রিয়া চক্রবর্তী। ছোট শহর থেকে উঠে আসা, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার-কন্যা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি একজন পেশাদার অভিনেত্রী। বর্তমানে তাঁর ‘বিশেষ’ বন্ধু, বলিউডের জনৈক তরুণ ও সুদর্শন অভিনেতার ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত।
রিয়া সত্যিই ‘দোষী’ কি না, একমাত্র ‘প্রকৃত’ ও ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। কিন্তু শুধুমাত্র অভিযোগের অজুহাতে যে ভাবে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকপক্ষ, রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে, মেয়েটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণে নেমে পড়েছে, সেক্ষেত্রে তদন্তের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করে, তদন্তপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা বিষয়ে যে কোনও সচেতন নাগরিকের মনেই প্রশ্ন ওঠা, সন্দেহ জাগা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
কেন্দ্রীয় শাসক-অনুগৃহীত জাতীয় টিভি চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে সুপরিকল্পিত ভাবে মেয়েটির প্রকাশ্য চরিত্রহননের মাধ্যমে যে অশালীন ও হিংস্র আক্রমণের সূচনা হয়েছিল, পরবর্তীতে আপাত নিরপেক্ষতা সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দিয়ে যাবতীয় সাংবিধানিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিহার পুলিশ থেকে শুরু করে সিবিআই, ইডি কিংবা এনসিবি, এমনকী সর্বোচ্চ আদালতকেও ‘ব্যবহার’ করে রিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে।
রিয়ার ভাইকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মাদক চক্রের সঙ্গে সংযোগ রাখার অভিযোগে। ক্ষোভ জানিয়ে রিয়ার বাবা বলেছিলেন, “আমার ছেলেকে গ্রেফতার করার জন্য ভারতকে অভিনন্দন। আমি নিশ্চিত, এর পরেই আমার মেয়ের পালা…” গতকাল অভিনেত্রীর আইনজীবী বলেন, “রিয়া চক্রবর্তী গ্রেফতারির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন… যেন তেন প্রকারে কাউকে অপরাধী করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যদি কাউকে ভালবাসা অপরাধ হয়ে থাকে, তার মাসুল উনি দেবেন।”
ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মোকাবিলায় রিয়া ও তাঁর পরিবার যখন নিঃসঙ্গভাবে একা একাই লড়ে যাচ্ছেন, দেশের রাজনৈতিক-নাগরিক সমাজ প্রায় নির্বাক দর্শকের ভূমিকায়। এবং অনেকেই, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মহিলারাও, আদ্যন্ত নারীবিদ্বেষী পিতৃপুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্রের-শাসকের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন অবশ্যই একটি উপলক্ষ, মৃত অভিনেতা বিহারের ভূমিপুত্র ছিলেন, শুধুমাত্র এই কারণেই। পাশাপাশি মহারাষ্ট্র সরকার ‘দখল’ করাও আরও একটি উদ্দেশ্য। এখন অবশ্য জানা যাচ্ছে, জেএনইউ-সহ বিভিন্ন ঘটনায় রিয়া চক্রবর্তীর কেন্দ্রীয় শাসক-বিরোধী প্রকাশ্য অবস্থান-ও তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের এই হিংস্র আক্রমণের ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।
ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্র যে কতটা ভয়ঙ্কর ও নির্মম হয়ে উঠতে পারে, রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার অপরিসীম মানসিক নির্যাতন সহ্য করে প্রতিদিন তার সাক্ষ্য দিয়ে চলেছেন।
অসহায় ক্ষোভ ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে,
রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের জন্য আমার আন্তরিক সহবেদনা।
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঘেন্না।
– কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০