ফেইক মদিনায় ‘জেনানা ও নিকাহনামা’ নিয়ে ঘুরতে হয়; এটা শোকরানা মেহেফিলের ‘মেহেরাম নিয়া ঘুরিবেন ফতোয়া’র হেফাজতযন্ত্র জানে না; এ কী করে হয়! ভ্যড়ভেড়ে এই গ্রামের পুলিশযন্ত্র তো সমুদ্রসৈকতেও নিকাহনামা দেখতে চেয়েছিলো এক দম্পতির। এইখানে ম্যাজিস্ট্রেটযন্ত্র ও হেলমেট পরা সহমতযন্ত্র পার্কে গিয়ে প্রেমিক প্রেমিকাকে গ্রেফতার করে। কান ধরে উঠবস করায় বিজন গ্রামের নিয়মে।
রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা নয়; রাজনীতিকে গুম-চাপাতি-ন্যুনতম নারী বিষয়ক স্ক্যান্ডাল দিয়ে মোকাবেলা করাটাই কলতলার সহমতযন্ত্রের ‘ফইন্নির পুতে’র রাজনীতি। উন্নয়নের পাপিয়াযন্ত্রের দালাল ও খদ্দেররাও আজ শুদ্ধতার পরাকাষ্ঠা হয়ে হেফাজতযন্ত্রের ঘরে শেকল তুলে দিয়ে শারিয়ার হিজাবিযন্ত্রের সঙ্গে হাতেনাতে ধরার আনন্দে সরাজ্ঞান করে কুলুকুলু। ভিলেজ পলিটিক্সে “অমুক নারীসহ আটক” হচ্ছে বহুব্যবহারে জীর্ণ পুসিক্যাট গোয়েন্দাগিরি ও তপশিলি সাংবাদিকতার লোক-ধ্রুপদী মশলা।
এটা পাপিয়াযন্ত্রকেই হিজাব পরিয়ে পাঠিয়ে ফ্রেইম করা গরলগল্প হবার সম্ভাবনা প্রবল। স্ট্যালিনের ফ্যাসিজমের কালে ‘রেড স্প্যারো’ পাঠিয়ে ফাঁসানো হতো যাকে প্রয়োজন তাকে। এটা গ্রামীণ আদলে পুনচিত্রায়ন করেছে বাংলালিক্সযন্ত্র ও খেলা হবেযন্ত্রের অংকশায়িনী ‘কইয়া দিমু’ মিডিয়াযন্ত্র। ‘যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র’ বলে নিয়ত চেঁচানো উন্নয়নের রাজভোঁদড়েরা এই ক্লিশে গ্রামীণ ষড়যন্ত্রটুকুই জীবনে শিখেছে।
এইসব তরলগল্পে পান-সুপারি চিবুতে চিবুতে প্রাচীনকালে বিনোদনহীন জীবনে বিনোদনের তুফান তুলতো ফোকলা দাঁতের গ্রামদাদীরা। এখন শহরের পারসোনা দাদিরাও একই বৈচিত্র্যহীন জীবনপ্রবাহে ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র গপ্পে বিনোদিত; অনেকদিন পর একটা পিটযা অর্ডার দিয়ে আরবান ফোকলোর বিচিং করার ইভেন্ট পেয়ে।
মেট্রোপলিটনে বেশ আধুনিক সেজে বসে থাকা ক্ষ্যাতগুলিও; এমনকী জেন্টলপার্ক চাড্ডিযন্ত্রগুলিও হেফাজতযন্ত্রকে নারী বিষয়ক স্ক্যান্ডালে ফাঁসিয়ে দাঁত কেলিয়ে আনন্দে কুটিপাটি হয়। শতবছর ধরে গ্রামে বেড়ার ফুচকি দিয়ে অন্যের প্রাইভেসি দেখার নাতি-পুতিরা যতই জিনস-টিশার্ট পরুক; ভেতরে ঘিন ঘিন করতে থাকে; গান্ধা কইরা দেয়ার জীনগত ভিলেজ পলিটিক্স আর অবদমিত লিবিডোর থকথকে ঘেও বিকৃতি।
শেষ পর্যন্ত এটা ঘুঘুডাকা ভ্যাড়ভেড়ে গ্রাম; এইখানে অনাথের রক্তমূল্য পরিশোধিত হয় উটের মূল্যে; সংখ্যালঘু নারীকে গ্রামদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাকে নিয়ে ‘তনু-তনু’ খেলে ‘খেলা হবে’র লাইসেন্স পাওয়া ইউনিফর্ম।
এখানে মহামারীর দ্বিতীয় বছরেও আইসিইউ-এর অভাবে হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়া লাশ; পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে অক্সিজেন না পেয়ে স্বদেশমাতার মৃতদেহের পাশে নয়নজলে ভাসা সন্তানের আর্তনাদ; সব হারিয়ে যায়; যৌবনজ্বালার সৈনিকদের রগরগে নীল গল্পের আলেয়ায়। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মুখরোচক যৌন-আখ্যানের সস্তা গোয়েন্দাকাহিনীতে। ঐ যে লিবেরেল ও সেকুলারের রবীন্দ্র দাড়ি কিংবা রাবীন্দ্রিক সাজের আঁচলের নীচেই হেফাজত হয় ফেইক সবুজ মদিনা আর ফেইক গেরুয়া গুজরাট।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া