– এ কে এম বেলায়েত হোসেন কাজল
চুরি মানে হলো, না বলে অন্যের দ্রব্য নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ ছলে, বলে বা কৌশলে মালিকের বা তত্ত্বাবধায়কের অজ্ঞাতে অথবা ব্যক্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে দ্রব্য গ্রহণ, ব্যবহার, বিক্রয়, বিলোপ, লোপাট বা কুক্ষিগত অথবা বেদখল করাকে চুরি বলে ।যেসব চোর চুরিকে জীবন ধারণের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে,তাদেরকে পেশাদার চোর বলা হয়।
সমাজের চোখে এবং আইনের চোখে চুরি করা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং চোর অপরাধী।
বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে,
‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা, যদি না পরে ধরা।’ বিখ্যাত তো মানুষ কতভাবেই হয়। কিন্তু চুরি করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন এমন কারো কথা কি শুনেছেন কখনো?
অবাক করা হলেও সত্যি যে চুরি করেও পৃথিবীর ইতিহাসে প্রচন্ড বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন কিছু মানুষ। যারা এই চুরিবিদ্যা নামক এই মহাবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে চুরিকে ‘শিল্পের’ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত দুস্থদের ত্রাণ চুরির ঘটনায় চলুন, আজ কয়েকজন চুরি শিল্পের জগৎবিখ্যাত শিল্পীদের চুরির ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করি।
নটবর লাল :-
তাজমহল পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি। মুঘল সম্রাট শাজাহান কতৃক নির্মিত তাজমহলের নাম কে না জানে। আর এই তাজমহল যদি কেহ প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রির পায়তারা করে তাহলে কেমন লাগে?
মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব, যিনি নটবর লাল নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন।
নটবর লাল এই অসাধ্য কাজটি সাধন করেছিলেন। যদিও তাজমহলকে তুলে নিয়ে অন্যের কাছে তিনি বিক্রি করেননি, তবে জাল জালিয়াতি করে তাজমহল বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, এই প্রতারক শুধু তাজমহল নয়, লাল কেল্লা, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন এবং পার্লামেন্ট হাউজ পর্যন্ত জালিয়াতি করে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন তিনি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই কিংবদন্তিসম চোর কিন্তু কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। সবসময় সে অধরা থেকে কৃতকর্ম গুলো চালিয়ে গিয়েছিলো।
ভিনন্সেঞ্জো স্কামজ্জি:-
ইতালির এই বিখ্যাত চোরের সঙ্গে রবিন হুডের বেশ স্বাদৃশ্য ছিল। নিজের শহরকে খুব ভালো বাসতেন ভিনন্সেঞ্জো। তার কাজের দ্বারা শহরের কারো যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেটা তিনি খুব ভালো করে নজরে রাখতেন । নিজের কাজ খুব সুন্দরভাবে করতেন তিনি। কখনো চুরি করতে গিয়ে কোথাও কোনো নোংরা করতেন না। বলা হয় কোনো চিনির বাটি চুরি করতে গেলেও চিনিটুকু মেঝেতে বা ঘরের কোথাও না ফেলে বাইরে ফেলতেন তিনি। যাতে করে ঘর যেন অপরিষ্কার না হয়।কেবল বড়লোকদের ঘরেই চুরি করতেন তিনি। গরিবদের ওপর চাপ পড়বে এমন কিছু চুরি করতেন না তিনি। এই যেমন ভেঙে যাওয়া কিছু অথবা মেরামতযোগ্য জিনিস সব সময়ই রেখে দিতেন ভিনন্সেঞ্জো। যাতে করে মেরামতকারীর টাকাটা মার না যায়। কোনো ধরনের খুন-খারাবি পছন্দ করতেন না তিনি। নিজের দেশের সম্পদ নিজের দেশের ভিতরেই রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। নিজের দেশের ছবি চুরি করলে সেটাও দেশের কারো কাছেই বেচতেন ।কিংবা যার থেকে চুরি করেছেন তাকেই টাকার বিনিময়ে ফেরত দিয়ে দিতেন।
ইতিহাসের পাতায় তিনি যে চুরির জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির’ অমর সৃষ্টি মোনালিসা’র চিত্রকর্ম তার অন্যতম।
প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভ মিউজিয়ামে এই অপ্রত্যাশিত চুরির ঘটনাটি সংঘটিত হয় , ভিনন্সেঞ্জো দিনের আলোতে মিউজিয়ামের কর্মচারীদের পোষাক পরে মিউজিয়ামের ভেতরে একটি আলমিরার ভেতর লুকিয়ে পড়ে। সারারাত সে সেখানে অপেক্ষা করে, সুযোগ বুঝে দেয়ালে ঝুলানো ফ্রেম-বন্দি মোনালিসাকে নামাল সে। ফ্রেমটি খুলে ফেলে, নিজের জামার ভেতরে লুকিয়ে মোনালিসা’র ছবি নিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল ল্যুভ থেকে। যেভাবেই হোক না কেন, প্রথম দিকে ব্যাপারটি কেউ আঁচ করতেই পারেনি যে মোনালিসা মিউজিয়ামে নেই।
মোনালিসা যে চুরি হয়েছে সেটা মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে ২৪ ঘণ্টা পরে।
মোনালিসা নামের ওই চিত্রকর্ম ল্যুভের যে দেয়ালে ঝোলানো ছিল, সেই খালি জায়গাটি দেখতে পরের দিন প্রচুর মানুষের ভিড় হয়েছিল।
ভিনন্সেঞ্জো স্কামজ্জির অজুহাত ছিল যে ইতালিতে চিত্রকর্মটির জন্মস্থানে ফিরিয়ে আনতেই সে মোনালিসা’র ছবিটি চুরি করে।
সনকা দ্যা গোল্ডেন হ্যান্ড:-
রাশিয়ার আর দশটা সাধারণ মেয়েদের মতই ছিলেন সনকা আর সবার কাছে। কিন্তু এই ভালো মানুষীর আড়ালেই একের পর এক চমৎকার সব চুরি করে বেড়াতেন তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সনকা দ্যা গোল্ডেন হ্যান্ড নামে পরিচিত এই নারী নানা রকম মূল্যবান পাথর চুরি করতেন। কখনো বানরের মাধ্যমে এবং কখনো লুকোনো পকেট অথবা জামার ভেতরে বয়ে বেড়াতেন সেগুলোকে। নিজের হাতের নখ সব সময়ই লম্বা রাখতেন সনকা। নখের নিচে তিনি বহন করতেন চুরি করা নানা রকম ছোট ছোট মূল্যবান পাথর।
তবে সনকার সবচেয়ে অভিনব একটি চুরি হচ্ছে গহনা চুরির ঘটনা ‘রিজেক্টেড প্রিন্সেস’। চুরিটি তিনি করেছিলেন একটি গহনার দোকান থেকে। দোকানে গিয়ে তিনি অনেক দামি দামি নানা রকম গহনা দেখেন, তারপর দোকানদারকে বলেন তার বাসায় সেগুলোকে নিয়ে আসতে। সেখানেই টাকা পরিশোধ করবেন তিনি। বাসায় তার স্বামী আছেন। যিনি পেশায় ডাক্তার। তিনিই পুরো টাকা শোধ করবেন। দোকান থেকে বেরিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান সনকা আর ডাক্তারকে বলেন তার স্বামী একটু পরেই কিছু গহনা নিয়ে আসবে। তিনি মারাত্মক অসুস্থ এবং যাকে দেখেন তার কাছেই গহনা কিনতে ও বেচতে চান। ডাক্তার যেন তাকে পাগলা গারদে ভরে দেন। স্বামীর চিকিৎসা বাবদ টাকাও পরিশোধ করেন সনকা ডাক্তারের কাছে। যথাসময়ে গহনা নিয়ে দোকানদার আসে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তাকে সনকা। দোকানদার গহনা দিয়ে টাকা চাইলে ডাক্তার মানসিক রোগী ভেবে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় তাকে। পুরো ব্যাপারটি সবার চোখের সামনে আসে এবং সত্যতা উন্মোচন হয় অনেক দিন পরে। তখন অবশ্য সনকা আর কারো হাতের নাগালে ছিল না।
ভীরাপ্পান :-
তাকে ঠিক চোর বলা যায় না বরং ডাকাত নামে তাকে মানায় ভালো। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বনাঞ্চলে প্রায় বিশ বছরের অধিক সময় দোর্দণ্ড দাপটে চুরি ডাকাতি করে বেড়িয়েছে এই ডাকু, বনাঞ্চলে বিস্তার করেছিল ত্রাসের রাজ্য। এই পুরোটা সময় ধরে হাজার হাজার হাতির দাঁত, বিরলপ্রজাতির পশুর চামড়া, চন্দন কাঠ চোরাচালানির সাথে জড়িত ছিল ভীরাপ্পান। ১৮৪ জন ফরেস্ট কর্মকর্তা কর্মচারী ও পুলিশ সদস্য তার হাতে প্রাণ হারিয়েছিল।
বিল মেসন :-
বর্তমান বিশ্বে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে রত্ন চুরির ঘটনা তেমন একটা ঘটে না। মাঝে মাঝে চলচ্চিত্রে দুঃসাহসিক রত্ন চুরির কিছু ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু জেনে আবাক হবেন যে, বাস্তবেও চলচ্চিত্রের মত দুঃসাহসিক চুরির কিছু নজির রয়েছে।
সিনেমার মতো দুঃসাহসিক চুরির জন্য আমেরিকার বিল মেসনের নাম উল্লেখযোগ্য। এই চোর নানান ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের রত্নালংকার চুরি করেন।
তার সবচেয়ে দুঃসাহসিক চুরি গুলোর মাঝে ‘এথলেট জনি উইস্মুলারের অলিম্পিক গোল্ড ম্যেডেল’ চুরির ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। অবশ্য বিল মেসন পরবর্তীতে জনি উইস্মুলাকে চুরিকৃত গোল্ড ম্যেডেলটি ডাক যোগে ফেরত দিয়েছিলেন।
আলবার্ট স্পাঞ্জিয়ারি :-
ফ্রান্সের ‘সোসাইটি ব্যাংকের ভল্ট খালি করে দেওয়ার জন্য আলবার্ট স্পাঞ্জিয়ারির নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। তৎকালীন সময়ে বিশ্বের নিরাপদ ব্যাংক গুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। মাটির নীচে টানেল কেটে তার নেতৃত্বে গ্যাং এর সদস্যরা ব্যাংকের ভল্টে প্রবেশ করে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক লুট করে ব্যাংকের ভল্ট খালি করে নিরাপদে বেরিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও এতবড় হাই প্রোফাইল ভল্ট চুরির জন্য তিনি ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন।
জেসি উডসন জেমস :-
আমেরিকার সিভিল ওয়ারের সময়কার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামীদের জেসি উডসন জেমস ছিলেন অন্যতম। তার ভাই ফ্রাঙ্ককে সাথে নিয়ে জেসি উডসন বড় বড় ব্যাংক ডাকাতি করতেন। শুধু ব্যাংক ডাকাতি নয় তখনকার সময়ে ট্রেন ডাকাতির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।
ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম জুনিয়র :-
জানা যায় ফ্রাঙ্ক উইলিয়ামের চুরির দুঃসাহসিক ঘটনা অবলম্বনে ‘ক্যেচ মি ইফ ইউ ক্যান’ নামে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল। ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম এখন পর্যন্ত দুনিয়ার সবচেয়ে সফল জালিয়াত হিসেবে পরিচিত। যিনি একেই সাথে একজন এয়ারলাইন পাইলট, একজন ডাক্তার,একজন উকিল এবং একজন জেলার হিসেবে নিখুঁত ভাবে নিজের পরিচয় নকল করেছিলেন। কথিত আছে তার কাজ এত নিখুঁত ছিল যে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাকে গ্রেফতার করার পর জেলে না পাঠিয়ে এফবিআই এর নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দান করে। এই নিয়োগ দেওয়ার পিছনের কারণ ছিল সে যেন তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াত এবং চোরদের ধরতে এফবিআই’কে সাহায্য করতে পারেন।
ক্রিয়াংক্রাই তেচামং:-
১৯৮৯ সৌদি রাজপ্রাসাদ থেকে চুরি গিয়েছিল সোনা-গহনা ও অমূল্য হীরার বিরাট সম্ভার।
সৌদি বাদশাহ ফাহদের পুত্র যুবরাজ ফয়সাল তার স্ত্রীকে নিয়ে প্রাসাদের বাহিরে বেড়াতে গেলে প্রাসাদ পরিষ্কার রাখার কাজে নিয়োজিত ছিলেন বিশ্বস্ত কর্মচারী থাইল্যান্ডের নাগরিক তেচামং। প্রাসাদের প্রতিটি জায়গা একেবারে স্পষ্টভাবে চিনতেন তেচামং। তাছাড়া যুবরাজ যে প্রায়ই তার সিন্দুকের তালা খোলা রেখেই চলে যেতেন , সে কথাও তিনি ভালই জানতেন। যুবরাজের গয়না-গাঁটি চুরির ফলে জেলে বন্দী জীবন কাটাতে হতে পারে- একথা জানার পরেও তিনি চুরির ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
একদিন সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এলে কোনো এক উচিলায় প্রাসাদে ঢুকে পড়েন তেচামং। অন্য সব কর্মচারীরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি ভিতরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তারপর সুযোগ বুঝে ঢুকে যান যুবরাজের শয়নকক্ষে। ঘর ঢুকে বেশ কিছু গয়না-গাঁটি নিজের শরীরের সাথে স্কচটেপ দিয় ভালোভাবে বেঁধে নেন। তেচামং যত স্বর্ণালংকার ও গহনা চুরি করেছিলেন তার ওজন ছিল প্রায় ৩০ কেজি, যার তখনকার অর্থ মূল্য ছিল দু’কেটি মার্কিন ডলার।
এই মহাচুরির খবর যখন জানাজানি হয় ততদিনে ক্রিয়াংক্রাই তেচামং নিজের দেশ থাইল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন। যাওয়ার আগে চুরি করা স্বর্ণালংকার থাইল্যান্ডে পাঠানোর জন্য একটি ভাড়া করা কার্গোতে স্থানান্তরিত করেন।
বিপুল স্বর্ণালঙ্কার সমেত কার্গো পাঠাতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়েন তিনি। কেননা থাই শুল্ক বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই বিরাট চালান ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছানোটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সমস্যারও একটা সমাধান বের করেন তেচামং। তিনি জানতেন, থাই শুল্ক কর্মকর্তারা বড় অঙ্কের ঘুষের টাকা ফেরাতে পারবে না। তাই কার্গোর ভেতরে একটি খামে বেশ কিছু নগদ টাকা ও একটি চিরকুট লিখে রেখে দেন। চিরকুটটিতে লেখা ছিল: এই কার্গোতে পর্নগ্রাফি বা যৌনতা সম্পৃক্ত বস্তু রয়েছে। তাই সার্চ না করলে ভালো হয়।তার পরিকল্পনা খুব নিপুণভাবে কাজে লেগে যায়। থাইল্যান্ডের শুল্ক দফতর নগদ অর্থ পেয়ে কার্গো চেক না করে ছেড়ে দেয়।
কার্ল জুগাসিয়ান :-
ইতিহাসখ্যাত চোরদের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া আরেকজন হলেন কার্ল জুগাসিয়ান। গাড়ি চুরির মাধ্যমে চুরির পেশায় নাম লেখালেও প্রায় দুই মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ বিভিন্ন সম্পদ ও অর্থ চুরি করে তিনি পৃথিবীর বিখ্যাত চোরদের তালিকায় স্থান করে নিতে সক্ষম হন। শুধু শুক্রবার রাতে চুরি করার কারণে তাকে ‘ফ্রাইডে নাইট রাবার’ নামে ডাকা হতো। চুরি করার সময় মুখে মুখোশ থাকত বলে, তার সঠিক পরিচয় সম্পর্কে কারো কোন ধারণা ছিলনা।
ডেরেক বেরটি স্মলস :-
মাত্র ১৫ বছর বয়সে অপরাধ জগতে পা রাখে ডেরেক বেরটি স্মলস। অত্যন্ত সফলতার সাথে একটি বৃটিশ ব্যাংক লুট করে প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নেন। এই চুরির পর তিনি প্যারিসে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে তিনি পুলিশের পক্ষ হয়ে অপরাধীদের ধরতে কাজ শুরু করেন।
ডোরিস পেইন :-
বিশ্বখ্যাত নারী চোরের কথা কম শোনা গেলেও ডেরিস পেইন নামটি উল্লেখযোগ্য। তার কৃতিত্ব অন্যান্য পুরুষ চোরদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
ডেরিস সবসময় বড় বড় রত্নালংকারের দোকান টার্গেট করতেন। তারপর ধনী ক্রেতা সেজে দোকানে ঢুকতেন। এনগেজমেন্টের দামী আংটি খুঁজতে খুঁজতে সবার অগোচরে চার পাঁচটা হাতব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলতো। প্রায় পাঁচ যুগের অধিক সময় নির্বিঘ্নে চুরি করে শেষপর্যন্ত ৮৩ বছর বয়সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মাত্র দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে ত্রাণ চুরির কালবৈশাখীর যে প্রলয়নৃত্য চলছে তা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট। উপরেল্লেখিত বিখ্যাত চোরদের কেউই সাধারণ জনগণের অর্থ সম্পদ চুরি করার মত জঘন্য অপরাধের সাথে কারো কোন সম্পৃক্ততা ছিল না।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু করে অধ্যাবধি যতগুলো সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল সব সময়ই গরিব দুঃস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী চুরি করার একটা প্রবনতা বাঙালির রক্তে মিশে আছে।
অন্যরা যেখানে বড় ব্যাংক ধন রত্ন মনি মুক্তা চুরি করে ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। বাঙালি তখন গরিব দুঃস্থ সহায় সম্বলহীন মানুষের মুখের অন্ন লুটপাট করে আত্মসাৎ করে নিজেদের নাম স্মরণীয় করে তুলছে।
অভিনব যতসব কায়দায় ত্রাণসামগ্রী চুরির কাহিনী দেখে অতীতের সকল ইতিহাস মলিন হয়ে যাচ্ছে।
নিজেদের গোপন কুটিরে, মাটির নিচে, পুকুরে বা খাটের তলায় ত্রাণসামগ্রী লুকিয়ে রাখার নতুন নতুন দৃশ্য দেখে সত্যিই স্বীকার করতে হচ্ছে,চুরি বিদ্যা একটি মহাবিদ্যা বটে। এর শৈল্পিক গুণাগুণ অবিস্মরণীয়। বিখ্যাত হওয়ার জন্য ভালো কাজের দরকার হয় না। চুরি করেও ইতিহাসে বিখ্যাত হওয়া যায়।
এ কে এম বেলায়েত হোসেন কাজল
ইতালি প্রবাসী