সোজা কথা ডটকম
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার
No Result
View All Result
সোজা কথা ডটকম
No Result
View All Result

আমার বন্দী জীবনের কথকতা-পাঁচ

– তাহেরা বেগম জলি

ডেস্ক রিপোর্ট by ডেস্ক রিপোর্ট
বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ | ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ
in নারী, সংবাদ শিরোনাম, সাহিত্য
0
আমার বন্দী জীবনের কথকতা-পাঁচ

নতুন ক’রে আমাকে জেল গেটের তলবে স্বাভাবিক ভাবেই আমি এবং সালেহা আপা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমরা দু’জনের কেউই মুখ ফুটে কিছু বলছি না। কিন্তু কিছুক্ষন আগের আমাদের হাসিখুশি মুহূর্তটা নিমেষেই যেন ম্লান হয়ে গেলো। সালেহা আপা আমাকে নিতে আসা জমাদ্দারের কাছে একটু অস্থির হয়েই জিজ্ঞাসা করলেন,জলি আবার আজই কেন অফিস কলে যাবে? জেলগেটে অফিস থেকে ডেকে নেওয়া বা ডেকে পাঠানোকে বলা হয় অফিস কল্‌। এটা তো আর জমাদ্দার সাহেবের জানবার কথা নয় যে,আমাকে কেন আজ আবার জেল গেটে যেতে হবে। তিনি বললেন,আমি তো জানিনা। আমি তো হুকুম পালন করতে এসেছি। আজ সত্যি কথাই বলছি, জিজ্ঞাসাবাদ পর্বটায় আমি ভয়ে ভয়েই থাকতাম। আবার জেল গেটে নেওয়ার মুহূর্তে তো আমার মনে হচ্ছিলো-তীরে এসে তরী মনে হয় এবার ডুবলো। আমি সেদিন সাহসের সঙ্গে কিছুই মোকাবেলা করছিলাম না। তখন তো আমার সাহস না দেখিয়ে কোনো উপায় ছিলো না। কিছু বলবার কোনো উপায়ই তো আমার ছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে সাহস দেখাতে হচ্ছিলো। পর পর তিনদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত আমাকে ভাজা ভাজা ক’রে,একরাত পার করেই তিনারা আবার এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে! তখন ভাবতেই পারছিলাম না এ সব। তবে আগে থেকে একটা আশংকা আমাদের ছিলোই। গোয়েন্দা বিভাগ আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতো। এতকিছু জেনে তারাই বা শিকার হাতছাড়া করবে কেন! কেন তারা পরাজয় মেনে নেবে! কিছুটা বিরক্তি এবং সংশয় নিয়ে জেলগেটে গেলাম। আমাকে আগের রুমেই নেওয়া হোলো। গিয়ে দেখলাম আজও এসেছেন সেই দেলোয়ার সাহেব। বসে আছেন টেবিলের একদিকের চেয়ারে। আমি গিয়ে অন্য চেয়ারটাতে বসলাম। টেবিলে দেখলাম এক তাড়া কাগজ। আমি কোনো কথা না বলে ভদ্রলোকের মুখের দিকে চাইলাম। এই চারদিনের মধ্যে এই প্রথম ভদ্রলোক শান্তভাবে আমাকে আশ্বস্ত করবার ভঙ্গিতে কথা বললেন। তিনি বললেন,আজ আমাদের কোনো কথা হবে না। আপনি কিছু মনে না করলে,আমরা আজ একসঙ্গে চা খেতে পারি। তারপর আপনার করনীয় আমি বুঝিয়ে দেবো। গত তিনদিনের ব্যবহারের সঙ্গে তার আজকের ব্যবহারে একেবারেই মিল ছিলো না। তবে প্রথম দিন এস পি অফিসে তিনি এভাবেই আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখানে একটু বলে রাখা দরকার,আমার নানা জনাব আজহারুল হক,ব্রিটিশের পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময় জনাব আজহারুল হককে সাঁওতালদের একটা বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান ক’রে চাকরী ছেড়ে দিয়ে বীরভূম থেকে সোজা যশোর নিজ বাড়িতে চলে আসেন। ইতিমধ্যে আমার মামা জনাব দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করে,পিতৃ পরিচয় দিয়েছেন। যদি এসব শুনে ভদ্রলোকের মনটা একটু নরম হয়,হয়তো এই আশায়। মামা যেভাবেই হোক দেলোয়ার সাহেবের সন্ধান ক’রে নিয়েছিলেন। মামা জানতে পেরেছিলেন,এই দেলোয়ার হোসেনই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। দেলোয়ার সাহেব কিছু পরে আমাকে বললেন,আপনার মামা মাহ্‌মুদুল হকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আপনার নানার কিছু কথা তিনি বললেন। কথাগুলো আমি শুধু শুনলাম। এখানে আমার বলার কিছু ছিলো না। এসব কথা হচ্ছিলো আমাদের চা খাওয়ার সময়। আমি বাস্তবে তখন শুধুই শ্রোতা। চা খাওয়া শেষ ক’রে দেলোয়ার সাহেব আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন। তিনি কাগজগুলো আমার হাতে দিয়ে বললেন,গত তিনদিন মুখে যা বলেছেন,এবার আপনাকে তা লিখে দিতে হবে। বলা যায় এবার রীতিমতো আমি ভড়কে গেলাম। মনে মনে ভাবছি ভদ্রলোক কী বলে এসব! আমার উপর এসব কী অত্যাচার শুরু করলো সে? আমাকে তো সে মানুষই মনে করছে না! আমি কীভাবে লিখে দেবো মুখে বলা সেসব কথা! বাইরে একটু শান্ত ভাব রেখে জানতে চাইলাম-লিখতে সময় পাবো কতদিন? তিনি বললেন,আজ নিয়ে দুইদিন। আমার সামনে কে বসে আছে,এত সব চিন্তা না করে,নিজের অজান্তেই মুক্ত মানুষের ভঙ্গীতে রিতীমত আমি বিদ্রোহ ক’রে বসলাম। বললাম, এ তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। আপনি দুইদিনে পরবেন এ কাজ? আমাকে অন্তত পাঁচদিন সময় দিতে হবে। তিনি বললেন পাঁচদিন সময় দেওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। আজ আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করলাম, ভদ্রলোক আজ অসাধারণ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি আজ শান্ত একজন ভদ্রলোক। আজ তিনি আমাকে বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। সময় নিয়ে শেষে রফা হোলো তিনদিনের। আজ সহ তিনদিন পর তিনি আসবেন।আমার হাতে কাগজ এবং কলম তো আগেই দেওয়া হয়েছে। জেলখানায় বন্দীদের কাগজ কলম রাখতে হলে জেল কতৃপক্ষের অনুমতি দরকার হয়। সেই অনুযায়ী জেল কতৃপক্ষ আমার হাতে কাগজ গুনে দিলেন। এবং আমাকে বলে দেওয়া হোলো লেখার পর বাড়তি কাগজ যেন আমি ফেরত দিই। জেলগেটে বলতে গেলে সেদিন আমি একেবারেই চুপ ক’রে ছিলাম। অন্যদিন অভ্যাস বসত অন্যদের সঙ্গে কথা বলি। রাজবন্দী হওয়ার কারণে আমাদের কথা বলবার সুযোগ থাকে। আমাকে মহিলা জেল পুলিশ যখন নিয়ে রওনা দিলো,আমার তখন মনে হচ্ছিলো আমি যেন ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না। হাঁটার শক্তি যেন আমার নেই। অনেকটা ধীরে দীরে ফিরে এলাম ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডে ঢুকবার আগে পর্যন্ত আমার নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো লিখতে দেওয়ার নামে আমার উপর এক ধরণের নির্যাতন চাপিয়ে দেওয়া হোলো। এর থেকে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করাই ভালো ছিলো। আমার লেখা যদি একটু এদিক ওদিক হয়ে যায়,তাহলে আমার তৃতীয় দফায় যে কী হবে,তা বুঝতে আর বাকি রইলো না। আমি ধরেই নিলাম তৃতীয় দফায় শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন আমাকে হতেই হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেলাম। ওয়ার্ডে ঢুকে নিজের মতো ক’রে কাজ করে যাচ্ছিলাম। কাগজগুলো রাখা,নিজের মুখের ঘাম মোছা এই সব। কিন্তু আমার মুখে কোনো কথা ছিলো না। আমার স্বভাববিরুদ্ধ নীরবতা দেখে,বাপ্পি আমার পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো কী হয়েছে? আমি ততোক্ষনে কাগজগুলো পাশে রেখে চুপ ক’রে বসে ছিলাম। সালেহা আপা আমার পাশে বসে আমার হাতটা ধরলেন। কিন্তু কিছু জানতে চাইলেন না। বা এমন হতে পারে একটা দুঃসংবাদ শুনবার জন্য তিনিও তখন শক্তি সঞ্চয় করছিলেন। আমার এইভাবে পাথর হয়ে ফিরে আসা এবং চুপচাপ বসে থাকা দেখে মহিলা ওয়ার্ডের অনেকেই সেদিন ঘাবড়ে গিয়েছিলো। কারণ এই কয়েকদিনে আমরা হয়ে উঠেছি পরমাত্মীয়। চুপচাপ বসে থাকার ঘণ্টাখানেক পর আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে,নিজেই সালেহা আপাকে সব বলে বললাম,এই অসম্ভব কাজ আমি কীভাবে করবো?এবার মনে হয় বিপদে আমি পড়লামই। আমি ভাবতে পারছি না মুখে বলা কথার সঙ্গে আমি কীভাবে সব মিলিয়ে লিখবো। সালেহা আপা বললেন,”এটা না পারার বিকল্পও তো তোর সামনে কিছু নেই। মনে করবার চেষ্টা কর্‌ এই তিনদিন কী কী বলেছিস। কাগজে কিছু কম লিখলেও চলবে।কিন্তু কিছুতেই বাড়তি কোনো কথা লেখা যাবে না। পুলিশ বিভাগ তোর জিজ্ঞাসাবাদে সন্তষ্ট হতে পারেনি। তাই এই নতুন ফন্দি এঁটেছে ওরা। মাথা ঠাণ্ডা কর্‌। বসে না থেকে ভেবে চিনতে লেখা শুরু কর্‌। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কী বলেছিলাম,এবার তা মনে করতে বসলাম। সামনে নিয়ে বসলাম কাগজ কলম। লিখবার জন্য ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে শুরু করলাম লেখা। লেখা শুরু ক’রে মনে হোলো কিছুতেই আর সময় নষ্ট করা যাবে না। হাতে যতোটুকু সময় আছে,এর মধ্যে গুছিয়ে লিখতেই হবে। লিখতে বসে চারিদিকের সব কিছু যেন সেদিন আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি যেন বসেছি এক কঠিন পরীক্ষায়। এ পরীক্ষায় ফেল করলে নির্ঘাত জীবন নাশ। দুইদিন আমার নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। বাপ্পি মাঝে মধ্যে খোঁজ নেয়। সালেহা আপা মাঝে মধ্যে আমার পাশে এসে বসেন। কিন্তু কোনো কথা বলেন না। এই দুইদিন আমাদের ওয়ার্ডে কখন তালা দেওয়া হয়েছে,তাও আমি বুঝতে পারিনি। শুধু যখন ভোরে তালা খুলে দেয় তখন টের পাই। ভোরে উঠতে পারার সুবিধাটা আমি কাজে লাগাই। লিখতে বসে একটা অদ্ভুত বিষয় আমি লক্ষ্য করলাম। জেলগেটে আমি যে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলাম,এক এক করে প্রায় সবই আমার মনে পড়তে লাগলো। আর আমি লিখে পাতার পর পাতা শেষ করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত সে লেখা গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো ২৩ পাতায়। আমি বলতে পারবো না আমার মুখে বলা স্টেটমেন্ট কতো পাতা হয়েছিলো। তবে আমার লেখা নিয়ে একজন জেল কর্মকর্তার সঙ্গে দেলোয়ার সাহেব আলাপচারিতায় বলেছিলেন,কিছু শব্দ বাদ দিলে বলা এবং লেখা প্রায় একই। তিনি নাকি একটু অবাকই হয়েছিলেন লেখা দেখে। দেলোয়ার সাহেব আরও মন্তব্য করেছিলেন আমি চাই মেয়েটা বিপদে না পড়ুক। আমরা তো উপরের নির্দেশেই কাজ করি। পরবর্তী এক সময়ে এ সব শুনে মনে মনে বলেছিলাম,কাঁটার উপর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,আর বলছে পায়ের রক্ত যেন না বেরোই। আমার লেখা সময় মতোই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। লেখা শেষ ক’রে পড়ে দেখলাম কোনো অপ্রয়োজনীয় বাড়তি কথা লেখা হয়েছে কিনা। দেখলাম ঠিক আছে। লিখবার সময় আমি গল্প বলবার পদ্ধতিটা অনুসরণ করেছিলাম। শুরুতে আমি বলেছি,জিজ্ঞাসাবাদে সব কিছু মনে রাখবার একটা সুফল আছে। লিখতে বসে সেই সুফলটাই আমি কাজে লাগালাম। জীবনে আমি যতো লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি,এটা তার মধ্যে সব থেকে কঠিন পরীক্ষা। যেখানে একটু এদিক ওদিক হওয়া মানেই গভীর খাদে পড়ে যাওয়া। লেখাটা পড়ে নিজে আশ্বস্ত হয়ে রাতে খেয়ে সালেহা আপার সঙ্গে অনেকটা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে সালেহা আপা এপর্যন্ত আমার লেখা দেখবার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এটা আসলে আমার নিজেরই বুঝবার বিষয় ছিলো।অন্যদের এখানে কিছুই করবার ছিলো না। যাইহোক রাতের নিশ্চিন্ত ঘুমটা প্রকৃতই ভালো ঘুম হয়েছিলো। লিখবার পর নিজে দেখে আশ্বস্ত হয়ে আমি আর কিছু ভাবতে চাইনি। ভাবখানা এরকম ছিলো যা হয় হবে। আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ওয়ার্ডের অন্যরা আমাকে দেখেই বুঝলো,এখন আমি পুরোনো স্বভাবে ফিরে এসেছি। হাসি গল্প আড্ডার সেই পুরোনো মানুষ আমি তখন। লেখা শুরু করবার পর এই আমাকেই অন্যরা দেখেছে,ঘুম নেই,খাওয়া নেই,কারোর সঙ্গে কথা বলা নেই। মুখ গুজে শুধু লিখে চলেছি। তখন এভাবেই সময়টা আমার চলে গেছে। সকালেই আমাকে জেলগেটে যাওয়ার জন্য অফিস কল্‌ এলো। ওয়ার্ডের গেটের বাইরে থেকে জমাদ্দার সাহেব বলে পাঠালেন এখনই যেতে হবে। সেদিন ওয়ার্ডের ভিতর থেকে আমার সঙ্গে গেলেন মেট্রন। মহিলা ওয়ার্ডে বন্দীদের দেখাশুনা করবার জন্য,সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মেট্রন পদধারী একজন মহিলা কর্মকর্তা থাকতেন। তিনি নিজেই আজ আমাকে নিয়ে গেলেন। জেল গেটে গিয়ে দেখলাম দেলোয়ার সাহেব সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি গিয়ে দেরি না ক’রে,আমার লেখা কাগজের বাণ্ডিল তার হাতে তুলে দিলাম। তিনি পরীক্ষা ক’রে দেখলেন আমি সই করেছি কিনা। আমার কাছ থেকে লেখাগুলো পেয়ে তিনি আর দেরি করতে চাইলেন না। এবং তিনি যথা সম্ভব দ্রুত চলে গেলেন। যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলেন,আর যেন আপনাকে আমাদের মুখোমুখি হতে না হয়। হতে পারে আমার ধকলে তিনিও কষ্ট পাচ্ছিলেন। সেদিন আমরা কথা বলেছিলাম ডেপুটি জেলরদের বসবার রুমে। বা প্রকৃত অফিস রুমে। ঐ সময় দুইজন ডেপুটি জেলর উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই আজ দেলোয়ার সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাকে নিয়ে জেল কতৃপক্ষের দুই একজন একটু দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাদের অতিতের এ ধরণের জিজ্ঞাসাবাদের অভিজ্ঞতা হয়তো ভালো নয়। তাছাড়া দিন শেষে বন্দীরা তো তাদের কাছেই ফিরে আসে। তারাও তো মানুষ। গ্রেফতার হওয়ার প্রথম দিকে এতো সতর্কতার মধ্যেও আমি কিছুটা গা ভাসিয়ে চলছিলাম।কিন্তু পর পর দু’বার গোয়েন্দা বিভাগের মুখোমুখি হওয়ার কারণে,এখন তৈরিই হয়ে থাকতাম। কখন আবার তলব আসে। তবে দুই একদিন পর মনে হোলো রেহাই মনে হয় পাওয়া গেলো। মেয়ে এবং মা এসে এবার ভর করলো আমার মনের মধ্যে। মা আমার মেয়েকে নিয়ে কী ক’রে বেড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত তাদের কোনো খবর আমি পাইনি। বাড়ির কাওকে এপর্যন্ত আমার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমি অনুমান করছি,এতদিনে নিশ্চয় আমার মা জেনে গেছেন আমি যশোর জেলে আছি। আমি মেট্রনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,আমার বাড়ির কেউ কেন আসছেনা। এমনিই জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তার কাছে কোনো সদুত্তর পাবো আশা করিনি। এবং এগুলো তার জানবার বিষয়ও নয়। মেট্রন তবু বললেন,আপনার সঙ্গে এখনো মনে হয় বাইরের কেউ যোগাযোগ করতে পারছেনা। আপনার এখানে থাকবার সংবাদ হয়তো আপনার বাড়ির মানুষ জানে না। আমি ভাবলাম আমার মামা এতদিনেও আমার মাকে আমার কথা বলেননি তা তো হতে পারে না। পরে মায়ের কাছে শুনেছি,মামা একদিন চেষ্টা করেছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে,কিন্তু পারেননি। তাকে আমার সঙ্গে দেখা করবার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মা মেয়েকে নিয়ে চিন্তা ক’রে সময়টা কেটে যাচ্ছিলো কোনো ভাবে। সবার সঙ্গে মিশে থাকতাম। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতাম। বাপ্পির গান শুনতাম। আর সালেহা আপাকে অতিষ্ঠ ক’রে দেওয়া তো ছিলোই। কিন্তু তারপরেও মন পড়ে থাকতো বাইরে। আমার মা আমার মেয়ের কাছে। তখন বাইরের সশস্ত্র রাজনৈতিক জীবন ভুলতেই চাইতাম। কারণ তখন ওসব যতো ভুলে থাকা যায় ততোই আমার জন্য মঙ্গল। আচমকা এই সময় একদিন খবর এলো সালেহা আপাকে অন্য জেলে স্থানান্তর ক’রে দেওয়া হচ্ছে। আমার জন্য এটা ছিলো একটা ভয়ানক খবর। কারাগারে নির্ভয়ে সময় পার করতে, আমার জন্য একটা শক্তি ছিলেন সালেহা আপা। ভিতরে ভিতরে আমি বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করবার জন্য যে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম,সালেহা আপাই আমার সেসব সামাল দিচ্ছিলেন। তাই সালেহা আপার অন্য জেলে পাঠানোর সংবাদে এবার নিজেকে সামাল দেওয়া আমার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে এটা আমি বুঝতে পারলাম। সালেহা আপাকে কোথায় নেওয়া হবে ওয়ার্ডের মধ্যে তা গোপন করা হচ্ছিলো। কিন্তু এটা কোনো সাধারণ নিয়ম নয়। পরদিন সকালে সালেহা আপা চলে গেলেন। আমি তখন খানিকটা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। দিনটা কোনো ভাবে কাটলো। সন্ধ্যায় সুবেদার সাহেবের কাছে জানতে চাইলাম সালেহা আপাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে। তিনি তখন বললেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ইতিমধ্যে আমাকে ডিভিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার নামে চলে এলো আমাকে অনির্দিষ্ট কাল আটকে রাখার সরকারী নির্দেশ। বুঝতে পারলাম আমার জেলজীবন ক্ষণস্থায়ী হবে না। শক্ত হয়ে তখন আমাকে প্রস্তুতি নিতেই হোলো। কীভাবে জেলজীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়। আমার একটা স্বভাব আছে,যেকোনো বিপদে আমি দাঁড়িয়ে যেতে পারি। তবে তখনো আমি জানিনা,কবে দেখা হবে আমার বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে। কবে দেখা পাবো আমার মা এবং মেয়ের।

# লেখাটার উপর এখন একটু চোখ বুলাবো। একভাবে লিখে গেছি। এর মধ্যে হয়তো অনেক ভুল আছে। পাঠক একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
– তাহেরা বেগম জলি, সাবেক শিক্ষিকা, রাজনৈতিক কর্মী
Tags: তাহেরা বেগম জলিস্মৃতিকথা
Previous Post

সূর্য আর গুহার গল্পঃ করোনাকালের উপকথা

Next Post

সরকারি কর্মচারীরাই সবচে বেশি অর্থ পাচার করেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Next Post
সরকারি কর্মচারীরাই সবচে বেশি অর্থ পাচার করেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সরকারি কর্মচারীরাই সবচে বেশি অর্থ পাচার করেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লিখুন - বলুন - তথ্য দিন।।

দেশে বিদেশে যেখানে থাকুন আপনি হ্যাঁ আপনি যুক্ত হতে পারেন সোজাকথা ডটকম পরিবারের সাথে। রিপোর্টার, লেখক কিংবা তথ্যদাতা হিসেবে থাকুন! যুক্ত হতে লিখুন/ লেখা পাঠান। লেখা পাঠানোর ঠিকানা sojakotha.com@gmail.com

সম্পাদক ও প্রকাশক (অবৈতনিক):

ব্যারিস্টার শাহ আলম ফারুক

Contact Us

221 Whitechapel Road London E1 1DE
Email : sojakotha.com@gmail.com

অনুসরণ করুন

Browse by Category

  • ENGLISH SECTION
  • কলাম
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • নারী
  • নির্বাচিত
  • প্রবাস
  • বাংলাদেশ
  • বিনোদন
  • বিবিধ
  • বিশ্ব
  • ভিডিও
  • মতামত
  • মন্তব্য প্রতিবেদন
  • মানবাধিকার
  • যুক্তরাজ্য
  • লাইফস্টাইল
  • লিড নিউজ
  • সংবাদ শিরোনাম
  • সম্পাদকীয়
  • সাক্ষাৎকার
  • সাহিত্য
  • সোশ্যাল মিডিয়া
  • স্বাস্থ্য

Recent News

মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ

মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচনী অনিয়মের কারণে স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে

সরকারের মধ্যে অস্থিরতা : প্রেস উইংয়ের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ
  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact

স্বত্ব © 2025 সোজা কথা | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed and Maintained by Team MediaTix.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার

স্বত্ব © 2025 সোজা কথা | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed and Maintained by Team MediaTix.