– রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
(এক) করোনা আসার পর থেকে সারাক্ষণ বাড়ীতেই থাকি। গত লেখায় লিখেছিলাম লন্ডনের অদুরে মিল্টন কিংস থেকে ফেরৎ পাঠিয়েছিল পুলিশ, সেই থেকে কোথাও বের হতে ইচ্ছে করেনা। তবে বিকেলে হাটতে বের হই। আমার বাসা থেকে লন্ডনের টেমস নদীর দুরত্ব বেশী নয়। এক মিনিটের রাস্তা। বাসা থেকে টেমস নদীকে দেখা যায়। শান্ত টেমসের পানি কেমন যেন চিকচিক করে। আকাশ ও কি পরিস্কার। আগে দেখেছি আকাশের একেক দিকে একেক রঙ। এখন দেখি একই রঙে রাঙানো সেই আকাশ। করোনার পর সব কিছুই বদলে গেছে। এত দ্রুত বদলে গেল পৃথিবী? আজ থেকে ২/৩ মাস আগেও মানুষ কি রং ঢং নিয়ে কথা বলতো। অনেকের কি অহংকার, মাটিতে পা রাখতে যেন লজ্জাবোধ করতো। এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা। কি থেকে যেন কি হয়ে গেল। পুরো পৃথিবী এক নিমিষেই বদলে গেল? তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কে বদলে ফেললো এ পৃথিবী? কার এত বড় সাহস? কোনো কিছুই যেন মানছেনা। কে এই সমাজ- পৃথিবী পরিবর্তনকারী, নাম কি তার? কার্ল মার্কস? লেনিন? তাকে কিছু করা যায়না? র্যব, পুলিশ, বিডিআর আর্মি ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগ মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনা, গনতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া সবাই কেমন যেন চুপসে গেলেন। দুর্দান্ড প্রতাপশালী ট্রাম্প বাবা, বরিস বাবা, পুতিন বাবা, কোনো বাবার কোনো কিছুই যেন কাজে আসছেনা। লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটির বেশ কিছু মানুষ ফেইসবুকে সাধনা ঔষাধালয়ের মত জীবনের শেষ চিকিৎসা মনে করে করোনা ভাইরাসের ঔষধও দিয়েই যাচ্ছে। পাঠকদের মনে আছে-কি-না জানিনা আগে পুরুষদের ধ্বজভঙ্গ রোগের ঔষুধ বিক্রি করতো এক শ্রেণীর ক্যানভাসাররা। বলতো জীবনের শেষ চিকিৎসা মনে করে আমার এই কোম্পানীর ঔষধ যদি আপনি টেস্ট করেন তাহলে আপনার——লৌহ দন্ডের ন্যয় শক্ত হয়ে যাবে। ইদানিং ফেইসবুকে এবং লন্ডনে বাঙালী টিভি চ্যানেলগুলোতে করোনা ভাইরাসের প্রতিকার শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ট। ২/৩ দিন আগে আমার এক পাঠক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনার লেখায় সব কিছু থাকে কিন্তু মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই কেন? বলেছিলাম সরকার যা বলে তা তো আসল ফিগার না। আসল ফিগার অনেক বেশী। তাই আমি মিথ্যা কোনো তথ্য দিতে চাইনা। পাঠক বললেন তাহলে ফেইসবুক যে ফাটিয়ে ফেলছে এক শ্রেণীর মানুষ তাদেরকে কি বলবেন? বলেছি বাংলাদেশে বলে হাতুড়ী ডাক্তার আর এ দেশে বলে বুডু ডাক্তার। অর্থ সমানই। ফেইসবুকে যারা এসব করছে তারা কি একটু মুক্তি দিবেন? ফেইসবুকে যার যা ইচ্ছে লিখছে বলছে। আজ এ করোনার ঔষধ বের করে ফেলছে- কাল এই দেশ বের করে ফেলছে- আর কোনো চিন্তা নেই। এখন বৃটেনও ভেসকিন বের করে ফেলেছে। আমার সমস্যা হচ্ছে আমি বুঝে বিপদে পড়েছি- না বুঝলে আমিও ফেইসবুকে দোকান একটা খুলে বসতাম। কেউ কেউ এ রকম ও বলে আরে করোনাকে যদি আপনি রোগ মনে করেন তাহলে রোগকে কি বলবেন? শক্ত থাকবেন। মনকে দুর্বল করবেননা। যার করোনা হয়েছে সে বুঝে কত ধানে কত চাউল? এমনভাবে করোনা মানুষকে এট্যাক করে যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন শুধু তারাই বলতে পারেন। আসলে কথা বলতে তো পয়সা লাগেনা। লন্ডনে আমার প্রিয় একজন মানুষের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল গত বছর, তিনি যখন হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে, তখন তার এক বান্ধবী বলেছিল তুমি রবীন্দ্রসংগীত শুনবে। তিনি ঘটনাটি আমাকে বলে বলেছিলেন ফয়সল ভাই মানুষ কিভাবে এ রকম কথা বলে? আমার মরণ ব্যাধি ক্যন্সার আর সে কি-না বলে আমি রবীন্দ্র সংগীত শুনবো। কারো পৌষ মাস- কারো সর্বনাশ। কেউ বিয়ের সাজে সাজতে থাকে, কেউ বা কাফনের কাপড় খোজতে থাকে। এটাই তো জীবন। এখন সেই জীবন থেমে গেছে। যে জীবনে নেই কোনো প্রাণের উচ্ছাস, নেই কোনো জীবনের স্পন্দন। চারিদিকে এক করোনার গন্ধ। চারিদিকে মৃত্যুর সংবাদ। মা ছেলেকে দেখতে যেতে পারেনা। কারো রোগ হলে তাকে দেখা যাবেনা। তাকে ছোয়া যাবে-না। আমার মনে পড়ে আবু সালেহ সাহেবের সেই বিখ্যাত ছড়া। তিনি লিখেছিলেন “ধরা যাবেনা ছোয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা। করনাকে ধরা যাবে-না, ছোয়া যাবে-না-কিছু বলাও-যাবে-না। অনেক দিন আবু সালেহ ভাইর কোনো খবর নেই। আমার সাথে পরিচয় হয়েছিল ৮০ দশকের মাঝামঝি সময়ের দিকে। মোশতাক হোসেন জাতীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন, মোশতাক ভাই একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সালেহ ভাইর সাথে। মোশতাক ভাই এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুখোড় ছাত্র নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সিলেটে চলে গিয়েছিলেন। জৈন্তা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন অনেক দিন। তারপর শুনেছি মোশতাক ভাই পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। মোশতাক ভাই বুদ্ধিদীপ্ত রাজনীতিবিদ ছিলেন। একদিন আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধবরা মোশতাক ভাইকে ধরেছিলো তিনি কেন রাজনীতি থেকে সরে দাড়ালেন? মোশতাক ভাই বলেছিলেন সৎ রাজনীতি বাংলাদেশে অনুপস্থিত। আল্লাহ মোশতাক ভাইকে বেহেশত নসীব করুন। আমীন।
(দুই) সে যাক গত লেখার পর হুমকি পেলাম। আমার মেসেঞ্জারে ফেইক আইডি দিয়ে একজন হুমকী দিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি কে? তিনি উত্তর দিয়েছেন তিনি নাকি আমার দুলাভাই। তারপর তিনি লিখেছেন তিনি নাকি ডন। মনে মনে বলি আমার চেহারা তো দেখার কথা। ডন কাকে দেখতে মনে হয়। তা নাইবা বললাম। তবে আমি এসব হুমকি ধামকি গত ২০/২৫ বছর থেকে শুনে আসছি। এসব পরোয়া করিনা। আর লন্ডনে থেকে হুমকি ধামকি দেয়। ক্ষমতা তো দেখাইনি কাউকে, মেইনষ্ট্রীমে বিভিন্ন উচ্চ পদে সাদা কিছু বন্ধু বান্ধবতো গত ৩০ বছরে বৃটেনে গড়ে উঠেছে তাই-না? আমি বা আমার পরিবার তো আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি করেনা। আমি সবিনয়ে বলি আমার সাথে যদি এই বৃটেনে কেউ ফেইস করতে হয় প্রথমত লেখার ফেইস লিখেই করতে হবে। দ্বিতীয়ত শক্তির দিক থেকে যদি ফেইস করতে হয় তাহলে বলতে হবে কোথায় কখন আসতে হবে। কারন আমি বাংলাদেশে কিছুই করতে পারবো-না। তবে বৃটেনে শক্তি দেখিয়ে লাভ নেই। মনে আছে ২০১২ সালের কথা? বৃটেনের রাজাকাররা আমার টেলিভিশন ষ্টুডিওতে হামলা করেছিল। তখন গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল ঢাকায়। আমি সেই মঞ্চের খবর চ্যানেল আই ইউরোপে প্রচার করেছিলাম। কেন করেছিলাম- সেটার জন্য আমার ষ্টুডিও উড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে এসএমএস করে মিছিল নিয়ে এসেছিলেন তারা। তখন অবশ্য আজকের যারা লন্ডনে চেতনার ব্যবসায়ী তারা ছিলেন না। তৎকালীন হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস সাহেব এসেছিলেন আমাকে দেখতে। এক মাসে অফকমের চিঠি আমি রিসিভ করেছিলাম সর্ব্বোচ্চ। আমার অফকমের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মিজারুল কায়েস সাহেব বলেছিলেন তিনি কি অফকমের সাথে কথা বলবেন? বলেছিলাম লাভ নেই। তারপরও তিনি ফোন করেছিলেন। বৃটেনের অফকম অথরিটি মিজারুল কায়েস সাহেবকে পাত্তা দেয়নি। অফকম আমাকে ডেকেছিল তাদের অফিসে। গিয়েছিলাম, সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম লন্ডনের আইনজীবি এবং বাংলা পোষ্টের সম্পাদক সাংবাদিক ব্যারিষ্টার তারেক চৌধুরীকে। অফকম পরিস্কার ভাষায় বলেছিল তোমার এ অবস্থা বেশীদিন চলতে থাকলে আমরা লাইসেন্স বাতিল করতে বাধ্য হবো। আমি মিটিং শেষ করে বাড়ী ফিরলাম। মাস খানেক পর আবার ডেকেছিল। সে সময় নিয়ে গিয়েছিলাম আমার অনুজ ব্যারিষ্টার রেজা চৌধুরীকে। এক মাসের মধ্যে দু-বার মিটিং করতে হয়েছিল অফকমের সাথে। সে যাক, চ্যানেল আই এবং আমার সাংবাদিকতা নিয়ে আমি দিনের পর দিন লিখতে পারবো। সেটি লিখে কি লাভ? যা হবার তাই হয়েছে। করার কিছুই নেই। তবে যারা হুমকি ধামকি দেন তাদেরকে বলি আমাকে দয়া করে হুমকি ধামকি দিবেন-না। কারন আমি গাঙ্গে ভেসে লন্ডনে আসিনি। আর লন্ডনের পুলিশ তো ঢাকার পুলিশের মত না। যে ছাত্রলীগ অথবা আওয়ামীলীগ করে। আমি অনেকের অনেক কিছুই জানি। অনেকেই ফেসে যাবেন কিন্তু—————-। আওয়ামীলীগের অনেক মন্ত্রী এমপি তো লন্ডনে টাকা পাচার করেছেন। বিএপিরও আছেন অনেক। কেউ কেউ তো ১০ পার্সেন্ট ১১ পার্সেন্ট দিয়ে কাজ লন্ডন থেকে উদ্ধার করেন। সবই জানি। আবারো বলছি হুমকি ধামকী এসব দিয়ে আমাকে লাভ নেই। কারন আমি অবৈধভাবে কারো পেট পোলাইনি। সরকারের ব্যাপারে যা লিখছি কেউ যদি বলেন আমি অন্যায় লিখছি এবং কেউ প্রমান করতে পারেন আগামীকাল থেকে লিখবো-না। লেখালেখি বাদ দিয়ে দিব।
(তিন) গরীবের ডাক্তার মইনুদ্দিন সাহেবকে নিয়ে বাংলাদেশে অনেকেই লিখেছেন। ফেইসবুক ফাটিয়ে ফেলেছেন, কেউ কেউ। কেউ বা প্রশ্ন তুলেছেন ডাক্তার মইনুদ্দিনের রাজনৈতিক পরিচয়ের। আচ্ছা মানুষ এত নীচে নামে কি করে? একজন মানুষ একজন ডাক্তার তা ও সহকারী অধ্যাপক একটি মেডিকেল কলেজের। তিনি চিকিৎসা পাবেননা তা তো হয়-না। অনেকেই বলতে পারেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসের সাথে মইনুদ্দিন সাহেবকে তুলনা করছি কেন? তুলনা করছি-না। ঘটনাটি কাকতলীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন বরিস জনসন অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার অবহেলা ছিল। আমি জানিনা সেটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কি-না? সেটি ডাউনিং স্টিটের পক্ষ থেকে কি-না? সেটি তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক থেকে কি-না? যেহেতু রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ নীতিনির্ধারক তার চিকিৎসায় অবহেলা হবে কেন? ডাক্তার মইনুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ভায়রা যিনি নিজেও ডাক্তার তারা কেন ২৪ ঘন্টা দেরী করলেন? কেন একজন চিকিৎসকের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ অবহেলা করা হলো? বরিস জনসন যখন প্রচন্ড অসুস্থ তখন তার ডাউনিংষ্ট্রীটে কোনো অক্সিজেন ছিলনা। তার টেম্পারেচার মাপার মত যন্ত্রটিও ছিলনা। প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যত স্ত্রী কেরি সিমন যিনি নিজেও অসুস্থ ছিলেন। বরিস জনসনকে ফেলে তিনি সাউথ লন্ডনের বাড়ীতে চলে গিয়েছিলেন। তাহলে বরিস জনসনকে দেখার মত লোকও তো ছিলনা। বরিস যেখানে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন সেটি তো পৃথিবীর নামকরা হাসপাতালের একটি। সেন্ট টমাস হসপিটেলে বরিস জনসনের চিকিৎসা হয়েছে। দুইজন নার্স সার্বক্ষনিক পাহারা দিয়েছেন বরিস জনসনকে। কিন্তু ডাক্তার মইনুদ্দিন? তিনি এয়ার এম্বুলেন্স পাননি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন এসি ল্যন্ড এয়ার এম্বুলেন্স পান কিন্তু মইনুদ্দিন পাননি। এসি ল্যান্ড পেতে পারেন, যে কেউ চিকিৎসা সেবা পেতে পারে। চিকিৎসা সেবা তার অধিকার। সে অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করবেন একজন মানুষকে? আমি বুঝিনা সিলেটের মত বিভাগীয় শহরে এটা নেই ওটা নেই বলবে কেন? এক করোনা ভাইরাস সবার থলের বিড়াল বের করে দিচ্ছে। হায়রে বাপরে বাপ- আওয়ামীলীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে হাটছে। আওয়ামীলীগের চামচাদের এসব কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। কোন এক মন্ত্রী বলেছিলেন দশ বছর সময় দেন বাংলাদেশ আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে। এ কথা শুনার পর আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি আমি পাগল না মন্ত্রীরা পাগল? কে ভর্তি হবে পাবনার হেমায়েতপুরে আমি না মন্ত্রী? না আওয়ামীলীগ? আমাকে অনেকে বলে আরে আপনি সারাক্ষন আওয়ামীলীগের দোষ খুঁজে বেড়ান। একেকটা মন্ত্রী যে কোথা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধরে নিয়ে আসেন? ওদের মন্ত্রীত্বের কোনো যোগ্যতা আছে? বাংলাদেশটা যদি ইউরোপের কোনো দেশ হতো তাহলে যাদেরকে সুশীল বলে গন্ড-মূর্খরা সমালোচনা করে তারাই মন্ত্রী হতো এমপি হতো। আর বর্তমান মন্ত্রী সভার চার-পা -ওয়ালারা মুদীর দোকানে চাকরী পেত কি-না-সন্দেহ আমার।
(চার) সে যাক মইনুদ্দিন সাহেবকে বাচানো যেতো যদি তাকে এয়ার এম্বুলেন্স দেয়া হতো, কেন দেয়নি এয়ার এম্বুলেন্স? যিনি দেননি তিনি কি আওয়ামীলীগ করেন? এটা একটি কথা? তা ছাড়া পরিবার যখন দেখলেন তাকে এয়ার এম্বুলেন্স দেয়া হচ্ছে না তখন কেন তারা সিলেটে সময় নষ্ট করলেন? ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্তটি নিতে দেরী করেছেন। রোগীদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করলে রোগী তো মৃত্যৃর কোলে ঢলে পড়বে। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর চারেক আগের কথা- আমার এক আত্মীয় লন্ডনের এক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর রোগীকে কোনো চিকিৎসা দিচ্ছেনা, আমি গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। দেখি তিনি বেডে শুয়ে আছেন। আমাকে বললেন আমি বয়স্ক মানুষ দেখে ওরা চিকিৎসা করতে চায়না। আমি দেরী না করে তাকে কোলে করে বের হবো এ-সময় একজন ডাক্তার এসে বলেছিলেন আরে কি করছো তুমি? বলেছিলাম চিকিৎসা যখন তোমরা করতে চাওনা তাহলে এ রোগী এখানে শুয়ে থাকার দরকার কি? তোমাদের সময় নষ্ট উনারও সময় নষ্ট। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেছিলেন তুমি কি আইন কানুন কিছু জানো? বলেছিলাম আইন আমাকে শিখাতে যেয়ো-না। বলেছিলাম তুমি সরে দাড়াও। আমি আমার রোগী নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে চলে যাবো। ডাক্তার আমাকে ধরে বলেছিলেন রোগীকে বেডে নিয়ে যেতে, এবং আমাকে বললেন আজ রাতেই আমরা তাকে অন্য হসপিটেলে পাঠিয়ে দিব। আমি বলেছিলাম কখন পাঠাবা। বলেছিল রাতে। আমি বলেছিলাম যত সময় না পাঠাবা তত সময় আমি আছি। রাতে অন্য হাসপাতালে রোগীকে পাঠানো হয়েছিল এবং ঐ রাতেই ঐ রোগীর অপারশেন হয়েছিল। যদি ঐ রাতে অপারেশন না হতো তাহলে রোগী মারা যেতেন। এবং ঐ অপারেশন অনেক ব্যয় বহুল ছিল। অতএব বৃদ্ধ মানুষ মরলে মরে যা-এরকম একটি ভাব পৃথিবীর অনেকগুলো সরকারী হাসপাতালে রয়েছে।
সে যাক মইনুদ্দিন সাহেবের পরিবার সহ অনেকেই এ ক্ষেত্রে হায়াত মউত আল্লার হাতে ছেড়ে দেন। হ্যা আমিও আল্লাহ খোদা বিশ্বাস করি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলে তো ঘটনা যা ঘটার ঘটে যাবে। তবে যারা ডাক্তার হয়ে আরেকজন ডাক্তারের প্রতি অবহেলা করেছেন তারা আসলে মানুষের বাচ্চা নন। ডাক্তার মইন চলে গেছেন কিন্তু বাংলাদেশের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা যে দলীয়করন হয়েছে সেটি তার মুত্যুর মধ্যে দিয়ে আবারো প্রমাণিত হলো। তিনি অভিযুক্ত করে গেলেন দলীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাকে!!। তার মৃত্যু আবারো প্রমান করে গেল যে আওয়ামী ডাক্তারদের হাতে বিএনপি অথবা জামাতী ডাক্তাররা নিরাপদ নয় বাংলাদেশে, এবং আওয়ামী ডাক্তারও নিরাপদ নন বিএনপি জামাতী ডাক্তারদের কাছে। শুনেছি কাক কাকের মাংস ভক্ষন করেনা। কিন্তু বাংলাদেশে সবাই সবার মাংস খেতে পছন্দ করে। অদ্ভুত এক সমাজ ব্যবস্থার বাসিন্দা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। আবার কিছু লিখলে আত্ন সম্মানে ধরে। অবশ্য গরীবের আত্ন সম্মান একটু বেশী থাকে। ডাক্তার মইনের জন্য আমার খারাপই লেগেছে কিন্তু করার কিছুই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি মইনের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা আরেক ধরনের ভন্ডামী। কিছু হলেই বলা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাযিত্ব নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমনন্ত্রী তো সাগর-রুনির ছেলের ও দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কেমন আছে সাগর রুনির ছেলে মেঘ? মেঘই তো নাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি সময় হয় মেঘকে এক নজর দেখতে? আমার তো মনে হয় সে সময় নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। থাকবে কি করে? রাষ্ট্রের এত কাম কাজ করে মেঘের খবর নেওযার সময় কোথায়? আর মেঘ তো একটা দুটা নয়, হাজার হাজার মেঘ। হাজার হাজার ঘটনা দুর্ঘটনায় ঠাসা বাংলাদেশ। আজ আবার শুনলাম কোন এক ফকির তার জমানো দশ হাজার টাকা দিয়ে ফেলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। এখন আবার প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন সেই ফকিরের। আমার কাছে এ গুলো খুবই সস্তা মনে হয়——।
আমি একটা অনুরোধ করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, অনুরোধ হচ্ছে আপনার এমপি শেখর সাহেব এবং অপু উকিল ম্যডাম যে কাজল নামের একজন সাংবাদিককে ধরে নিয়ে গুম করেছে তাকে কি ছাড়তে পারবেন? না শেখর- অপু উকিলদের কাছে সাংবাদিকরা ধরা? শেখর সাহেবের সাহস তো কম নয়। মানব জমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সেদিন আমাকে একজন বলেছেন আপনার তো টেলিভিশন বন্ধ করেছে সরকার। এখন লেখালেখি ও বন্ধ করবে। বলেছি বন্ধ করুক- করেনা কেন? আমি তো চাই বন্ধ করতে। মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতি ভাই আবার শেখর সাহেবের বাবার গুন গান গেয়ে পত্রিকায় কলাম লিখেন। বাপ ভালো হলে যে ছেলে ভালো হবে এমন তো কোন কথা নেই। অনেক সময় দেখা যায় বাপ ছিলেন বায়তুল মোকারম মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী। ছেলে যে ক্যাসিনোর নিয়মিত কাষ্টমার সেটা কে কাকে বুঝাবে? বাবা ছিলেন পীরে আলেম দরবেশ। ছেলে পাপিয়ার অন্ধকার জলসার নিয়মিত অতিথি। করার কিছুই নেই।
শেষ কথাঃ শুনলাম ইন্ডিয়ান আর্মি নাকি বাংলাদেশে এসে করোনার ব্যাপারে এডভাইস দিবে! কি এডভাইস দিবে তারা? যেখানে ভেক্সিন নেই, করোনার কোনো ঔষধ নেই সেখানে কিসের এডভাইস? আমি যে সব খবর শুরু থেকেই পেয়েছিলাম সে সব খবরের ভিত্তিতেই লিখেছি। সেখানে অনেকেই আমার উপর রাগ করেছেন। কেউ কেউ গালিও দিয়েছেন। আমি বাংলাদেশে কতজন আক্রান্ত হবে কত জন মারা যাবে সে হিসেবে যেতে চাইনা। আমেরিকার হিসেব যদি ধরি মার্চ মাসের শেষের দিকে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন। এখন সেটি দাড়িয়েছে চার লক্ষ ষাট হাজারে। বিবিসি বাংলা বলেছে যে রিপোর্ট ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনস-হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রকাশ করেছেন সেটি যদি সত্যি হয় তাহলে বাংলাদেশে তো লোকই পাওয়া যাবেনা। তবে আমি কামনা করি তাদের এ রিপোর্ট ভূল প্রমাণিত হবে। তারা বলেছে ১৩ কোটি মানুষ করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে- বাংলাদেশ যদি কোনো উদ্যেগ না নেয়। ব্রাক- নর্থ সাউথ- এবং জন-হপকিন্স এর রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সেটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ব্রাক বিবৃতি দিয়ে বলেছে এটি তাদের গবেষনা নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্রাক ভয় পেয়েছে। অথবা বলা হয়েছে তোদের এই গবেষনা সরিয়ে ফেল নতুবা তোদেরকে শেষ করে দিব। ব্রাক বলার আগেই তো ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গেনাইজেশন বলে ফেলেছে কি ঘটবে বাংলাদেশে। লন্ডনের এক সাইন্টিষ্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম করোনা নিয়ে অথেন্টিক কিছু নিউজ পেতে চাই। কোথায় গেলে পাবো? তিনি বললেন হার্ড ইমিউনিটি নামে সার্চ করলে একটি সাইট আসবে ওখানে গেলে সব পেয়ে যাবেন। গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখলাম। পড়লাম, পড়ে মনে হয়েছে কিছুই নেই। যিনি বলেছিলেন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন পেয়েছেন। বলেছিলাম পড়েছি। কিছু পেয়েছেন? বলেছি সময় নষ্ট। তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন নিজেকে কি মনে করেন। বলেছি কি মনে করি তা জানিনা তবে আমি গাধা না এটা জানি। আসলে যারা রিসার্চ করে বেশীরভাগই প্রথম শ্রেণীর অপদার্থ। একবার লন্ডনের এক ইউনিভার্সিটির প্রফেসার বাঙালী মানুষ। ডক্টরেট করেছেন। তাকে দেখলে সালাম আদাব করি। উচ্চশিক্ষিত মানুষ। আমাকে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যপেল এলাকায় একদিন পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন উইকেন্ডে কি করেন? বলেছিলাম সময় তো পাইনা। তবে অবসর যে টুকু পাই পড়ালেখা করি নতুবা ঘুমাই। ঘুমাইলে শরীর মন দুটিই ভালো থাকে। বলেছিলেন আমরা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব শনি-রবিবারে একত্রিত হই, হয়ে অমিতাভ শাহরুখ খান শ্রীদেবী মোট কথা হলিউড বলিউডের ছবি নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। আপনি যদি আমাদের আড্ডায় আসেন তাহলে খুশী হবো। আমি একটু অবাক হই ভদ্রলোকের কথায়। উচ্চশিক্ষিত মানুষ বলে কি? মনে মনে বলি সালাম আদাব দেয়াটা ভূল হয়েছে। এর পর থেকে তাকে দেখলে আমি সরে দাড়াতাম। সে যাক। যারা গবেষনা করেছেন তাদের এ আশংকাকে আল্লাহ তার গায়েবী তরফ থেকে ধ্বংস করে দিবেন, এটাই কামনা।
বিঃদ্রঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নাইন বিলিয়ন ইউএস ডলারের প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন সেটি কি বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ থেকে দিচ্ছেন না লোন এনেছেন? আমি তো যতটুকু দেখলাম জানলাম প্রনোদনার এক অংশের টাকা ইন্টারন্যশনাল মনিটরিং ফার্ম সংক্ষেপে আইএমএঅ এর কাছ থেকে অলমোষ্ট টেন মিলিয়ন (৯৮৭ মিলিয়ন ইউএসডলার) ইউএস-ডলার লোন এগ্রি করেছেন। এ ছাড়া আর কার কার কাছ থেকে লোন করেছেন জাতিকে তো জাানানো প্রয়োজন। আওয়ামীলীগের কথায় তো মনে হচ্ছে সব টাকা তারাই দিচ্ছেন। এই লোনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন আমি জানিনা। আল্লাহ তুমি রহম করো। সরকারের পায়ের নীচে মাটি আছে কি-নেই আমি জানিনা। তবে মাটি যে নেই এটি আমার মত অনেকেই বুঝেন। সরকার মনে করে কেউই বুঝেনা।
লেখক
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
সাবেক সভপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
ইমেল: faisollondon@yahoo.co.uk
লন্ডন ২৩/৪/২০২০ ইংরেজী বৃহস্পতিবার