রাষ্ট্র হচ্ছে খেলার মাঠ। জনগণ এর দর্শক। মাঠে গেরুয়া গেঞ্জি পরে ও সবুজ গেঞ্জি পরে; খেলা কমিটির দুটি দল খেলছে। এই খেলাটা এলাকাবাসীর নিছক বিনোদনের জন্য নয়। এলাকায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাই খেলা কমিটি রোজার সময় ফুটবল ম্যাচ রেখেছে। গ্যালারিতে বসেই ইফতারে দেয়া হচ্ছে কুমড়োর বেগুনি।
সবুজ গেঞ্জি পরা একজন দাড়িওয়ালা খেলোয়াড় এসে গেরুয়া গেঞ্জির এক খেলোয়াড়কে ধাক্কা দিয়ে বলে, ঐ তোর কপালে টিপ কেন। ব্যাস। গ্যালারিতে শুরু হয় উভয় পক্ষের সমর্থকের হাতাহাতি। এটা হচ্ছে ডমিনো এফেক্ট। খেলা কমিটিই ঐ দুই খেলোয়াড়কে ধাক্কাধাক্কির টিপস দিয়েছে। রেসলিং-এও এমন হয়; ফুটবলেও হয়; গেমথিওরিতে তো হয় ই।
ফেসবুকে কদিন আগেই দেখা গেলো, এক হিন্দু শিক্ষকের স্ক্রিন শট ভাসছে, শিক্ষকতা ছেড়ে দেবো বলে; সেটাই কদিন পর হৃদয় মন্ডলের জীবনে সত্যি হলো; কিন্তু কীভাবে!
ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট আছে কেন! সরকার টিসিবির ট্রাকের পিছের ম্যারাথন নিয়ে গ্যালারির আলাপ থামাতে না পারলে, খেলা কমিটি সবুজ জার্সিকে দিয়ে ল্যাং মারিয়ে গেরুয়া জার্সির খেলোয়াড়কে ফেলে দেবেই।
গেম থিওরির নিয়ম হলো ৯০ মিনিট উভয় দলের ২২ জন খেলোয়াড়কেই সক্রিয় থাকতে হবে। সক্রিয় থাকতে হবে উভয় পক্ষের গ্যালারি সমর্থকদেরও।
সবুজ জার্সি দলের বিজয় প্রার্থনায় এর সমর্থকেরা গ্যালারিতে নামাজ পড়ার আয়োজন করে। গেরুয়া দলের সমর্থকেরা দুয়ো দেয়, মেরাজে যাইবি নাকি! খেলা না দেইখা মাদ্রাসায় গিয়া কাফের মারা খেল গিয়া।
হঠাত খবর আসে এক হিন্দু শিক্ষিকা ছাত্রীদের হিজাব পরতে নিষেধ করেছেন। এর পটভূমি কিন্তু তৈরি করা ছিলো, এর আগে টিপ বিতর্কে উইমেন চ্যাপটার সম্পাদক সুপ্রীতি ধর বলছেন, টিপ বাঙালি সংস্কৃতি, কিন্তু হিজাব পুরুষতন্ত্রের চাপিয়ে দেয়া কালচার। এর আগে ভারতে “মুসকানকাণ্ডে” হিজাব সম্পর্কে গেরুয়াদের ঘৃণা দর্শক দেখেছে।
ফলে সবুজ জার্সির টিপ বিরোধীরা একজন হিন্দু শিক্ষিকাকে ফাঁসিয়ে “আবার নাসির নগর” তৈরি করলে; বৈষম্যে সাঁওতাল-হিন্দু-মুসলমান তরুণ-কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু কুমড়ো মিডিয়ার হেডলাইন হতে পারবে না। নাসির নগর কিন্তু এই খেলা কমিটির লোকেদেরই তৈরি ছিলো।
গেরুয়া দর্শকের জীবন বিপন্ন করে এরকম গেম থিওরিতে খেলা কমিটির কী লাভ! এতে সবুজ অনুভূতি খেলা কমিটির পক্ষে থাকে। আবার পাশের গ্রামের গেরুয়া সর্দার দেখাতে পারেন; দেখো ও গ্রামে সবুজ জার্সি; গেরুয়া জার্সিকে কষ্ট দিচ্ছে; এসো এই গ্রামে সবুজ জার্সিদের কষ্ট দিয়ে গেরুয়াঞ্চল প্রতিষ্ঠিত করি।
এতে সুপ্রীতি ধর বা কল্যাণী রমানাথের কী লাভ! উনারা ডমিনো এফেক্টের ধারা ভাষ্যকার। এ গ্রামেরই মেয়ে কিন্তু পশ্চিম ঘুরে গরীবের ইউভাল নোয়াহ হারিরি হয়েছেন। তাদেরকে গেরুয়ার সমর্থক ভেবে ভুল করতে করতেই দেখবেন, তারা সাক্ষাত অরুন্ধতী রায় হয়ে গেরুয়াকে এমন ধুয়ে দিলেন; যে সবুজ জার্সিওয়ালাদের কারো সাধ্য নেই এমন গেরুয়া ধোলাই।
স্কুলের সবুজ জার্সি সমর্থক বাচ্চারা অমন সাপ হয়ে গেরুয়া বিজ্ঞান শিক্ষককে দংশিলো কেন! এর কারণ ইন্টারনেট আসার পর প্যারাডক্সিক্যাল রহিম ছাগল চরে সব জায়গায়। এরা সৌদি আরব-তুরস্ক এমনকী পাকিস্তানের চেয়ে উগ্র ও চতুর সবুজ জার্সি। আর প্যারাডক্সিক্যাল রাম ছাগলও কিন্তু ভারতের চেয়ে বেশি চতুর ও উগ্র এ গ্রামে।
নব্বুই মিনিটের এই খেলায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্স, সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি, ইসলাম গেলো গেলো, বাঙ্গালিত্ব গেলো গেলোর মাঝ থেকে; গতকাল সবুজ জার্সির হিজাব পরা এক প্যারাডক্সিক্যাল লায়লা, এই লেখককে “মুনাফেক” বলে ইনবক্সে গালি দিয়ে গেছে। প্যারাডক্সিক্যাল গণেশ “ম্লেচ্ছ” বলে গালি না দিয়ে, এই লেখকের সিরিয়াস পোস্টে হাহা আর হাসির পোস্টে এঙ্গার ইমো দিয়ে গেছে। এইসব সবুজ ও গেরুয়া চাটনি দিয়ে কুমড়োর বেগুনী খেতে খেতে ভাবছি, গেম থিওরি আর ডমিনো এফেক্টের এমন শক্তি, যা গোল বিহীন ম্যাচেও উত্তেজনা থাকে। সেই উত্তেজনা বৈষম্যে ম্লান অনাহারী মানুষের সেহেরি ও ইফতার না করার খাবার না থাকলে; খেলা কমিটির ছাঁইয়ারা গ্যালারিতে এসে বলে, দ্রব্যমূল্য নিয়া ভাববেন না, চাল ছাড়াও চাইনিজরা ভাত রান্না করে; আর ভাত নাইতো কী হইছে, হালিম দিয়া ইফতার করেন; এইটা মধ্যম আয়ের স্টেডিয়াম।