সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে- জর্ডানে অন্তত এক হাজার শিক্ষককে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতারর্কতদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত বছরের অক্টোবরে দীর্ঘতম ধর্মঘটের আয়োজন করেছিল দেশটির শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এরপর থেকে শিক্ষকদের বৃহত্তম প্লাটফর্ম হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের নানা নিপীড়নমূলক তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় এই গ্রেপ্তার চলছে বলে দাবি করেছেন তারা।
আইনজীবীরা বলেন, গত মাসে সরকার হঠাৎ করে দেশ জুড়ে শিক্ষকদের বৃহত্তম ওই সংগঠনটির সব শাখা বন্ধ করে দেয়। দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এর সব কার্যক্রম। গ্রেফতার করা হয় ট্রেড ইউনিয়নটির ১৩ জন নির্বাচিত সদস্যকে। শিক্ষকদের আটকাতে জরুরি ভিত্তিতে আইনপ্রণয়নও করা হয়। এমন কী জর্ডানের গণমাধ্যমগুলোকে শিক্ষকদের গ্রেপ্তারের খবর প্রচার না করার ব্যাপারেও কড়া নির্দেশ দেয়া হয়। জর্ডান একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তবে সৌদি আরব বা মিসরের মতো অতটা কট্টরও নয়। বহুমত ও ভিন্নমতের প্রতিও তাদের সহিষ্ণুতা লক্ষ্যনীয়। বিক্ষোভ কিংবা প্রতিবাদের অনুমতি দেয়া আছে। তবে দেশটির এই বৈশিষ্ট্য দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। বিনা বিচারে আটকাদেশের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিবছরই। পর্যবেক্ষকরা বলেন, দেশটিতে করোনার কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়ছে। ফলে দাবি-দাওয়ার মুখে বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারের দমন-পীড়নের মাত্রাও।
তবে সরকারি সূত্র বলছে, শিক্ষকদের সংগঠনটির সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের সম্পর্ক রয়েছে। তাই নিষিদ্ধ ওই সংগঠনটির প্রতি সহানুভূতিশীলদের ব্যাপারে সরকারের কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটছে ।
কূটনীতিকদের দাবি, শিক্ষক ইউনিয়নের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের যোগসূত্র রয়েছে। ইউনিয়নের সভাপতিসহ অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সদস্য ব্রাদারহুডের সদস্য।
জর্ডানের সরকার দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের সংগঠন থেকে সতর্ক ছিল। আরব বসন্তের অংশ হিসাবে জর্ডানে যে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছিল,তাতে সরকার ছাড়ের অংশ হিসাবে শিক্ষকদের সংগঠনের পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেয়। যা অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।
যে দেশে রাজনৈতিক দলগুলি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, এবং আইনজীবী বা ইঞ্জিনিয়ারদের সিন্ডিকেটগুলি ছোট এবং মূলত মধ্যবিত্ত বা উচ্চ শ্রেণীর, সেখানে শিক্ষকদের ইউনিয়নটি অনন্য: বৃহত্তর, শ্রেনী-শ্রেণীর এবং বিচিত্র, জর্দান এবং ফিলিস্তিনিদের সমন্বয়ে গঠিত, গ্রামীণ এবং শহুরে বাসিন্দা, এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে মানুষ এই ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিস্ট।
শিক্ষক ইউনিয়নের সাথে সমঝোতায় গত বছর আলোচিত মজুরি বৃদ্ধি সরকার এপ্রিল মাসে স্থগিত করেছিল, করোনাভাইরাস ফলে সব সরকারী-ক্ষেত্রের বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের মধ্যে। শিক্ষক সিন্ডিকেট এটি বন্ধ হওয়ার আগের দিনগুলিতে তার বেতন বৃদ্ধি বজায় রাখতে নতুন প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করেছিল।
শিক্ষক সিন্ডিকেটের পরামর্শদাতা আইনজীবী আসেম আল-ওমারি বলেছেন, সরকার সামনের মাসগুলিতে অর্থনৈতিক সমস্যার আশংকা করছে এবং তাই সম্ভাব্য বিরোধীদের স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে।