সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট
রাষ্ট্র ও বর্তমান সরকারের মাফিয়া চরিত্র নির্বিঘ্ন করার স্বার্থেই সাংবাদিক রোজিনা এবং এডভোকেট শাহ আলমের উপর হামলা, মামলা হয়েছে বলে রাষ্ট্রচিন্তা বলেছে।
মংগলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রচিন্তা বলেছে, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি গতকাল ১৭ই মে সচিবালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর সরকারী কর্মচারীরা হামলা করে। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় প্রায় ৫ ঘণ্টা অবৈধ এবং অমানবিকভাবে আটকে রেখে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিপীড়ন করা হয়। এরপর তিনি আরো অসুস্থ হয়ে গেলেও চিকিৎসা সেবা না দিয়ে থানায় পাঠানো হয়। এরপর পুলিশ তাঁর উপর সংঘটিত এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নির্যাতনকারীদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁকে কোর্টে চালান দেন। সর্বশেষ, আদালতও একই ধারাবাহিকতায় তাঁকে নিবর্তনমূলক আইনে করা মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ করেন। সচিবালয়-পুলিশ প্রশাসন ও আদালত মিলে যখন একজন সাংবাদিককে সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন করেন, তখন এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, এই নির্যাতন ও দুনীর্তিপরায়নতা কোন বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়; বরং এই দুর্নীতি ও কাঠামোগত স্বৈরতন্ত্রই বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ১৬ মে সাতক্ষীরায়। সেখানে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ আলমের উপর মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাঁর অফিসে হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
রাষ্ট্রচিন্তা তাদের বিবৃতিতে আরো বলে, ২০২০ সালের শুরু থেকে যখন করোনা মহামারী নিয়ে যখন সারাদেশ আতংকিত, তখন থেকেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের প্রশ্রয়ে এবং তত্ত্বাবধানে সর্বোচ্চ পরিমাণে লুটপাট এবং দুর্নীতির উৎসব শুরু হয়ে যায়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এবং আরো কয়েকজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের রিপোর্টে আমরা তা দেখেছি। এছাড়া দূর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের তথ্য ও বিশ্লেষণেও আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। আমরা আরো উদ্বিগ্ন যে, এর একটি রিপোর্টেরও প্রতিবাদ না করে বা বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে রিপোর্টগুলোর তথ্যকে ভুল প্রমাণ না করে, প্রকারান্তরে দুর্নীতির অভিযোগ মেনে নিয়েও সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। অভিযুক্ত কারো বিরুদ্ধে তদন্ত, শাস্তি কিছুই হয় নাই। বরং অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া, লেখক মুশতাক আহমেদ, সাংবাদিক কাজলসহ অনেককেই আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাসের পর মাসের জেলে নিপীড়িত হতে দেখেছি। নিপীড়নের এক পর্যায়ে লেখক মুশতাক আহমেদকে জেলে মারা যান, যা কার্যত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।
রাষ্ট্রচিন্তা মনে করে এ পর্যায়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর হামলা এবং মামলা সরকার-রাষ্ট্রের এই খুনে মনোভাবেরই ধারাবাহিকতা। রাষ্ট্রীয়, সরকারী, ক্ষমতাসীন মাফিয়াদের লুটপাট এবং দুর্নীতিকে আরো নির্বিঘ্ন করার প্রয়াস। তারা অবিলম্বে রোজিনা ইসলাম, এডভোকেট শাহ আলম সহ এমন সকলের উপর রাষ্ট্রীয়, সরকারী এবং ক্ষমতাসীনদের হামলার বিচার দাবি করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে করা নিপীড়নমূলক আইনের মামলায় জামিন, মুক্তি এবং ক্ষতিপূরণ দাবী করে সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল এবং এ ধরণের আইন বানানোর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেন। দেশের আপামর জনসাধারণকে এই দাবীগুলো নিয়ে রাজপথে কিংবা নিজ নিজ অবস্থান থেকে জোর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যও রাষ্ট্রচিন্তা জোর আহ্বান জানিয়েছে।