নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা থেকে
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাঁকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার অধিক সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা, পুলিশ সদস্য কর্তৃক নাজেহাল এবং পরে রাতে শাহবাগ থানায় নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটসঅ্যাক্টে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংগঠনের এক প্রেস বিবৃতিতে গণমাধ্যম সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ৈ বলা হয়, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম পেশাগত কাজে সোমবার দুপুরের পরসচিবালয়ে গেলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে তাঁকে আটকে রাখা হয়। এ সময় তাঁরমুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। যে কক্ষে রোজিনাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কক্ষের বাইরেও কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাহারারত ছিলেন। ঘটনার বিষয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা কয়েক দফা স্বাস্থ্যসেবা সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি, সাংবাদিকদের তাঁর সাথে দেখা করতেও দেয়া হয় নি। রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদেরকে পরিস্কার করে কিছু বলাও হয়নি। একপর্যায়ে রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় এবং রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে এবং সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোহয়েছে। মংগলবার সকালে রোজিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত পুলিশের আনীত রিমান্ড আবেদন এবং রোজিনার আইনজীবীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। জামিনের শুনানীর পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২০ মে, ২০২১, বৃহস্পতিবার।
বিবৃতিতে উল্লেখ্য করা হয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রোজিনা ইসলাম কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, একজন সাংবাদিককের ওপরে যে আচরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অন্যায় ও অনভিপ্রেত। সরকারের নীতি যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সেখানে এ ধরণের ঘটনা প্রমাণ করে যে, এদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও তথ্য পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগে রোজিনা ইসলাম ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেই কাজের সূত্রেই তিনি সেদিন সচিবালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সিনিয়ার সাংবাদিক রোজিনাকে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আটকে রেখে হেনস্তা করা, নাজেহাল করা ও পরবর্তীতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা, সারারাত ধরে শাহবাগ থানায় আটকে রাখা এবং গ্রেফতার দেখানোর ঘটনায় এমএসএফ তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এমএসএফ অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।