বাংলাদেশে রাজনীতির নির্মমতা হচ্ছে কেউই নিজ দলে গণতন্ত্র চর্চা করবে না কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবে; অন্যের সমালোচনা উপভোগ করবে কিন্তু কেউ তার সমালোচনা করলে সহ্য করবে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি বড় বড় দলগুলোর এবং এদের নেতা নেত্রীদের বৈশিষ্টটাই এমন। যারা এটি অস্বীকার করেন হয় তারা জ্ঞানপাপী না হয় প্রবঞ্চক।
রাজনীতিতে পপুলারিটি মানেই যোগ্যতা নয়; পপুলারিটি থাকলেই যোগ্যতা অর্জন নাও হতে পারে, কিন্তু যোগ্যতা থাকলে তা ব্যবহার করে পপুলারিটি অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ডেভিল জিনিয়াসদেরও রাষ্ট্রে ব্যবহৃত হতে দেখি; এতে জনতার উপকার না হলেও ব্যবহারকারীরা কিছুদিনের জন্য সুবিধা লাভ করতে পারে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যদি জনসমর্থন নিয়েও সেটি মোকাবেলার যোগ্যতা না রাখেন, তাতে অন্তত কারোরই কোন লাভ হয় না, কিন্তু জনতার দুর্ভোগ বাড়াতে ডেভিল জিনিয়াসদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়। এজন্য ডেভিল জিনিয়াসদের চেয়ে অযোগ্য নেতৃত্বদের দোষ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মতো বুদ্ধিজীবী শ্রেণী থাকতে হয়। আফসোস এমন কোন শ্রেণী আর অবশিষ্ট নেই।
বিগত লেখায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে খোলামেলা লেখার কারণে আমার সাথে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা এটা বোঝাতে চেয়েছেন সশস্ত্র বাহিনী দুর্নীতিবাজদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, তারা আদৌ কি চীন, নাকি ভারত নাকি আমেরিকা মুখী তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে না পারছে না। তবে রাষ্ট্রের মৌলিক সমস্যাগুলোর বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উদাসীনতায় জাতি যে ব্যথিত সেটি তারা উল্লেখ করেছেন; কিন্তু রাজনৈতিক সমীকরণের বেলায় কেউই তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারেন নাই। তারা চাচ্ছেন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্রের নয়; কারণ কেবলমাত্র ভোটই হচ্ছে তাদের কাছে গণতন্ত্র; মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন নয়।
সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রে এখন ঘুষ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে, অর্থনৈতিক লুটপাট নিয়ে যদি কেউ দ্বিমত করেন তবে তাকে আমি মিথ্যাবাদী বলবো। নিরাপত্তা বাহিনী যাকে আইনশৃখলা বাহিনী বলা হয় তাদের কাছে কত শতাংশ মানুষ নিরাপদ সেটি কেউ প্রকাশ্যে বলতে সাহস না পেলেও আপনি আমি সবাই সত্যটা জানি। সশস্ত্র বাহিনীও জানে। বিচার বিভাগে কি হচ্ছে, কি চলছে সেটি বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
সামান্য মশা নিধনের যোগ্যতা যে রাজনৈতিক নেতাদের নেই; যারা ট্রাফিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না সেই সকল নেতাদের দ্বারা দেশ পরিচালনা যেমন লজ্জার; ঠিক এর বিপরীতে এগুলো দূরীকরণে বিরোধীদের পরিকল্পনাহীনতাও বেদনার। বেকারত্বের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার কোন জায়গা নেই। মানুষ টেলিফোনে কথা বলতেও ভয় পায়। ইমেইলে রাষ্ট্রের কারো সমালোচনা করার সুযোগ নাই। সংবাদ মিডিয়ার লোকজন ইজ্জতই শুধু নয়, জীবন হারানোর ভয়ে দালালীকে সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে ধরে নিয়েছে।
প্রধান বিরোধীদল ও তাদের নেতারা এই সকল ভয়ে সিটকে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে একের পর এক মহড়া দেয়া শুরু করেছেন। বড়দলগুলোর অবস্থানের কারণে ছোটদলগুলোর কিছু করার কোন পথই খোলা থাকে না। আর ভবিষ্যতে লুটপাটের আশায় বুক বেঁধে থাকা নেতারা তথাকথিত সংবিধান এর বাইরের কোন শক্তির কোন উদ্যোগকে স্বাগতম জানাতেও রাজি নয়। তাই কার ঠেকা পড়েছে জঙ্গলের মোষ তাড়ানোর জন্য? যদিও নিরাপদ দূরত্বে প্রবাসে থেকে মাঝে মাঝে কেউ কেউ মেজর জিয়া বা কর্নেল গাদ্দাফি সেজে ক্লাউনের মতো সুড়সুড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের রাশিয়া ও চীন পন্থী অবস্থানের বিপরীতে কোন ব্যবস্থা নেবে কিনা? নিলে তা কবে নাগাদ? আর নিলে তাদের লাভটা কি বা কত? সেটি কি নির্ধারণ করা গেছে? তাদের সাথে দরদাম নিয়ে যোগাযোগের মতো যোগ্যতা সম্পন্ন কেউ কি আছে কোথাও? ভারত কি তার নিজের লাভ বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেকে তার পাল্লা ভারী হতে দেবে? আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে চীনের অবস্থানকে কি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যাবে? যারা একরাতের মধ্যে টাকা বিলিয়ে নির্বাচনে হ্যাট্রিক করিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তাদের গোনার বাইরে রেখে যদি কোন শক্তি প্লট সাজায়, সেটি কতটুকু সফল হতে পারে?
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় ব্যবসা এখনো হচ্ছে অস্ত্র উৎপাদন ও এর ক্রয় বিক্রয়। পুরোনো অস্ত্র ধ্বংস করতে আর নতুন অস্ত্র সরাসরি পরীক্ষা করে তার কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করার জন্য বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন যুদ্ধ ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়। এটি বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের মতো দেশের নেতা নেত্রীদের নাই। হবেও না। তবে অদূর ভবিষ্যতে তেমন একটি ক্ষেত্র আমাদের এই অঞ্চলে না দেখতে চাইলে বর্তমান সরকার ও বড় বিরোধীদের উচিত তেমন ভাবেই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া।
তবে, নির্দ্বিধায় বলা যায়, যদি আমাদের সমস্যা আমাদের জাতির শ্রেষ্ট সন্তানেরা অনুধাবন করতে পারে, যদি তাদের মধ্যে সামান্যতম দেশপ্রেম এবং নিজের রক্তের মর্যাদাবোধ থাকে তবে অর্গ্যানিকভাবে এ জাতির বর্তমান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব। না হলে অপেক্ষায় থাকতে হবে কোন দেশ কোন প্রেসক্রিপশনে কিভাবে আমাদের উদ্ধার করতে আসে দেখার জন্য। (চলবে)
– শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রেসিডেন্ট, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ