নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটে পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যার সঙ্গে জড়িত এসআই আকবর হোসেন ভুঞাসহ সকল আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন রায়হান আহমদের (৩৪) মা সালমা বেগম।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১ টা থেকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে অনশনে বসেন তিনি। এসময় আশপাশের বাসিন্দারাও তাদের সাথে সংহতি জানয়ে অনশনে অংশ নেন। অনশনকারীদের হাতে রয়েছে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ফেস্টুন। এছাড়া মাথায় সাদা কাপড় পরে অনশনে অংশ নিয়েছেন রায়হানের পরিবারের সদস্যরা। অনশনস্থলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন প্রদর্শন করা হচ্ছে।
রায়হানের মা বলেন, “হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও মূল অভিযুক্ত আকবরকে এখনও গ্রেফতার হয়নি। সে কোথায় আছে-তাও এখনও স্পষ্ট নয়। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততায় বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে আকবরসহ ৭ জনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হলেও তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। এদের মধ্যে কেবল কনস্টেবল টিটু ও হারুনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।” তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) রেঞ্জ রিভার্জে থাকা আসামিসহ এস আই আকবরকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তাদের অনশন চলবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত গত ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে নগরীর নেহারিপাড়া মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশিদকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ মামলায় ২০ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও ২৪ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনমূখড় হয়ে পরে সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই সমালোচনার মুখে বুধবার (২২ অক্টোবর) মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা। আর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক রয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন