কানাডার উইনিপেগে ইতিহাস রচিত হতে চলেছে। ম্যানিটোবা প্রদেশেররাজধানী উইনিপেগে উত্তর আমেরিকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ শহিদ মিনারটির নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করা যায় ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের একুশে ভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান নবনির্মিত শহিদ মিনার চত্বরে আয়োজন করার সাময়িক প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
উইনিপেগের কার্কব্রিজ পার্ক একটি বর্ধিষ্ণু কমিউনিটি পার্ক। ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনতিদূরে একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার মধ্যে পার্কটি অবস্থিত। এই পার্কের একটি ছোট ডাক পণ্ড [বালিহাসদের জন্য পুকুর] লাগোয়া স্থানকে চত্ত্বরটি নির্মাণের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।
উইনিপেগের বাংলাদেশিদের কয়েক বছরে আন্তরিক নিরলস প্রচেষ্টার ফসল এই শহিদ মিনারটি। ম্যানিটোবার প্রাদেশিক সরকার, উইনিপেগের নগর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির সিংহভাগ ব্যয় বহন করছে। রয়েছে বাংলাদেশিদের অর্থ সাহায্যও। উদ্যোক্তা সংগঠন ম্যানিটোবা বাংলাদেশভবন কর্পোরেশন গত কয়েক বছরে একাধিক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উইনিপেগের বাংলাদেশিদের মধ্য হতে বাজেটের একটি অংশের সংস্থান করে। চত্বরটির নির্মাণ ব্যয় বাংলাদেশি মুদ্রার অংকে ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
মূল কাঠামোগুলো শীতসহিষ্ণু ও পরিবাশবান্ধব রাখার জন্যগ্যাল্ভানাইজড স্টিলে মূল মিনারগুলো নির্মিত হবে। বেদিও চারপাশেরএলাকা্য় থাকবে কংক্রিট ও পাথরের নান্দনিক মিশ্রণ। সবুজ শীতসহিষ্ণু গুল্ম আচ্ছাদিত থাকবে চত্বর সীমানা। কানাডার আদিবাসী ভাষা-চিহ্নের স্মারক প্রস্তরের গাথুনিও থাকবে মূল বেদিতে।
উইনিপেগ শহরটি নানা কারণে বিশেষত্বপূর্ণ। শহরটি কানাডার তিনটিপ্রেইরি প্রদেশের মধ্যে সবচাইতে বড় সমতলভূমি। তার চাইতেও গুরুত্বপুর্ণ বিষয় এই যে শহরটি উত্তর আমেরিকার ‘জিরো পয়েন্ট’। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে একটি বৃত্ত আঁকলে কেন্দ্রবিন্দুটিইউইনিপেগ। শহরটির আরো বিশেষত্ব এই যে পৃথিবীর একমাত্রমানবাধিকার যাদুঘরটিও উইনিপেগেই। যাদুঘরটির কারণে ম্যানিটবার মানবাধিকার কর্মীগণ উইনিপেগকে ‘জেনেভা অব হিউম্যান রাইটস’ বা ‘মানবাধিকারের জেনেভা’ নামেও উল্লেখ করতে শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চত্বরটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবার পাশাপাশি এলাকাটিকে একটি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রে পরিণত করবে বলে আয়োজকদের বিশ্বাস।
– হেলাল মহিউদ্দীন, অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উইনিপেগের স্থায়ী বাসিন্দা