বিশেষ প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ: টেকসই বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন দাবীতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে ঘন্টাব্যাপী উক্ত মানববন্ধন শেষে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম। সংহতি প্রকাশ ও বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, মাধব চন্দ্র দত্ত, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, আনোয়ার জাহিদ তপন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলা কমান্ডার মোঃ হাসানুর ইসলাম, সিপিবি নেতা কমরেড আবুল হোসেন, জাসদের পাপিয়া আহমেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আমফান আঘাত হানে। ঝড়ে ব্যাপক জীবনহানীর ঘটনা এড়ানো গেলেও সহায়-সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ভাঙন এলাকার হাজার হাজার মানুষের সহায় সম্পদ এখনো পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তাদের দিন অতিবাহিত করছে। এমন দুর্বিসহ পরিস্থিতির মধ্যে গত ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এর নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকে সাতক্ষীরা শহর ও সংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমফানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি এই প্রকল্পের এলাকায় নয়। বাঁধ ভেঙে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার আওতাধীন শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, আটুলিয়া, শ্রীউলা, প্রতাপনগর, খাজরাসহ সংলগ্ন এলাকা। ফলে বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্পষ্ট করা না হলে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত সহানুভূতি থেকে তারা বন্চিত করা হবে। বক্তারা আরো বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৩ জুলাই সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আসেন। তিনি দুর্গত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। তিনি বাঁধ কেটে, পাইপ ঢুকিয়ে এলাকার লোনা পানি তোলা বন্ধ করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বক্তারা সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ২১ দফার বাস্তবায়নসহ জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবী জানান। বক্তারা এ সময়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মান, বেড়িবাঁধ ও ঘেরের বাঁধের মধ্যবর্তি স্থানে বৃক্ষরোপন করা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরী তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করণ ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সবধরণের দুর্নীতি বন্ধসহ উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের দাবী জানান। মানববন্ধন থেকে আগামী ১৫ জুন বেলা ১১টায় মানববন্ধনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসকের নিকট বিভিন্ন দাবী-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বদিউজ্জামান স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।