” চিকিৎসকদের মৃত্যুর পথ প্রশস্ত করে আমাদের কী লাভ! শত্রুও তো প্রতিপক্ষের ডাক্তারকে বাচিয়ে রাখে। আমাদের তো প্রথমেই দাবী ওঠা দরকার ছিলো,ডাক্তারদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ শুরুতেই আমাদের সম্মানিত চিকিৎসক সমাজ দাবী তুলছিলো,চিকিৎসার প্রয়োজনেই স্বাস্থকর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। তারা কখনো বলেনি আমরা চিকিৎসা করবো না। তারা বলেছিলো কোভিড ১৯ আর দশটা রোগের মত নয়। তার পরও তাদের উপর নির্দেশ এলো সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। যার বলী হয়ে গেলেন ডাঃ মঈন উদ্দিন। করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত রোগীর কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া ডাক্তারকে পাঠানো মানেই তো সেই ডাক্তারকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। এটা কে না জানে? কিন্তু আমরা তা জেনেও যেন দেখলাম না। আবারও বলছি এই মৃত্যুতে আমাদের কী লাভ?
চিকিৎসক সমাজ যখন তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সরব হয়ে উঠলেন,আমরাও রাতারাতি তাদের প্রতিপক্ষ বনে গেলাম। যেন আমাদের সিন্দুক ভেঙ্গে তারা অর্থকড়ি কেড়ে নেওয়ার জন্য ধেয়ে আসছে। অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করা যায় অন্তরালের একটা শক্তি চিকিৎসক সমাজের সঙ্গে আমাদের একটা বিরোধ তৈরি করে রেখেছে। কসাইয়ের হাতের ছুরি আর ডাক্তারের হাতের ছুরি কি এক? মানুষ নষ্ট হওয়ার কথা যদি আমরা বলি,তবে জনবান্ধব মানুষ কোন গোত্রে আছে? শিক্ষক,বু্দ্ধিজীবী,রাজনৈতিক নেতা,কথিত গবেষক সবখানেই তো নষ্ট মানুষের খবরদারি। আমরা সাধারণ মানুষ সবখানে গিয়েই তো মুখ থুবড়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের সমস্ত আক্রোশ তবে শুধু ডাক্তারদের উপরে কেন? একমাত্র চিকিৎসক সমাজের সঙ্গেই সমাজের আপামর জনসাধারণ ওঠাবসা করার সুযোগ পায়। এই চক্রান্ত কি সেই কারণে? সাহিত্যে পাওয়া যায়,অতিতেও গরিব মানুষের সঙ্গে ডাক্তারদের সুসম্পর্ক ছিলো। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার দায় তো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর। তার দায় একা চিকিৎসক সমাজ কেন বহন করবে? লকডাউনের মধ্যে হাজার হাজার বুভুক্ষু মানুষ রাস্তায়,ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চালের এই যে হরিলুট হচ্ছে,গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রাম থেকে টেনে এনে এই যে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুললো রুবানা হক বাহিনী-এর কী হবে? এখন আমাদের সহায়ক বলতে ছিলো বা আছে চিকিৎসক সমাজ। সেখানেও পরিকল্পিতভাবে ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুখোমুখি। এই ফাঁদ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এবং এ তো সহজ হিসাব,নির্ধারিত পোশাক ছাড়া ডুবুরিকে সমুদ্রে নামানোর মানেই তাদের হত্যার ফাঁদে ফেলে দেওয়া। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে তবে তা নয় কেন? আমরা একটা গোষ্ঠীকে পছন্দ করিনা মানে এই নয় তাদের হত্যাদৃশ্যও আমাদের আহ্লাদিত করবে। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের হবেই। তা না হলে আমাদের অবস্থা হবে নিজের পায়ে নিজে কুঠারাঘাত করার মতোই।”
– তাহেরা বেগম জলি, সাবেক শিক্ষিকা, রাজনৈতিক কর্মী
ফেইসবুক পোস্ট ১৫ এপ্রিল ২০২০