ঘটনাটি তিন বছর আগের। দেশে থাকতে বাজারে গেলে যে দুইজন আমাকে পেড়ে ফেলতে দক্ষ ছিল তার একজন অমুল্য অন্যজন জীবন।
জীবন একজন মাছ বিক্রেতা। যদিও মাছ বাজারে তার জাতকুল সবই গেছে,কারন ? কারন অমুল্যের কথায় “হে তো হগল ব্যবসা করে,যখন যা পায়, চানাচুর, হাড়ি-পাতিল,এমুন কি সিল্ক শাড়ির ব্যবসা ও হে করে ! হের কি আর জাইত আছে ?”
জাত গেলেই বা কি ? তার ব্যাবসা বেড়েই চলেছে | এখন বনানী বাজারে তার দুটি দোকান |
গ্রাহক পটানোর তার বেশ কয়েকটি স্টাটেজি ছিল, তার একটা দিয়ে আমাকে পেড়ে ফেলত –” আপনে স্যার আমার লাইগা পয়া | আপনে যেইদিন আমার থাইক্যা মাছ কিনেন,হেইদিনই আমার সাইথ ভালা যায় |”তার সাইথ যায় ভালো কথা,কিন্তু জীবনের কাছ থেকে মাছ কিনলে আমার ‘সাইথ’যে সবসময় ‘ভালা’ যায়না এটা তারে কে বুঝাবে ?
আজকে যথারীতি জীবন আমাকে পেড়ে ফেললো | মাছ দুটি কেটেকুটে প্যাকেট বন্দি করে আমাকে গছিয়ে দিল এরপরে তার সাথে টাকা নিয়ে ধস্তাধস্তির সময়ই জীবনকে পাকড়ালো টেলিভিশনের রিপোর্টার | ঘটনা কি ?
না,উনারা মাছেরবাজারের খবর নিতে এসেছেন | যে জীবন বাবাজীবন এতক্ষন ধস্তাধস্তিতে ও পঞ্চাশ টাকা ছাড়তে রাজি হয়নি,সে কোঁচড় থেকে একশো টাকা আমার হাতে গছিয়ে দিয়ে হাস্যমুখে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাজারের বাকি জাতকুলওয়ালা ধীবরদের কুটিল চোখগুলো কে উপেক্ষা করে জাতহারা জীবন ‘হেশোরাম হুঁশিয়ারের’ মত হুশিয়ার হয়ে মাছের বর্তমান আহারাহা দামের কারন কি প্রকারে শুধু বাপডাদার পেশা টিকিয়ে রাখার এই কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত তার দার্শনিক ব্যাখ্যা দিল | বাকিদের গালে মাছি! জীবনের সামনে থাকায় টিভি ভাই আমার ও দশ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকার নিলেন-আমি কৃতার্থ হলাম |
পরে জীবনকে বললাম,’আসলেই আজকে আপনার সাইথ ভালো |’
– ‘গরিবের আর সাইথ ! ব্যাডার পাল্লায় পইড়া আমার একশো ট্যাকা লস – আপনার একশো ট্যাকা লাভ | আবার টিভিতে কথা ও কইলেন |
সাইথ তো আইজকা আপনারইা ভালা স্যার !’
– ফয়েজ নূর এলাহী, লেখক