(এক) করোনা মহামারী আসার পর থেকে কোনো কিছুই আর ভালো লাগেনা। মৃত্যু ভয় সারাক্ষণ তাড়া করে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনা যায় অনেক প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর। লকডাউনে ব্রিটেন। নতুন করে তিন সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। ব্রিটিশ অর্থনীতির ৩৫ পার্সেন্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। জানিনা কোথায় নিয়ে যাবে করোনা মহামারী। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে নান্তা সেরে ফোন করেছি পরিচিত অনেককেই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে করোনা অনেককেই ছাড়বেনা। আমাকে যদি ধরে ফেলে তাহলে নিয়ে যাবে। অতএব মাফ চেয়ে নিতে চাই সবার কাছে। কারণ আজ্রাইল দরজায় আসলে সময় না-ও-পেতে পারি। এরমধ্যে ফোন করি পূর্ব লন্ডনের পরিচিত ট্রেভেলস ব্যবসায়ি এহিয়া ভাইকে। সুদর্শন এহিয়া ভাই, অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী। চ্যানেল আই ইউরোপে বিজ্ঞাপন দিতেন তার ট্রাভেলসের। বলেছিলাম মরে গেলে মাফ করে দিবেন। কারণ আমি লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটি এবং বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী এমপিকে ষ্টুডিওতে এনে বিভিন্ন কথা সরাসরি জিজ্ঞাসা করে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি। তবে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এহিয়া ভাই বললেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেনককের ইন্টারভিউ দেখেছেন? বলেছিলাম না, বললেন পাঠিয়ে দিচ্ছি। তিনি আমার হোয়াটসআপে পাঠিয়ে-দিলেন। ক্লিক করতেই ভেসে উঠে আমার অত্যন্ত পরিচিত বৃটিশ সাংবাদিক পিয়ারস মরগানের কন্ঠ। ব্রিটেনে যারা বসবাস করেন তাদের মনে আছে কি-না জানিনা। ইরাক যুদ্ধের সময় মিরর পত্রিকায় একটি ফটো ছাপা হয়েছিল “ব্রিটিশ সোলজার এবিউসিং ইরাকী প্রিজনার“। ছবি ছাপা হওয়ার পর সে ছবি ফেইক বলে প্রতীয়মান হলে মরগান মিরর পত্রিকার এডিটর থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে তার পদত্যাগ ছিল অন দ্যা স্পট। তিনি তার ষ্টাফদেরকে গুড বাই বলার সুযোগ পাননি। পরবর্তীতে সাবেক প্রধান- মন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে মিঃ মরগান জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি কি সরি বলবেন ইরাক যুদ্ধের জন্য? টনি ব্লেয়ার সরি বলেননি। টরি ব্লেয়ার বলেছিলেন ইরাকের ব্যপারে তার ডেপথ অব নলেজের অভাব ছিল। তবে তিনি রিগ্রেট ফিল করেন। হাজার হাজার মানুষ মেরে ইরাককে শেষ করে দিয়ে তিনি এখন রিগ্রেট ফিল করেন। গত ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের সময় আমাকে এক ইরানী মহিলা জিজ্ঞাস করেছিলেন তোমার পরিবারের সবাই নাকি কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক? আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম তোমার সমস্যা কোথায়? তিনি বলেছিলেন আমি লেবার পার্টি করি। আমি বলেছিলাম তোমার চয়েস তুমি লেবার পার্টি করো, আমার পরিবারের সবাই যদি কনজারভেটিভ পার্টি করে এটা তাদের চয়েস, তিনি বলেছিলেন বরিস জনসন মুসলিম মহিলাদেরকে অপমান করেছে হিজাবকে লেটার বক্সের সাথে তুলনা করেছে, ইটস সেইম। আমার সেদিন খুবই ভালো মুড ছিল। ইচ্ছে করেনি মহিলার সাথে তর্ক করার। বলেছিলাম তুমি আমাকে বিরক্ত না করলে খুশী হবো। সুন্দরী মহিলা আমার উপর ক্ষেপে যায়। এমনভাবে সে আমাকে তিরস্কার করেছিল যে কনজারভেটিভ পার্টি করা একটা অপরাধ। আমি খুবই সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার পড়ালেখা কতটুকু? বলেছিল জিসিএসি। আমি বলেছিলাম সরি তুমি আমার থেকে বেশী শিক্ষিত। আমি তোমার সাথে পারবনা। মহিলা তারপরও আমাকে এট্যাক করেছিল। আমি বাধ্য হয়ে মহিলাকে বিদায় করার জন্য বলেছিলাম তোমাকে একটি প্রশ্ন করি, তুমি যে মুসলমানের কথা বলেছ মুসলিম মহিলাদেরকে অপমান করেছে, হিজাব কে লেটার বক্স বলেছে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে কারো ধর্মকে নিয়ে কঠাক্ষ করা আমি পছন্দ করিনা। তবে তোমাদের নেতা টনি ব্লেয়ার সাহেব যে ইরাকে লক্ষ লক্ষ মুসলমানদেরকে হত্যা করতে বুশকে সহযোগিতা করেছিল, সাদ্দাম হোসেনকে ঈদের দিন ফাসির কাষ্টে ঝুলিয়েছিল, সেই টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টি কি করে তুমি সমর্থন করো? “নাউজুবিল্লাহ“। এ কথা বলার পর মহিলা কেটে পরে। কিছুক্ষণ পর আবার এসে জিজ্ঞাসা করে তোমার কন্ট্রাক্ট নাম্বার দাও আমি যোগাযোগ করবো। বলেছিলাম তোমার সাথে আজকের পরে আর কখনো ইহজগতে দেখা হবে না, আর পরজগতে তোমার সাথে আমার দেখা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। মহিলা হাসতে হাসতে বিদায় নেয়। এর পর অবশ্য আরো দুএকটি অনুষ্টানে দেখা হয়েছে——-।
সে যাক প্রিয় পাঠক পিয়ারস মরগান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিঃ হ্যনকক-কে জিজ্ঞাস করছেন ২৩ জানুয়ারী ২০২০ ইংরেজীতে হাউস অব পার্লামেন্টে তুমি বক্তৃতা দিয়ে বলেছিলে ব্রিটেন করনা ভাইরাসকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। ব্রিটেন ওয়েল প্রিপেয়ারড ইত্যাদি। এখন কেন পিপিই নেই, টেস্ট করার কিট নেই, ভেন্টিলেটর নেই। হেলথ সেক্রেটারী বলেছিলেন তুমি মিসজাজ করছো এবং বারবার আমাকে ইন্ট্রডাপ্ট করছো। মরগান বলেছিলেন আই ডোন্ট গিভ এ ডেম। লাইভ প্রোগ্রামে এভাবে কথা সাধারণত কেউ বলেনা এটা শুধু মরগান এবং আরেক ব্রিটিশ সাংবাদিক জেরেমী প্যক্সমেনকে মানায়। বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিকের ক্ষমতা নেই এ রকম কথা বলার। বললে আর পাওয়া যাবেনা। মরগানের মত সাংবাদিক ২/৪ টা বাংলাদেশে থাকলে আজ দেশটির এ অবস্থা হতো-না।
সে যাক বাসায় বসে থেকে আমি অনেকটা ক্লান্ত। গাড়ী নিয়ে বের হলাম। দুর কোথাও চলে যাবো। একটু ঘুরে আসি। এতদিন নিজেই গালাগালি করেছি মানুষকে। মানুষ কথা শুনেনা। আজ নিজেই আইন ভঙ্গ করছি। আইনকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি। বেআইনী কাজ করতে ভালো লাগেনা। নিজে কি করি না করি পরিচয় দিতে চাইনা। সাংবাদিক পরিচয় না দিয়েও একবার তিউনিসিয়ায় তিন ঘন্টা আটকে রেখেছিল পুলিশ সাংবাদিকের কার্ড পাওয়ায়। বাংলাদেশে গেলে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে লন্ডনে কি করি? বলি শেফের কাজ করি। আমি নিজেকে বাবুর্চি পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পরিবারের কেউ সাথে থাকলে তারা খুবই ব্রিবতবোধ করে। কেন এসব পরিচয় দিচ্ছি। নাইন ইলেভেনের পর থেকে কোনো দেশে গেল সাংবাদিক পরিচয় দিলেই খবর করে ফেলে পুলিশ। আমি পুলিশকে ভয় পাই। রাস্তায় যে সব পুলিশ টহল দেয় তারা কিন্তু সব সময় ভালো ব্যবহার করেনা। বাংলাদেশের পুলিশ যেভাবে লাঠি দিয়ে আঘাত করে আমার দেখলেই ভয় হয়। এমন বাড়ি দেয় বাপ দাদার নাম ভূলিয়ে দেয়। আমার গাড়ী লন্ডনের অদুরে লুটন পেরিয়ে যখন মিল্টনকিংস এর দিকে যাত্রা করলো তখনই পিছন থেকে পুলিশ ফ্লাশ দেয় গাড়ী থামানোর জন্য। একটি সার্ভিস ষ্টেশনে আমি গাড়ী থামাই। জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাচ্ছি? বলেছিলাম কাজে? কি কাজ করো? সাংবাদিক। বললো না যাওয়া যাবেনা। তোমাকে লন্ডনে বেক করতে হবে, নতুবা আমরা তোমাকে ফাইন করবো। পুলিশ আমাকে বলেছিল মানুষকে সচেতন করার জন্য তোমার কমিউনিটিতে কি করেছ? বলেছি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি, কিন্তু মানুষ তো কথা শুনেনা। পুলিশ মহিলা মুচকি হেসে বলেছিল তুমি নিজেই তো রুল ব্রেইক করছো। আমি একটু লজ্জা পাই। পুলিশ আমাকে একটি কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে তোমাকে লন্ডন যাওয়ার পথে যদি আবারো কোনো পুলিশ আটকায় তাহলে এ কাগজ দেখাতে পারো। আমি বিদায় নিয়ে লন্ডনের পথে আবারো যাত্রা করি। মনটা খারাপ হয়ে যায়। গাড়ীতে উঠে গান শুনার চেষ্টা করি। ররীন্দ্র সঙ্গীত বেজে উঠে। “নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে রয়েছ তুমি নয়নে নয়নে—–। মনে মনে বলি রাখ তোর নয়ন, নয়নে বহু দেখেছি মহিলাদেরকে এখন বিরক্ত লাগে। এই নয়ন না থাকলে অনেক কিছুই দেখতে হতো না। আমার গান শুনতে ভালো লাগেনা। রবীন্দ্রনাথের উপর আমার রাগ উঠে। এই ভদ্রলোক বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা প্রশাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। তিনি এমন কোনো বিষয় নেই যা লিখেননি। গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন, গল্প লিখেছেন। আমরা যারা রবীন্দ্রনাথের পর এ পৃথিবীতে এসেছি আমরা কি লিখবো? রবীন্দ্রনাথ কি কান্ডজ্ঞানহীন লেখক? তার কি উচিৎ ছিল-না আমাদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া? ৯০ এর দশকে সিলেটের সাংবাদিক মরহুম মহিউদ্দিন শীরু আমাকে চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন পূর্ব লন্ডনের খবরা-খবর জানিয়ে আমাক লিখ। আমি লিখেছিলাম লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটির বর্তমান খবর হচ্ছে একুশে গানের রচিয়তা আব্দুল গাফফার চৌধুরী লন্ডন থেকে প্রকাশিত পূর্ব দেশ পত্রিকার মালিক কাজী নাজিম উদ্দিন সাহেবকে নিয়ে গান রচনা করেছেন, সেই গানে সুর দিয়েছেন লন্ডনের বিখ্যাত শিল্পি হিমাংশু দা। শিরু ভাই উত্তরে লিখেছিলেন গাফফার ভাই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি নাজিম উদ্দিন সাহেবকে নিয়ে গান রচনা করবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। তবে খেয়াল রেখ তিনি যেন রবীন্দ্র সংগীত না লিখেন। শীরু ভাই অকালে চলে গেলেন। সিলেটের সাংবাদিকতার অঙ্গনে এক উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। সেন্স অব হিউমার ছিল শিরু ভাইর। মিস করি শিরু ভাইকে। ওপারে শিরু ভাই কেমন আছেন? নিশ্চয়ই ভালো আছেন তিনি। কারণ তিনি তো কারো ক্ষতি করেননি। আল্লাহ শিরু ভাইকে জান্নাতের সর্ব্বোচ্চ স্থানে অধিষ্টিত করবেন এটাই প্রার্থনা।
প্রিয় পাঠক কথার পিঠে কথা চলে আসে। রবীন্দ্রনাথকে এক সময় বাঙালীরা বৃটিশের দালাল বলেছিল। কবি সাহিত্যিকরা জন্ম নেয় একটি সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, পল্লিকবি জসিম উদ্দিন, মাইকেল মধুসুধন দত্ত, সহ নাম না জানা অনেক কবি সাহিত্যিকের কি দরকার ছিল এই বাংলা সাহিত্য নিয়ে কথা বলার? লেখার? রবিন্দ্রনাথ, লিখেছেন দুবিঘা জমি, চিত্ত যেথায় ভয় শুন্য। বীরের রক্ত স্রোত— মাথার এ অশ্রু ধারা। স্বর্গ কি হবেনা কেনা- বিশ্বের ভান্ডারী শোধিবেনা এত ঋণ-রাত্রির তপস্যা সে কি আনিবে-না দিন—- “নাগিনীরা দিকে-দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস- শান্তির ললিত বানী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস, বিদায়ের কালে আমি তাই ডাক দিয়ে যাই দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে। তিনি আরো লিখেছেন আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি তুমি অবসর মত ভাসিও। রবিন্দ্রনাথের এ সব কবিতা গল্প আমি ছোট বেলায় পড়েছিলাম। তার লেখার এবং ভাবনার যে গভীরতা বিশালতা সেটি আমাকে ভাবিয়েছে। জীবনের শেষ দিকে তিনি লিখেছিলেন “সত্য যে কঠিন কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। সে কখনো করেনা বঞ্চনা। অসত্য মানুষকে প্রতারিত করে। সত্য মানুষকে কখনো প্রতারিত করেনা। অসত্য মানুষকে কষ্ট দেয়। সত্য কখনো কষ্ট দেয়না। সত্য তো সত্যিই। তাই তো অনেকে বলেন সত্যের মত বদমাশ আর মিথ্যার মত সুলভ এ পৃথিবীতেই আমার জন্ম। রবীন্দ্রনাথ কি বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালীকে? আমি মাঝে মধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করি রবিন্দ্রনাথ নজরুল, জসিম উদ্দিন মাইকেল মধুসুধন দত্ত এদের কি দরকার ছিল বাঙালী সমাজে জন্ম নেয়ার? সেক্সপিয়ার থেকে কি কোনো অংশে কম রবিন্দ্রনাথ? বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেক্সপিয়ার কে ছাড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রবিন্দ্রনাথের জ্ঞানের গভীরতা জ্ঞানের সৌন্দর্য দ্বিতীয়টি এ পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয়না। তবে কাদম্বীনির সাথে তিনি প্রেম না করলেই পারতেন! ইংলেন্ডের বার্মিংহামের পাশে স্টাটফোর্ড আপনে সেক্সপিয়ারের বাড়ীর পিছনে রবিন্দ্রনাথের ভাস্কর্য হয়তো অনেকেই দেখেছেন? আমি দেখেছি। অবাক হয়েছি। মানিকে রতন চিন্তে পেরেছে। রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে কবিতা গল্প পড়লে মাঝে মধ্যে মাথা খারাপ হয়ে যায়। কাবুলিওয়ালা গল্প অনেকেই পড়েছেন। আমার এসব মুখস্ত ছিল, এখন সব চলে যাচ্ছে। বয়স বাড়ছে। “তোমার যেমন একটি মেয়ে আছে আমারও একটি মেয়ে আছে আমি তার মুখ স্মরণ করে তোমার মেয়ের জন্য সামান্য মেওয়া নিয়ে আসি, আমি তো সওদা করতে আসিনা। এই যে পিতৃ মন এটি পৃথিবীর সব বাবাদের সমান। এখানে সাদা কালো কোনো বাচ বিচার নেই। মানুষের ভালোবাসার অপর পৃষ্টায় ঘৃনা থাকে। ঘৃনা যখন চলে আসে তখন কেটে পড়া উচিৎ। জোর করে ভালোবাসা, জোর করে ক্ষমতায় থাকার নামান্তর।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ এত কিছু বলার কারণ হলো বর্তমান সমাজে যদি লেখক সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক না থাকে তাহলে কুকুর বিড়াল গরু ছাগলরা মাথায় উঠে নাচবে। এই করোনা ভাইরাসের মত মহামারি মহা দুর্যোগের সময়ে একটি জাতির পাশে সততা নিয়ে কে দাড়াবে? চেয়ারম্যান মেম্বার ডিসি এসপি আমলা কামলা, মাতব্বর, সমাজসেবক? এমপি মন্ত্রী? সব শালারাই তো চোর। একটি দেশ, একটি জাতি, মহামারীতে আক্রান্ত। বিদেশীরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছে। তারপরও সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে সব ঠিক আছে। হাসান মাহমুদ সাহেব মন্ত্রী- যা ইচ্ছে তাই বলছেন। কেন বলছেন? কিসের ভিত্তিতে এসব বাজে কথা তিনি বলেন? কি এচিভ করবেন তিনি? আওয়ামীলীগের বেশ কিছু লোকেরা ত্রাণ চোর। এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আগে শুনতাম পুরুষ নেতারা চুরি করে এখন দেখছি মহিলারাও চুরি করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন চোরদের বরদাস্ত করা হবেনা। নতুন আইজি বলেছেন আর একটি চুরি হলে খবর করে ছাড়বেন। এসব ফালতু কথা শুনতে কার ভালো লাগে বলুন? আমি গত নির্বাচনের আগে সংলাপকে ফালতু সংলাপ বলেছিলাম। আমাকে অনেকেই জ্ঞান দান করেছেন বলেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহামান্য রাষ্টপতি লেভেলের সংলাপকে আপনি ফালতু বলতে পারেননা। বলেছিলাম আমাকে জ্ঞান দান করবেননা। ফকিরন্নীর পোলারা যখন আমাকে জ্ঞান দান করার চেষ্টা করে তখন বলতে ইচ্ছে করে ও ফকিরন্নির পোলা তুমি কিসের ভিত্তিতে জ্ঞান দান করার চেষ্টা করো? তুমি কে? কিছুদিন আগেও রাস্তা থেকে সিগারেটের শেষ অংশটুকু কুড়িয়ে খেয়েছ এখন লম্বা লম্বা কথা বলো। আমাকে কি-না জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করো। বেটা ফাজিলের বাচ্চা ফাজিল। ব্যারিস্টার সুমন নামে এক ভদ্রলোক ফেইসবুকে লাইভ দিয়েই বিখ্যাত হয়েছেন। এক সময় ভালোই বলতেন কিন্তু এখন তিনি যা বলেন মনে হয় বলতে ভাই একটু থামেন থামলে ভালো লাগে। আমি বুঝিনা একজন ব্যারিষ্টার একজন আইনজীবি এত নির্লজ্জ হয় কি করে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যরিষ্টার সুমন সাহেবকে কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন প্লিজ। এসব চামচাদের চামচামী দেখলে লজ্জাও লজ্জা পায়। কিন্তু তাদের লজ্জা শরমের কোনো বালাই আছে বলে মনে হয়না। তাদের লজ্জা না হলেও আমাদের লজ্জা হয়। সিলেটি একটি আঞ্চলিক কথা আছে “আগলো বেটির লাজ নেই দেখলো বেটির লাজ“ অথাৎ যে মহিলা কাপড় তুলে দিনে দুপুরে বাজারের পাশে টয়লেট করছে তার কোনো লজ্জা নেই, অথচ যে দেখছে তার লজ্জার কোনো শেষ নেই। কি বিচিত্র এ দেশ। কি বিচিত্র দেশের নেতা নেত্রীরা। ত্রাণ চুরি করছে আওয়ামীলীগ আর ঐ তেুতল হুজুরের ভাগিনা তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাসান মাহমুদ বলেন এসব জাপা জাসদ বিএনপির কাজ। এই তথ্যমন্ত্রীকে ধরে ডিম থেরাপী দেওয়া যায়না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? ঐ তেতুল হুজুরের ভাগনাকে তথ্যমন্ত্রীর মত দায়িত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ে আপনি কেন বসিয়ে রেখেছেন আমরা সব জানি এবং সব বুঝি।
শেষ কথাঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লকডাউনের সময় সীমা ব্রিটেনে আরো তিন সপ্তাহ বেড়ে গেল। আপনি তো বাংলাদেশে ছুটি ঘোষনা করেছেন। ছুটি যদি হয় তাহলে আপনার পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অমানুষের মত অত্যাচার কেন করে? গত কাল একটি ভিডিও ফুটেজে দেখলাম একজন বৃদ্ধলোককে পুলিশ পেটাচ্ছে। এর আগে দেখেছিলাম এক মহিলা কর্মী বৃদ্ধলোকদেরকে কানে ধরে উঠবস করাচ্ছেন। কে একজন লিখেছিলেন আমার মেয়েকে আপনারা আর লজ্জা দিবেননা। তিনি বলেছিলেন আমরা সিনিয়ররা তাদেরকে শিখাতে পারিনি। এ সব কিছু আতলামী কথা বার্তা শুনলে মনে আগুন জ্বলে। আতলামী কথাবার্তারও সীমা থাকা দরকার। একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় কোনোভাবেই বরদাশত করা যায়না। এই করোনার সময়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করার কেউ নেই। উপরে আল্লাহ। নীচে তো আছে ত্রাণ চোর চাল চোর, আছে কিছু লোক দেখানো সমাজ সেবক। এক কেজি চাল দিচ্ছে একজন গরীব মানুষকে। ফটো তুলছে ১৫/২০ জন। তারপর ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়ে প্রমাণ করছে তার মত সমাজ সেবক আল্লার আসমান জমিনে কেউ নেই।
বিঃদ্রঃ বাংলাদেশের সাংবাদিক লেখক কবি সাহিত্যিক যারা রয়েছেন তাদেরকে শক্ত হাতে কলম ধরতে হবে, টেলিভিশন অনলাইন পত্রিকাগুলোতে রিপোর্ট করতে হবে। অসহায় করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে আপনাদেরকে দাড়াতেই হবে। আপনারা ছাড়া কেউ এসব অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করবেনা। নিজেকে গুটিয়ে রাখবেননা। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। করোনায় কাল মৃত্যু হলে আল্লার আরশের সামনে দাড়িয়ে অন্তত বলতে পারবেন আপনার উপর যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্ব সততার সহিত আপনি পালন করেছেন। আর যদি আওয়ামী দালাল সাংবাদিকদের মত দায়িত্ব পালন করেন তাহলে ঢাকা শহরে বেশ কিছু ফ্লাটের মালিক হবেন। সেই ফ্লাট নিয়ে আপনার রেখে যাওয়া সন্তানরা হয়তো এক সময় মারামারি করবে। আপনি কবরে শুয়েও শান্তি পাবেননা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
১৯ এপ্রিল ২০২০ ইংরেজী রোববার লন্ডন।
faisollondon@yahoo.co.uk