একটা ঘরের মধ্যে আটটি বানর রাখা হলো। ঘরের মাঝখানে একটি সিঁড়ি রেখে তার ওপরে এক কাদি কলা ছাদের সিলিং থেকে হুক দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হলো।
যতবারই একটি বানর সিঁড়ি বেয়ে উঠে সিলিং-এ ঝুলানো কলা পাড়তে চেষ্টা করে; ততবারই সব বানরের গায়ে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়; আর এই ব্যাপারটা বানরদের জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে।
কিছুক্ষণ পর দেখা যায়; যখনই একটি বানর সিঁড়ি দিয়ে উঠে কলা পাড়তে চেষ্টা করে; অন্য বানরেরা তখন গায়ে ঠান্ডা পানি ছিটানো এড়িয়ে যেতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে সচেষ্ট বানরটিকে পিটুনি দেয়। কিছুক্ষণ পর আটটি বানরের আর কাউকেই সিঁড়িতে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যায় না।
এরপর আটটি বানরের একটিকে কক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে নতুন একটি বানরকে প্রবেশ করানো হয়। নতুন বানরটি সিঁড়ির ওপরে ঝুলানো কলা দেখে; কিন্তু অন্য সাতটি বানরকে তা পেড়ে আনার চেষ্টা করতে দেখে না। সুতরাং নতুন বানরটি সিঁড়িতে উঠতে চেষ্টা করে আর অন্য সাতটি বানর তাকে নামিয়ে এনে পিটুনি দেয়। নতুন বানরটি এই পিটুনির কারণ বোঝে না। কিন্তু সিঁড়িতে ওঠা থেকে বিরত থাকে বাধ্য হয়ে।
পুরনো সাতটি বানরের আরেকটিকে কক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে আবার একটি নতুন বানর প্রবেশ করানো হয়। ঝুলন্ত কলা সংগ্রহে কাউকে
সিঁড়িতে উঠতে না দেখে নবাগত বানরটি অবাক হয়। তবে সে নিজেই সিঁড়িতে উঠতে চেষ্টা করে। অন্য সাতটি বানর তখন তাকে ধরে পিটিয়ে দেয়। কক্ষে আসা নতুন বানরটি এই পিটুনির কারণ বোঝে না; কিন্তু বাধ্য হয়ে কলা সংগ্রহ থেকে বিরত থাকে। পুরোনো ছয়টি বানরের মাঝ থেকে আবার একটিকে কক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে নতুন একটি বানরকে প্রবেশ করানো হয়।
নবাগত বানর কক্ষে ঢুকেই যথারীতি সিঁড়ি দিয়ে উঠে কলা সংগ্রহের চেষ্টা করে। বাকি সাতটি বানর তাকে পিটুনি দেয়। সম্প্রতি প্রবেশ করানো দুটি বানরও এই পিটুনিতে অংশ নেয়; যদিও তাদের গায়ে কখনোই ঠান্ডা পানি ছিটানো হয়নি। এইক্ষেত্রে যেহেতু তাদের পিটুনি দেয়া হচ্ছে না; তাই পুরোনো পাঁচটি বানরের দেখাদেখি পেটানোর কারণ না জেনেও তারা দু’জন নতুন বানরটিকে পেটানোতে অংশ নেয়।
এইভাবে এক এক করে পুরোনো সব বানরকে সরিয়ে ফেলা হয়। ঘরে তখন সাতটি নতুন বানর; যাদের গায়ে কখনোই ঠান্ডা পানি ছিটানো হয়নি। তাদের কেউই আর সিঁড়িতে ওঠার চেষ্টা করে না; নিষ্ক্রিয় থাকে। কেবল সব শেষে প্রবেশ করানো অষ্টম বানর সিঁড়িতে উঠতে চেষ্টা করলে সবাই মিলে তাকে পিটিয়ে দিতে সক্রিয় হয়; কেন পেটাচ্ছে তার কোন কারণ না জেনেই।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া