সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে মাসের পর মাস যেখানে বিজ্ঞানীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কোনো কূল কিনারা করতে পারছেন না, সেখানে এক মাসেই সফল টিকা উদ্ভাবনের দাবি করেছে রাশিয়া।
জুলাই মাসেই টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষার কথা বলেছিল দেশটি। আগস্ট মাসে এসে টিকার তৃতীয় ধাপের সফল প্রয়োগের কথা বলছে রাশিয়া । এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
‘গাম-কোভিড-ভ্যাক-লিও’ নামে ভ্যাকসিনটি তৈরিতে সরাসরি যুক্ত রয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের অন্দরমহলে জোর গুঞ্জন, নতুন প্রতিষেধকটি ১০০ শতাংশ সফল। যদিও বিতর্ক থামছে না। একাংশের বিস্ময়, জুলাইয়ে প্রথম ট্রায়াল, আর আগস্টেই তৈরি হয়ে গেল ভ্যাকসিন- এটি কেমন করে সম্ভব!
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, কিছু দিন আগেই মস্কো দাবি করেছিল, তাদের দেশে তৈরি একটি ভ্যাকসিন মানবদেহের উপর চূড়ান্ত পরীক্ষাতে সফল হয়েছে। তারা বলেছিল, সবার আগে ভ্যাকসিন আনবো আমরাই। এই প্রতিষেধকটি তৈরি করছে ‘ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজী’।
আগস্টে এসে টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে সফলতার দাবি করা হয়েছে। এটি তৈরি হচ্ছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির যৌথ উদ্যোগে।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস দাবি করেছে, গাম-কোভিড-ভ্যাক-লিওর হিউম্যান ট্রায়াল শেষ হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটির নাম রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হবে ১০ বা ১২ আগস্ট থেকে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তার তিন থেকে সাত দিনের মাথায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে ভ্যাকসিনটি।
রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বলেন,গামালিয়ার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে। এবার শুধু নিয়মমাফিক লেখাপড়ার কাজ বাকি।
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানান,ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ় শরীরে পুশ করার ২১ দিনের মাথায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে।
নিজেদের ভ্যাকসিন নিয়ে রাশিয়া আশাবাদী হলেও এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বহু দেশ। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীন ও রাশিয়া ভ্যাকসিন তৈরি করলেও তারা তা ব্যবহার করবে না। ব্রিটেনও বলছে, তারা রাশিয়ার ভ্যাকসিন নেবে না।
দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে রাশিয়াকে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। ১৩ জুলাই রাশিয়ার ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপের হিউম্যান ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। এতেই প্রশ্ন উঠছে, এর মধ্যে কী ভাবে বাকি দুটি ধাপের ট্রায়াল শেষ হতে পারে!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার এ বিষয়ে বলেন, কোনো বিজ্ঞানী দাবি করতেই পারেন, তিনি কোনো পথ খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্যই সুখবর। কিন্তু কোনো কিছুর সন্ধান পাওয়া আর পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পন্ন করায় আকাশ-পাতাল তফাত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরে জনগণের বড় অংশের মধ্যে টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির সরকার এমন তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ দেশটির তাস সংবাদ সংস্থাকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি মাসে তারা কয়েক লাখ টিকার ডোজ তৈরি করবেন বলে আশা করছেন।
এএফপি ও সিএনবিসির খবরে জানা যায়, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাসকো বলেন, মস্কোভিত্তিক গামেলিয়া ইনস্টিটিউটে করোনাভাইরাসের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা আরআইএর গত শনিবারের খবরে জানানো হয়, মস্কোর দাবি, পরীক্ষায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আশানুরূপ সাড়া মিলেছে। রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) এই টিকার ট্রায়ালে অর্থায়ন করছে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুরাসকো বলেন, ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের আগে নিয়মিত অনুমোদনের প্রয়োজন। প্রথমে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। অক্টোবর মাসে গণপর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থায়নকারী ফান্ডের প্রধান কিরিল দমিত্রিয়েভ বলেন, তারা আশা করছেন, ১০ দিনের মধ্যে টিকার আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে। যদি ১০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়, তাহলে এটাই প্রথম নিবন্ধিত করোনার টিকা হবে।