বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে শঙ্কা প্রতিদিনই ক্রমেই বাড়ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশে যদি আমরা সাবধান না হই, তাহলে খুব দ্রুত করোনাভাইরাস একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই মুহূর্তে আমি একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, করোনার এই সময়ে চিকিৎসকদের মধ্যে যাঁরা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো ধরনের প্রোটেকশনের ব্যবস্থা শুরুর দিকে ভালোভাবে নিতে না পারায়, তাঁরা কিন্তু অনেক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তার কিছু কিছু প্রতিফলন আমরা দেখতে শুরু করেছি। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক মারাও গেছেন। সামনে আরও বড় ধরনের একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে, যদি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সুরক্ষার ব্যাপারটি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি।
আমি এমনও শুনেছি কোনো কোনো এলাকায় বাড়িওয়ালারা চিকিৎসক এবং নার্সদের অন্য কোথাও বাসা দেখতে বলছেন। এগুলো খুবই অমানবিক। আমাদের দেশে করোনাভাইরাস কিংবা কোভিড–১৯ ছড়িয়ে পড়ার আগে পৃথিবীর আরও অনেক দেশে ছড়ায়। চীনা, ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা আমরা দেখেছি। ইতালি আর স্পেনে করোনার ভয়াবহ অবস্থা দেখার পরই কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস। এসব দেখার পর আমাদের প্রস্তুতি আরও ভালো থাকা উচিত ছিল।
সরকারের পাশাপাশি আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক মহল এবং বাইরের দাতা সংস্থাগুলো আছে—যারা আমাদের ডোনেশন দিয়ে থাকে, তারা ভূমিকা পালন করছে। করোনা প্রতিরোধে প্রতিরক্ষামূলক অনেক কিছু পাঠাচ্ছে। পিপিইও দিচ্ছে। নানা ধরনের মাস্ক আসছে। দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত এসব প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী দেশব্যাপী পৌঁছাতেও তো সময় লেগে যায়।
করোনার কারণে আর্থিকভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাস একদিন চলে যাবে, অর্থনৈতিক একটা বড় ক্ষতির চিহ্ন এঁকে দিয়ে যাবে। এদিকে ২০-২৫ বছর ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছে, তারাও মারাত্মক ক্ষতিতে পড়েছে এরই মধ্যে।
ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাইরের জীবনযাত্রা বন্ধ রাখতে হবে। বাইরের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে স্বল্প আয় ও শ্রমজীবী মানুষের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষ যে চিন্তা ও দুঃখের মধ্যে পড়েছে, তাতে আমার দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আশা করতে পারি, আমরা যেন দ্রুত এই মহামারি থেকে মুক্ত হতে পারি। সবাই যেন সাধারণ জীবনে ফিরে গিয়ে, আবার তাঁদের অর্থনৈতিক চাকা ঘোরাতে পারেন।
লেখক: সংগীতশিল্পী ও মাইলস ব্যান্ডের সদস্য
সৌ্জন্যে: প্রখম আলো