খালে সারা বছরই মাছধরা নৌকা আশ্রয় নিত। যে খালটুকু আছে, ভাটার সময় খালে পানি না থাকায় নৌকা আশ্রয় নিতে পারছে না।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের রাতে ঢালচরে জেলেদের মধ্যে খালের জন্য হাহাকার দেখা যায়। জোয়ার ওঠার পর জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে গাছের সঙ্গে নৌকা বেঁধে রাখা হয়। ব্যবসায়ীদের মতে মৌসুমে প্রতিদিন এ ঢালচরে ৪০-৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ সালাম হাওলাদার বলেন, ভাঙ্গনের কারনে ইউনিয়নে মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। এখনো লোকালয় জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ভাঙনপ্রবণ এ ইউনিয়নে জমি ও লোকসংখ্যা কমছে। পর্যটন ও মৎস্য ব্যবসার কারনে ইউনিয়নটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ । তাই এর যথাযথ সংরক্ষন করা দরকার।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন ঢালচর ভাঙনপ্রবণ ইউনিয়ন। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিয়নে এখন কি অবস্থা তাঁদের জানা নেই। ঢালচরের তিন পাশে ব্লক বস্তা পেলে ভাঙন রোধ প্রকল্পে একটি প্রকল্পের নকশা তৈয়ার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। করোনার কারনে তার অগ্রগতি হচ্ছে না।