ডেস্ক রিপোর্ট: ইউনিভার্সিটি অব তেহরানের স্কুল অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগী অধ্যাপক হাদি মুরাদী কভিড-১৯ রোগীদের জন্য সহজলভ্য এক প্রকার ভেন্টিলেটর নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, এটি যেমন সহজে তৈরি করা যায়, তেমনি দামও কম। ইউনিভার্সিটি অব তেহরানের ওয়েবসাইটে মুরাদীর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তিনি ভেন্টিলেটরটির বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। একাধিক যান্ত্রিক পাম্পের মাধ্যমে এটি তৈরি। সেই পাম্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে রোগীর শ্বসনতন্ত্রে বাতাস প্রবেশ করানো যাবে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে পাম্পটি দিয়ে ম্যানুয়ালি প্রশ্বাস সচল রাখা যাবে। ছোট মোটর ব্যবহার করা হয়েছে গিয়ার চালানোর জন্য। লেজারের মাধ্যমে সেগুলো কাটা হয়েছে। সহজে ব্যবহারের জন্য টাচ ডিসপ্লে রাখা হয়েছে। মুরাদী তার ভেন্টিলেটর প্রযুক্তির এতটুকু শেয়ার করেছেন এখন পর্যন্ত। এটি পড়েই কোনো প্রকৌশলীর পক্ষে আরেকটি ভেন্টিলেটর তৈরি সম্ভব নয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, কয়েক দিনের ভেতর উৎপাদন শেষ হলে ওপেন সোর্স বা মুক্ত ভেন্টিলেটর হিসেবে এটি উন্মুক্ত করবেন। সেটি যদি করেন, তাহলেই কেবল অন্য দেশের প্রকৌশলীরা তার কৌশল অনুসরণ করে এটি তৈরি করতে পারবেন।
ওপেন সোর্স বলতে মুরাদী মূলত ‘মুক্ত সফটওয়্যার’ টার্মকে বুঝিয়েছেন। অনেকে বিনামূল্যের সফটওয়্যারকে মুক্ত সফটওয়্যার ভেবে থাকেন। ব্যাপারটি কিন্তু তেমন নয়। বিনামূল্যের সফটওয়্যার আপনি শুধু ব্যবহার করতে পারেন। এটিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না। উৎস কোড আপনার জানা থাকবে না। সফটওয়্যারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর আপনাকে নির্ভর করতে হবে। অর্থাৎ এটি আপনার কম্পিউটারে থাকবে ঠিকই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ থাকবে অন্যের হাতে। যেমন অভ্র। বিনামূল্যে যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু কোনো প্রকার পরিবর্তন করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, মুক্ত সফটওয়্যারও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু তার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। এটি ব্যবহার করার স্বাধীনতা, তার প্রোগ্রামিং সংকেত (কোড) দেখার স্বাধীনতা, বিতরণ করার স্বাধীনতা, নিজের মতো পরিবর্তন করে তা ব্যবহার ও আবার বিতরণ করার স্বাধীনতা সকলের থাকে। এগুলো একটি মুক্ত সোর্স লাইসেন্সের আওতায় থাকে। যেমন মজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজার। মুক্ত সফটওয়্যারের অনেকগুলো লাইসেন্স আছে। এসব লাইসেন্সের তালিকা পাওয়া যায় ওপেন সোর্স ডট অর্গ-এর ওয়েবসাইটে (www.opensource.org/licenses/ alphabetical)। এসব লাইসেন্সে নিবন্ধন করা সব সফটওয়্যারই মুক্ত বা মুক্ত ওপেন সোর্স সফটওয়্যার।
ঠিক একইভাবে মুরাদী যদি ওপেন সোর্সের আওতায় ভেন্টিলেটরটি উন্মোচন করেন, তাহলে সেখানে তৈরির কৌশলও বাতলে দেবেন।
তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে এর তৈরি শুরু হয়েছে ১২ এপ্রিল থেকে। অন্য দেশেও খুব দ্রুত এটি পাঠাতে চান।
মুরাদীর সঙ্গে আরও দুজন কাজ করেছেন ভেন্টিলেটরটি তৈরি করতে। তারা হলেন একই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এস কে সেতারেহদান এবং ইরান পলিমার অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ইনস্টিটিউটের মোর্তাজা বেহজাদনসাব।